শিরোনাম
‘আমার বাবা শেষ, আমিও শেষ’
প্রকাশ : ২৮ নভেম্বর ২০২০, ০৮:৫৫
‘আমার বাবা শেষ, আমিও শেষ’
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

‘আমার বাবা শেষ, আমিও শেষ। আমিও আর মনে হয় বাঁচুম না। আমার বাবারে তারা পুরাইয়া মারছে। এখন আবার আমারে হুমকি দেয়।’


এভাবেই বিলাপ করছিলেন ফিলিং স্টেশনে সহকর্মীর দেয়া আগুনে পুড়ে নিহত রিয়াদ হোসেনের বাবা শেখ ফরিদ।


শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) দিনগত রাত পৌনে ১টার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এরপর সেখানেই বিলাপ করছিলেন তিনি।


ছেলেকে হারিয়ে বাবা ফরিদ মিয়া ও তার মা রিনা বেগম বাকরুদ্ধ। এত অল্প বয়সে আগুনে পুড়ে ছেলের মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না তারা।


রিয়াদের বাবা বলেন, আমার সন্তানকে যারা পুড়াইয়া মারছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। তাদের স্বজনরা আমাকে হুমকি দেয়। দেখে নেয়ার ভয় দেখায়।


বাবা গো আমাকে আর দেখে নিবে কি? আমি তো এমনিতেই শেষ। আমার সন্তান তো নাই, তারা আমার সন্তানরে পুড়াইয়া মারছে। আমার সন্তান পুলিশের কাছে সব বলে গেছে, কারা কারা তার গায়ে আগুন দিছিল পুলিশ সেগুলো রেকর্ড করছে।


এর আগে মঙ্গলবার (২৪ নভেম্বর) ভোর পৌনে ৪টার দিকে রাজধানীর শ্যামপুর জুরাইনের সালাউদ্দিন ফিলিং স্টেশনে সহকর্মী রিয়াদের শরীরে অকটেন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন।


ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ ইন্সপেক্টর বাচ্চু মিয়া জানান, শুক্রবার রাতে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রিয়াদ মারা যান। ইনস্টিটিউট থেকে রিয়াদের বাবা ফরিদ মিয়া তার ছেলের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।


শ্যামপুর থানার ওসি মো. মফিজুল ইসলাম জানান, সালাউদ্দিন নামের ফিলিং স্টেশনে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন রিয়াদ হোসেন নামে এক যুবক। চারজন অপারেটর মঙ্গলবার রাতে ডিউটিতে ছিলেন। তাদের মধ্যে মাহমুদুল হাসান ইমন (২২) নামে এক অপারেটর ঘুমিয়ে পড়েন। পরে রিয়াদ তাকে ডাকতে যান। ইমন ঘুম থেকে না ওঠায় তার গায়ে সামান্য অকটেক ছিটিয়ে তাকে ওঠানোর চেষ্টা করেন রিয়াদ। এতে ইমন ঘুম থেকে জেগে ক্ষিপ্ত হয়ে আড়াইশ’ মিলিগ্রামের একটি বোতলে অকটেন ভরে রিয়াদের গায়ে ঢেলে দেন। এরপর ইমন ম্যাচের কাঠিতে আগুন ধরিয়ে রিয়াদের গায়ে ছুড়ে মারেন। এতে রিয়াদের শরীরে মুহূর্তেই আগুন ধরে যায়। এ অবস্থায় ভোরেই পাম্পের কর্মচারীরা তাকে উদ্ধার করে বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার রাতে তিনি মারা যান।


ওসি আরো জানান, এই ঘটনায় রিয়াদের বাবা একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ইমন ছাড়াও দুই অপারেটর ফাহাদ আহমেদ পাভেল (২৮) ও শহিদুল ইসলাম রনিকে (১৮) গ্রেফতার করা হয়েছে।


জুরাইন কমিশনার রোডের ১৩২৭/১ নম্বর বাসায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন রিয়াদ। তার বাবা ফরিদ মিয়া গাড়িচালক। দুই ভাইয়ের মধ্যে বড় তিনি। চলতি বছর রিয়াদ সিদ্ধেশ্বরী কলেজে অনার্সে ভর্তি হন।


তার বাবা ফরিদ মিয়া বলেন, মাসিক পাঁচ হাজার টাকা বেতনে পার্টটাইম চাকরি হিসেবে চলতি মাসের ৪ তারিখে ওই পাম্পে যোগ দিয়েছিলেন রিয়াদ। মঙ্গলবার সকাল ৭টার দিকে পাম্পের লোকজন ফোন দিয়ে আমাদের হাসপাতালে আসতে বলেন। এখানে এসে রিয়াদকে দগ্ধ অবস্থায় দেখতে পাই। তার শরীরের ৪০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল।


বিবার্তা/জহির

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com