রোমের রাস্তায় দুই হাজার ইউরোসহ একটি ওয়ালেট কুড়িয়ে পেয়েছিলেন বাংলাদেশি তরুণ মুসান রাসেল। ওই ওয়ালেটের অর্থ নিজে খরচ না করে তিনি মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেন।
এদিকে ওয়ালেটটি ফিরে পাওয়ার পর প্রতিদান হিসেবে রাসেলকে পুরস্কার দিতে চেয়েছিলেন মালিক। কিন্তু তা প্রত্যাখ্যান করেন রাসেল। এরপর থেকেই ইতালির গণমাধ্যমে রাসেলকে নিয়ে চলছে ব্যাপক আলোচনা।
ইটালির লা রিপাবলিকা পত্রিকায় মুসান রাসেলের সাক্ষাৎকার আর ছবি ছাপা হয়েছে। সেখানে তিনি পুরো ঘটনা বর্ণনা করেন। সাত বছর আগে বাংলাদেশ থেকে রোমে আসেন। রোমের রাস্তায় তিনি একটি লেদারসামগ্রীর স্টল চালান।
গত শুক্রবার তিনি রাস্তায় একটি ওয়ালেট পড়ে থাকতে দেখেন। এটি হাতে নিয়ে তিনি দেখতে পান ভেতরে অনেকগুলো নোট, ক্রেডিট কার্ড এবং অন্যান্য মূল্যবান কাগজপত্র। এরপর আর কিছু না ভেবেই ওয়ালেটটি নিয়ে তিনি চলে যান নিকটবর্তী পুলিশ স্টেশনে। ওয়ালেটটি তুলে দেন পুলিশের হাতে।
এরপর পুলিশ ওয়ালেটের মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং তার কাছে ওয়ালেটটি ফিরিয়ে দেয়। মালিক মুসান রাসেলের সততার দৃষ্টান্তে অভিভূত হয়ে তাকে পুরস্কার দিতে চেয়েছিলেন।
লা রিপাবলিকা পত্রিকা তার কাছে জানতে চেয়েছিল, প্রথম যখন তিনি ওয়ালেটটি খুঁজে পান তখন তিনি কি ভেবেছিলেন? রাসেল বলেন, ওয়ালেটের ভেতরটা দেখে তার মনে হয়েছিল যিনি এগুলো হারিয়েছেন, তিনি নিশ্চয়ই খুবই সমস্যায় আছেন।
তিনি বলেন, ভেতরে ছিল কয়েকটি ক্রেডিট কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, কিছু কাগজপত্র। আর টাকা তো ছিলই। কত টাকা বলতে পারব না, কারণ আমি গুণে দেখিনি। আমি সবকিছু পুলিশ স্টেশনে নিয়ে গেলাম।
মুসান রাসেল ইতালিয়ান ভাষা ভালো বলতে পারেন না। তারপরও তিনি তার বক্তব্য পুলিশকে সব বোঝাতে পেরেছিলেন। ওয়ালেটের মধ্যে এত টাকা দেখে পুলিশ অবাক হয়েছিল। তখনই তিনি প্রথম জানতে পারেন, ভেতরে দুই হাজার ইউরো ছিল।
পুলিশ তাকে ওয়ালেটটি জমা দেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানায়। জবাবে রাসেল বললেন, ‘এটা আমার কর্তব্য। আমি কাজ করি এবং এই ওয়ালেটটি ঘটনাচক্রে খুঁজে পেয়েছি। এটি আমার নয়।’
তিনি বলেন, প্রথম জীবনে তাকে বেশ কষ্ট করতে হয়েছে। দিন-রাত খাটতে হয়েছে। গত দু’বছর ধরে তিনি লেদার স্টলটি চালাচ্ছেন। ওয়ালেটটি যার, তার সঙ্গে যখন দেখা হওয়ার পর কি হলো? এ বিষয়ে জানতে চেয়েছিল লা রিপাবলিকা।
মুসান রাসেল বলেন, ওয়ালেটটি পুলিশের কাছে দিয়ে তিনি কাজে ফিরে আসেন। কয়েক ঘণ্টা পর পুলিশ তাকে ফোন করে জানায়, ওয়ালেটের মালিক একজন ব্যবসায়ী। তিনি রাসেলের সঙ্গে দেখা করতে চান।
তিনি বলেন, প্রথমে আমি যেতে চাইনি। কারণ সবাই আমার দিকে মনোযোগ দিক, সেটা আমি চাইনি। তবে শেষ পর্যন্ত আমি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। ওই ভদ্রলোক আমার দেখা পেয়ে খুশি হন। আমাকে ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ জানাতে পেরে খুশি ছিলেন।
আমি তাকে বলেছি, এর কোনো দরকার ছিল না। আমি এমন ব্যতিক্রমী কিছু করিনি। কিন্তু তিনি আমাকে একটা পুরস্কার দিতে চেয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, আমি যে পুরস্কার চাই, সেটাই দিতে চান তিনি।
কেন তিনি পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করলেন এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুসান রাসেল বলেন, কারণ এটা কোনো সম্মানের ব্যাপার হতো না। আমি বরং তাকে আমার স্টলে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আমি খুশি হব যদি তিনি আমার দোকানের কাস্টমার হন।
বিবার্তা/রবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]