শিরোনাম
‘ভাই, ভাই আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, আমাকে বাঁচাও’
প্রকাশ : ১১ এপ্রিল ২০১৯, ০৩:৫৮
‘ভাই, ভাই আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, আমাকে বাঁচাও’
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

‘ভাই, ভাই আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমাকে বাঁচাও, আমার যদি এখানে চিকিৎসা ঠিক মতো না হয়, তাহলে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে আমাকে দেশের বাইরে নিয়ে চলো।’ এভাবেই ভাইয়ের কাছে পোড়া শরীরের কষ্ট- যন্ত্রণার কথা বলেছিলো ফেনীতে অগ্নিদগ্ধ শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে না ফেরার দেশে চলে গেলেন দগ্ধ মাদ্রাসাছাত্রী রাফি।


বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সমন্বয়ক ডা. সামন্ত লাল সেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।


এর আগে গত ৮ এপ্রিল সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় এভাবেই ভাইয়ের কাছে আগুন ধরিয়ে দেয়া সহপাঠী ও সংশ্লিষ্টদের বিচারের কথা বললেন ফেনীর দগ্ধ নুসরাত। বলেছিলো, ‘ভাই আমার যা কিছু হয় হোক, তবুও যেন ওদের বিচার হয়।’


মেয়েটির ভাই রাশেদুল হাসান রায়হান বলেন, গত ৮ এপ্রিল সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় আমি ও আমার মা ওকে আইসিইউতে দেখতে যাই। ও আমাকে বলে, ‘ভাই আমার যা কিছু হয় হয়ে যাক প্রিন্সিপাল সিরাজ উদদৌলা ও তার সহযোগী যারা আমার গায়ে আগুন দিয়েছে তাদের যেন বিচার হয়।’


রায়হান বলেন, এ কথাগুলো বলার সময় ওর শ্বাসকষ্ট হয়েছিল। এরপর আর কোনো কথা বলতে পারেনি, ওকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়।


এর আগে সে আমাকে আরোও জানায়, যারা তার গায়ে আগুন দেয় তাদের ওর পরিচিত মনে হয়েছে, কিন্তু চিনতে পারেনি। প্রতিদিন আমার বোনের সঙ্গে আমার বড় ভাই নোমান তাকে মাদরাসায় রেখে আসেন। সেদিন মাদরাসার পিয়ন মোস্তফা আমার বড় ভাইকে মাদরাসায় ঢুকতে দেয়নি। সেও এ ঘটনায় জড়িত। তাকেও বিচারের আওতায় আনা হোক।


মেয়েটির সঙ্গে কথা বলে তার মামা মো. সেলিম বলেন, ‘আমি ওকে বার বার জিজ্ঞেস করেছি বল কে তোর গায়ে আগুন দিয়েছে? উত্তরে সে আমাকে বলে, ‘মামা তাদের কণ্ঠটা আমার চেনা, আমার কাছের (পরিচিত) মানুষ, হাতটা ফর্সা। চেহারাটা মনে করতে পারছি না।’ গত সোমবার সকালেও তাকে আমি জিজ্ঞেস করেছি চেহারা বলতে পারে নাই।


এর আগে শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে ওই ছাত্রীর গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। দগ্ধ ছাত্রীর বাড়ি সোনাগাজী পৌরসভার চরচান্দিয়া গ্রামে। তিনি আলিম পরীক্ষার্থী।


এ বিষয়ে দগ্ধ ছাত্রীর ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বলেন, ‘আমার বোন সকালে আরবি প্রথমপত্র পরীক্ষায় অংশ নিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে যায়। তাকে ফুঁসলিয়ে অধ্যক্ষের নিয়ন্ত্রিত কয়েকজন শিক্ষার্থী মাদরাসার ছাদে নিয়ে গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে সোনাগাজী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরবর্তীতে ফেনী সদর হাসপাতালে পাঠায়। কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠান।’


উল্লেখ্য, গত ২৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে যৌন হয়রানির অভিযোগে অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ উদ্দৌলাকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনার পর থেকে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে। অন্যদিকে আরেকটি অংশ তার শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করে। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর মা বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।


বিবার্তা/নানা/খলিল/শারমিন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com