শিরোনাম
‌'উগ্রবাদী ধর্মব্যবসায়ীদের চিরস্থায়ী বিনাশ চাই'
প্রকাশ : ২৬ এপ্রিল ২০২১, ০৪:১১
‌'উগ্রবাদী ধর্মব্যবসায়ীদের চিরস্থায়ী বিনাশ চাই'
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। কওমী মাদ্রাসাগুলোতে ছাত্রশিক্ষকদের জন্য রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছে কওমী মাদ্রসা শিক্ষা বোর্ড- 'বেফাক'। হেফাজতের অনেক নেতা দলত্যাগ করে নিজেরাই হেফাজতের বিচার চায়ছেন! ৫১জন আলেম হেফাজতকে ফিতনা সৃষ্টিকারী ফাসেকের দল হিসবে ফতোয়া দিয়েছে! হেফাজতের শীর্ষ নেতারা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে দেখা করে ভুল বোঝাবুঝি(!)'র অবসান চেয়ে তাদের নেতাদের গ্রেফতার বন্ধের অনুরোধ জানিয়েছে!


উপরের খবরগুলো হয়তো সবাই ইতিমধ্যে জেনে গিয়েছেন। অনেকেই হয়তো খবরগুলোতে খুশি হচ্ছেন, স্বস্তি পাচ্ছেন। যারা খুশি হচ্ছেন কিংবা স্বস্তি পাচ্ছেন মূলত তাদের জন্যই এই লেখা।


কবি রুদ্র শহীদুল্লাহ বলেছিলেন- 'বেশ্যাকে তবু বিশ্বাস করা চলে রাজনীতিকের ধমনী শিরায় সুবিধাবাদের পাপ।' রুদ্রের মতো আমার খুব বলতে ইচ্ছে করে- বেশ্যাকে তবু বিশ্বাস করা চলে ধর্মব্যবসায়ীর শিরায় শিরায় সুবিধাবাদের পাপ। হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে ভেবে যারা মনে মনে সুখ নিচ্ছেন তারা নিশ্চিৎ থাকুন বাবুনগরী নতুন আহ্বায়ক কমিটির মাধ্যমে নতুন করে আত্মপ্রকাশের যে পরিকল্পনা করেছেন সেখানেও একই উশৃঙ্খল সব ধর্মব্যাবসায়ীদের আড়ত তৈরি হবে। আমরা শুধু দেখবো- 'নতুন বোতলে পুরোনো মদ।' কিংবা 'থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বোড়ি থোড়।' আবার কিছু অসমর্থিত সূত্রে এমন খবরও আসছে যে, সরকার নিজেই শফিপন্থি বা শফিপুত্র আনাস মাদানীকে দিয়ে নতুন করে হেফাজতের কমিটি করতে চাচ্ছে! খবরটি আমি বিশ্বাস করতে চাই না। কারণ আমি বিশ্বাস করতে চাই একই ভুল সরকার দ্বিতীয়বার করবে না।


২০১৩'র ৫মে'র পর যে আশকারা আর আশ্রয় প্রশ্রয় সরকার হেফাজতকে দিয়েছিলো তার মাসুল আজ শুধু সরকারকেই নয় এই রাষ্ট্রকেও বহু সম্পদ জলাঞ্জলি দিয়ে তার প্রায়শ্চিত্ত করতে হচ্ছে। হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা শফি সাহেব তো মারা গেছেন মাত্র ৭মাস আগে, তার আগ পর্যন্ত এই শফি সাহেবের নিয়ন্ত্রণাধীন হেফাজতের লাগামও কি এই সরকার টানতে পেরেছেন!? পারেন নাই। সুতরাং শফিপন্থি বা শফিপুত্র আনাস মাদানীকে বিশ্বাস করার কোন কারণ নাই! একইভাবে আজ যেসব আলেমরা হেফাজতকে ফাসেকের দল হিসেবে ফতোয়া দিচ্ছে তাদেরকেও বিশ্বাস করে কোলে তুলে নেয়ার কোন কারণ নেই! তাছাড়া হেফাজতের যেসব নেতারা এখন পদত্যাগ করে হেফাজতেরই বিচার চায়ছে সেইসব টাউট বাটপারদেরও বিশ্বাস করার কোন কারণ নেই। বস্তুতঃ এরা শুধুমাত্র হেফাজত কর্তৃক সংঘটিত অরাজকতা ও নাশকতার দায় এড়াতেই এমন পদত্যাগ করছে, এরা যে মন থেকেই শুদ্ধ হয়ে হেফাজত থেকে পদত্যাগ করছে ব্যাপারটি মোটেও তেমন নয়।


সরকার যদি কোন কারণে আজ বেকায়দায় পড়ে তবে নিশ্চিৎ থাকুন আগামীকালই এরা আবার হেফাজতের ছাতার নিচে আশ্রয় নিয়ে সরকার ও রাষ্ট্রবিরোধী হুঙ্কার দিবে! বলা হয়ে থাকে, জামায়াতে ইসলামীকে টেক্কা দিতে সরকারই একসময় হেফাজতকে আশ্রয় প্রশয় দিয়েছিলো। সেই হেফাজতই আজ শুধু সরকারের জন্যই গলার কাটা হয়ে দাঁড়াই নাই বরং পুরো রাষ্ট্রের জন্যই সাক্ষাৎ যম হয়ে দাঁড়িয়েছে; আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সংবিধানের জন্যই হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে! একইভাবে এই হেফাজতকে টেক্কা দিতে যদি আবার কোন মোল্লাতান্ত্রিক ধর্মব্যাবসায়ীদেরকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়া হয়, নিশ্চিৎ থাকুন দু'দিন পর সেই তারাও বিষধর সাপ হয়ে এই রাষ্ট্র এবং এই সরকারকেই কামড় বসাবে! সরকারকে মনে রাখতে হবে সময় ও সুযোগ বারবার আসে না। তাই যখন সুযোগ আসে তখনই সেটাকে কাজে লাগাতে হয়, তাহলেই যথার্থ ফল পাওয়া যায়।


২০১৩'র ৫মে' হেফাজতের কান ধরে পলায়নের পর হেফাজতকে দমন ও নির্বংশ করার যে একচ্ছত্র সুযোগ সেদিন এই সরকার পেয়েছিলো তা তো সরকার কাজে লাগাইনি বা লাগাতে পারেইনি উল্টো আরো হেফাজতকে তোয়াজ করে যে নমনীয়তা সরকার দেখিয়েছে তার মাসুল আজ এই রাষ্ট্রকে সুদে আসলে দিতে হচ্ছে। আমরা আশা করবো সেই একই ভুল সরকার আর করবে না। হেফাজতকে দমনের যে সুযোগ সরকার এবার আবার পেয়েছে সেই সুযোগকে কড়ায় গণ্ডায় কাজে লাগাবে।


কওমী মাদ্রাসাগুলোতে রাজনীতি নিষিদ্ধের যে ঘোষণা 'বেফাক' দিয়েছে সেটাতেও সন্তুষ্ট হওয়ার বা বিশ্বাস করার কোন কারণ দেখি না। 'বেফাক'র চেয়ারম্যান যিনি তিনি হলেন মামুনুল হকের আপন বড় ভাই এবং চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী রাজাকার আজিজুল হকের বড় ছেলে মাহফুজুল হক। এই গিরিগিটিদের বিশ্বাস করার কোন কারণই নেই! প্রতিকূল পরিবেশের কারণে এরা শুধু একটা সাময়িক কেমোফ্লেজ নেয়ার চেষ্টা করছে মাত্র।


বাইরে রাজনীতি নিষিদ্ধের একটি বাতাবরণ তৈরি করে আড়ালে আড়ালে ঠিকই দেশবিরোধী জোশ ও কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাওয়ার পরিবেশ অব্যহত রাখতে চাইছে। সময় আসলে অনুকূল পরিবেশে এরা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠে বিষদাঁত বসাবেই, বসাবে। এদের এইসব মিথ্যা আশ্বাসে কোনরকম বিশ্বাস না এনে বরং এদেরকে এখনই রাষ্ট্র কর্তৃক একটি কাঠামোগত নিয়মের মধ্যে এনে স্থায়ীভাবে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে হবে।


এদের পাঠক্রম এবং সিলেবাসে রাষ্ট্র ও সংবিধানবিরোধী যেসব অনুচ্ছেদ আছে সেগুলো ঝেটিয়ে বিদায় করে সেখানে রাষ্ট্র ও সংবিধান এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও কৃষ্টি-কালচারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নতুন নতুন অনুচ্ছেদ সংযুক্ত করে এদেরকে ধর্মীয় উগ্রবাদী ধ্যান ধারনার বিপরীতে প্রকৃত দেশপ্রেম ও মানবিকতাবোধে উদ্বুধ করতে হবে।


এখানে যে দাবিটি জোর দিয়ে করতে চাই সেটি হলো- হেফাজতকে খুশি করতে অত্যন্ত দুঃখজনক ও আশ্চর্যজনকভাবে আমাদের মূলধারার পাঠক্রমে বিগত কয়েকবছরে যে কয়টি পশ্চাৎমুখী পরিবর্তন আনা হয়েছিলো সেগুলোও সংস্কার করে আগের মতো মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে এবং তা স্থায়ীকরনের ব্যবস্থা নিতে হবে।


আমরা জানি সরকার কওমীদের 'দাওরায়ে হাদিস'কে মাস্টার্সের স্বীকৃতি দিয়েছিলো। বলা হয়েছিলো কওমী ছাত্রদেরকে মূলধারায় ফিরিয়ে আনতেই এই স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। এই স্বীকৃতির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি করে যেতে চাই। এই দাবিটি না করলে এই লেখাটি অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যাদের পাঠক্রমে আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি-কালচার নিয়ে কোন আলাপই নেই, যাদের সিলেবাস এই রাষ্ট্র, সংবিধান এবং সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ধ্যান ধারনায় ঠাসা তারা কিভাবে শুধু মাস্টার্সের স্বীকৃতির মাধ্যমে মূলধারায় ফিরে আসবে, সেটা কিভাবে সম্ভব!? বরং এই যে 'দাওরায়ে হাদিস'কে মাস্টার্সের স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে এর মাধ্যমে তারা বিসিএস বা এমন প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষাগুলোর ফাঁক গলে মূলধারায় ঢুকে পড়ে সেখানে উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদকে স্থায়ীকরনের সুযোগ খুঁজবে।


আগের সরকারগুলোর কথা না হয় বাদই দিলাম বিগত প্রায় একযুগে এই সরকারেরই বিভিন্ন এমপি মন্ত্রীর পৃষ্ঠপোষকতায় স্বাধীনতা, সংবিধান ও রাষ্ট্রবিরোধীরা যে হারে প্রশাসন, পুলিশ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে আখড়া গেড়ে বসেছে তাতেই নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে! এরপর কওমীরাও যখন এইসব সেক্টরে ঢুকে পড়বে তখন তার পরণতি যে কি পরিমাণ ভয়াবহ হবে তা ভাবতে এখনই শরীর শিউরে উঠে!


যাইহোক, এতো এতো শঙ্কা আর নিরাশার মাঝেও আশা হারাতে চাই না। সরকার এবার যেভাবে এবং যে পথে হাঁটছে তাতে মনে হচ্ছে সরকার উগ্রবাদী ধর্মব্যবসায়ীদের শায়েস্তা করার এবারের এই সুযোগটাকে পুরোপুরি কাজে লাগাবে। আমরাও সরকারের উপর আস্থা রাখতে চাই, বিশ্বাস রাখতে চাই, উগ্রবাদী ধর্মব্যবসায়ীদের চিরস্থায়ী বিনাশ চাই।


আতিকুজ্জামান ফিলিপের ফেসবুক থেকে


বিবার্তা/এনকে

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com