স্যাররা সোনার তৈরি, আমরা মাটির, পোস্ট দিয়ে শ্রমিকের আত্মহত্যা
প্রকাশ : ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ১০:৩৪
স্যাররা সোনার তৈরি, আমরা মাটির, পোস্ট দিয়ে শ্রমিকের আত্মহত্যা
গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

গাজীপুরের কালিয়াকৈরে মৌচাক এলাকায় বৃহস্পতিবার একটি পোষাক তৈরির কারখানার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বিষাক্ত কেমিক্যাল খেয়ে এক শ্রমিক আত্মহত্যা করেছেন।


বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) রাতে উপজেলার মৌচাক এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।


নিহত কর্মীর নাম মো. ইদ্রিস আলী (২৩)। তিনি উপজেলার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় সপরিবারে ভাড়া বাসায় থেকে কারখানার কার্টুন সেকশনে কাজ করতেন। তার বাড়ি নীলফামারী জেলায়।


মৃত্যুর আগে ওই শ্রমিক কারখানা কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়ম নিয়ে একটি ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন।


অগোছালো ভাষায় সেখানে তিনি লেখেন, ‘মন্ডল গ্রুপের মন্টিন্স লিমিটেড এখানে এক বছর যাবত চাকরি করি। কিছু লোক আসার তিন মাস এবং ছয় মাস হচ্ছে তাদেরকে পার্মান (পার্মানেন্ট) করে। আমাকে করে না কারণ হচ্ছে আমরা মেশিনের লোক। একদিন ছয়টায় গিয়েছিলাম তার জন্য আমাদেরকে বিচার করছি আমি কি অপরাধ করছি। তাদের জন্য আমার জীবন আমি শেষ করে দেব। এর জন্য দাবি (দায়ী) আমাদের সেকশনের প্ল্যানিং কামরুল স্যার আর হচ্ছে ম্যানেজার হারুন স্যার ওরা মানুষকে মানুষ মনে করে না। তারা মনে করে ওরা সোনার তৈরি, আমরা মাটির তৈরি। আমি আজকে সুইসাইড করব। ঈদের নিয়মে আমি অনেক কষ্ট পাইছি এই পৃথিবীর মানুষ বড়ই নিষ্ঠুর আপনারা এর বিচার করবেন এই পৃথিবীর মোহাম্মদ ইদ্রিস আলী।’


কারখানা বেশ কয়েকজন শ্রমিক জানান, ইদ্রিস আলী তার পরিবার নিয়ে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় থেকে মন্ট্রিমস্ লিমিটেড কারখানায় কাজ করতেন। চাকরির এক বছর হয়ে গেলেও তাকে এখনও স্থায়ী করা হয়নি। স্থায়ী করার বিষয়ে তিনি যখনই কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে গেছেন তখনই তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে। এ ছাড়া তিনি নানা বিষয়ে বেশ কিছুদিন ধরে হতাশার মধ্যে ছিলেন। বৃহস্পতিবার রাতের কোনো এক সময়ে ইদ্রিস আলী কারখানার কেমিক্যাল খায়। পরে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।


তারা আরও জানান, হারুন ও কামরুল ম্যানেজমেন্টে যোগ দেওয়ার পর থেকে শ্রমিকদের ওপর অত্যাচার করছেন। তারা মানসিক ও শারীরিকভাবেও নির্যাতন করেন। কথায় কথায় চাকরি থেকে ছাঁটাই করেন। তাদের অবিলম্বে চাকরিচ্যুত করার দাবি জানিয়ে তারা বলেন, তাদেরকে চাকরিচ্যুত না করলে আরও শ্রমিক মারা যাবে।


নিহত শ্রমিকের স্ত্রী হাসি আক্তার বলেন, আমার স্বামী মারা গেছে। এখন তাকে নিয়ে হাসপাতালে রয়েছি। এর বেশি কিছু আমি বলতে পারবো না।


কালিয়াকৈর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. যোবায়ের বলেন, কারখানার এক শ্রমিক কারখানার ভেতরে গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে বিষাক্ত কিছু খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ঘটনাটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


নিহতের বোন-জামাই বাবু বলেন, ও অনেকদিন হলো কাজ করে। ওর সঙ্গের সবাইকে চাকরিতে পার্মানেন্ট করলেও কর্তৃপক্ষ ওকে পার্মানেন্ট করেনি। অসুস্থ থাকার কারণে ৬টায় কারখানায় হতে বের হয়। এজন্য পরের দিন ম্যানেজমেন্ট হারুন ও কামরুল তাকে রুমে নিয়ে বকাঝকা করেন। পরে দুঃখ-যন্ত্রণায় আত্মহত্যা করেছে।


বিবার্তা/এমবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com