পোশাক শ্রমিক আন্দোলন
গাজীপুরে ১১ ঘণ্টা মহাসড়ক বন্ধ, সীমাহীন দুর্ভোগে মানুষ
প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৪, ১৯:৪৯
গাজীপুরে ১১ ঘণ্টা মহাসড়ক বন্ধ, সীমাহীন দুর্ভোগে মানুষ
গাজীপুর প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় বকেয়া বেতনসহ কয়েকটি দাবিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকরা।


এতে সকাল থেকেই বন্ধ হয়ে পড়ে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যান চলাচল। এর ফলে কয়েক কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজটে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েন ওই মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকরা।


১ অক্টোবর, মঙ্গলবার সকাল ৭টা থেকে মহাসড়ক অবরোধ তৈরি করে যান চলাচল বন্ধ করে দেন শ্রমিকরা। এর আগে সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাতেও মহাসড়ক অবরোধ করেছিলেন শ্রমিকরা। এতে সারা রাত যানজটে স্থবির থাকে মহাসড়ক। রাতভর যানজটে আটকে থাকায় অনেকের ঢাকায় পৌঁছাতে এবং গাজীপুর আসতে ভোর হয়ে যায়।


পুলিশ ও আন্দোলনরত শ্রমিকরা জানান, তৈরি পোশাক উৎপাদনকারী টিএনজেড গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এ্যাপারেল প্লাস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকরা গত ১৬ জুলাই পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করেন। ১৭ তারিখ বিনা নোটিশে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে মালিক পক্ষ। পরদিন জুন মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ করলেও জুলাই মাসের শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করেনি কারখানা কর্তৃপক্ষ।


পরে কলকারখানা অধিদপ্তরে মালিক, শ্রমিক ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ২৬ সেপ্টেম্বর বকেয়া বেতন পরিশোধের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। সেদিনও কারখানা কর্তৃপক্ষ বেতন পরিশোধ করতে ব্যর্থ হন। বকেয়া হয়ে যাওয়া সেই বেতনের দাবিতে সোমবার সন্ধ্যা থেকে রাত ১টা পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকরা। মঙ্গলবার(১ অক্টোবর) সকাল থেকে শ্রমিকরা ফের মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।


এ্যাপারেল প্লাস লিমিটেড কারখানার শ্রমিক রেখা সুলতানা জানান, গত মাসের বাড়ি ভাড়া এখনো দিতে পারিনি। এদিকে কারখানার মালিক আমাদের বেতন দিচ্ছে না। দুইদিন ধরে আমরা সবাই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে আছি। মালিকরা কেউ আসেনি। যতক্ষণ আমাদের পাওনা টাকা পরিশোধ না করা হবে, ততক্ষণ আমরা মহাসড়ক ছাড়ব না।


গাজীপুরের টঙ্গী থেকে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সকাল ৭টায় নেত্রকোণার উদ্দেশ্যে বাসে রওনা দেন হারিছ মিয়া। তিনি বলেন, নেত্রকোণা যাবো বলে টঙ্গী থেকে ৭টায় গাড়িতে উঠেছি। সকাল ৮টায় ভোগড়ার কাছাকাছি আসি, এরপর আর আগায়নি বাস। এখানেই দাঁড়িয়ে আছে সারাদিন। আমার সঙ্গে থাকা ১০-১২জন পায়ে হেঁটে চলে গেছেন। সঙ্গে স্ত্রী-সন্তান থাকায় পায়ে হেঁটে যেতে পারছি না। সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে এখন কী করব কিছুই বুঝতে পারছি না।


ভালুকার একটি প্রতিষ্ঠানের মাল চট্টগ্রামে নিয়ে যাচ্ছেন কভার্ডভ্যানের চালক দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, সোমবার রাতে কারখানা থেকে মালামাল লোড করে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছি। যানজটের কারণে এখনো গাজীপুর পার হতে পারিনি। সকাল ৭টায় গাজীপুরের সালনা পার হতেই শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে পড়ি। সেখানেই আটকে আছি। কভার্ডভ্যানে থাকা মাল চট্টগ্রামের ডিপো পৌঁছানোর পর সেগুলো রপ্তানির জন্য প্রস্তুত করে জাহাজে তোলা হবে। সঠিক সময়ে না যেতে পারলে কারখানা কর্তৃপক্ষের অনেক ক্ষতি হবে।


গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, সোমবার এ্যাপারেল প্লাস লিমিটেডের শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার কথা ছিল। বেতন না দেওয়ায় শ্রমিকেরা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। মহাসড়ক থেকে তাদের সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করতে শিল্প পুলিশ কাজ করছে। সেনাবাহিনীর সদস্যরাও ঘটনাস্থলে এসেছেন। তারা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলছেন।


তিনি জানান, গাজীপুরে এখন মাত্র নয়টি কারখানা বন্ধ আছে। ৯৮ শতাংশ পোশাক কারখানায় উৎপাদন স্বাভাবিক আছে। বন্ধ থাকা চারটি কারখানা শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একটি কারখানা লে-অফ, একটি অস্থায়ী বন্ধ এবং তিনটি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।


বিবার্তা/জেএইচ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com