
সাঈদা মমতাজ নাহরীনা ইকবাল। রাজশাহী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ইলেকট্রনিক্স ট্রেডের চিফ ইন্সট্রাক্টর হিসেবে কর্মরত। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, যথা সময়ে অফিসে উপস্থিত থাকেন না এবং প্রায় দুই মাস যাবত নিজ ট্রেডে কোনো ক্লাস নেননি। এবিষয়ে একাধিকবার অধ্যক্ষ তাকে সতর্ক করলেও তাতে কর্ণপাত করেননি তিনি। ফলে বাধ্য হয়ে শোকজ করেন রাজশাহী টিটিসি’র অধ্যক্ষ প্রকৌশলী এসএম ইমদাদুল হক। এতে ক্ষীপ্ত হয়ে অধ্যক্ষকে সন্ত্রাসী দিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেন নাহরীনা ইকবাল।
চিফ ইন্সট্রাক্টর নাহরীনা ইকবালের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগপত্রের (একটি ৫ ও অপরটি ৮ সেপ্টেম্বর) দুটি কপি হাতে এসেছে। গত ৫ সেপ্টেম্বরের অভিযোগপত্রে উল্লেখ আছে, ৫ সেপ্টেম্বর রাজশাহী টিটিসি’র অধ্যক্ষ ইমদাদুল হক ক্লাস রুটিন মনিটরিং করতে গিয়ে লক্ষ্য করেন, ইলেকট্রনিক্স ট্রেডের চিফ ইন্সট্রাক্টর নাহরীনা ইকবালের ক্লাস থাকলেও তিনি ক্লাসে উপস্থিত না থেকে অন্য রুমে সময় কাটাচ্ছেন। অধ্যক্ষ তাকে মৌখিকভাবে ক্লাসে উপস্থিত না থাকার কারণ জানতে চাইলে তিনি তাকে অপ্রাসঙ্গিক কথা বলেন। অধ্যক্ষ ক্লাসের হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে তিনি তাতে আপত্তি জানান। পরে তিনি বহিরাগত কিছু সন্ত্রাসী ডেকে অধ্যক্ষের কক্ষে ঢুকে তাকে হুমকি দেন।
এনিয়ে অধ্যক্ষ ইমদাদুল হক জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক ও পরিচালকের নিকট ৫ সেপ্টেম্বরেই একটি লিখিত অভিযোগ দেন। পরবর্তীতে গত ৮ সেপ্টেম্বরে তিনি চিফ ইন্সট্রাক্টর নাহরীনা ইকবালকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেন। নোটিশে বলা হয়েছে, গত ৫ সেপ্টেম্বর ক্লাস নেওয়ার কথা বলায় আপনি অধ্যক্ষের সাথে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে রাজশাহী মহিলা টিটিসি’র ওয়ার্কশপ অ্যাটেনডেন্ট মো. শহিদুল ইসলাম ও বহিরাগতদের ডেকে টিটিসিতে সন্ত্রাসীমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেন। একজন প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করার জন্য বহিরাগতদের কেন অত্র প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসলেন এ সম্পর্কিত ব্যাখ্যা আগামী দুই কার্যদিবসের মধ্যে প্রদান করবেন।
তবে দুই দিন অতিবাহিত হলেও নাহরীনা ইকবাল অধ্যক্ষ বরাবর কোন প্রকারের ব্যাখ্যা প্রদান করেননি বলে জানিয়েছেন রাজশাহী টিটিসি’র অধ্যক্ষ ইমদাদুল হক। প্রতিবেদককে তিনি জানান, ওই ট্রেডের (ইলেকট্রনিক্স) এখন এমন অবস্থা যে, শিক্ষার্থীদের ক্লাসের জন্য আসতে বলা হলেও তারা ক্লাস হয় না বলে আসতে চায় না। এর আগেও তাকে ক্লাস না পরিচালনা করার জন্য তিনবার শোকজ করা হয়েছিল। কিন্তু সেগুলো উত্তরও তিনি দেননি।
বহিরাগতদের দিয়ে প্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি ফোনে কোনো কথা বলতে পারবো না। আপনি সামনাসামনি আসেন, তখন কথা বলবো’।
একই প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হয় রাজশাহী টিটিসি’র চিফ ইন্সট্রাক্টর নাহরীনা ইকবালের কাছে। অফিসে অনুপস্থিতি, অফিসে স্বেচ্ছায়-আগমন ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের ডেকে অধ্যক্ষকে হুমকির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনিও শহীদুলের মতো তিনিও বলেন, ‘আপনার যা জানার ইচ্ছে তা সামনাসামনি এসে বলেন। আমি ফোনে আপনাকে কিছুই বলতে পারবো না’।
এবিষয়ে কথা হয় রাজশাহী মহিলা টিটিসি’র অধ্যক্ষের সাথে। অফিস চলাকালীন সময়ে তার অধস্তন কর্মচারী ওয়ার্কশপ অ্যাটেনডেন্ট মো. শহিদুল আইন বহির্ভূত কাজ কেনো করলো? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শহিদুল বেশ প্রভাবশালী। তার বিষয়ে আমি কিছু বলতে বা করতে পারি না। এর আগে শহিদুলসহ কয়েকজনকে কিছু বিষয়ে নিষেধ করায় আমাকে বেশ বিপদে পড়তে হয়। তাই আমি কাউকে ভয়ে কিছু বলতে পারি না’। ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে তাকে অফিসিয়ালি শোকজ করা হয়েছে কি-না তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এমনি মৌখিকভাবে তাকে এমন কাজে দূরে থাকার জন্য বলা হয়েছে; কিন্তু অফিসিয়ালি তাকে কোনো শোকজ করা হয়নি’।
বহিরাগতদের এনে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান প্রধানকে ভয়ভীতি প্রদর্শনের ব্যাপারে জানতে চাইলে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিচালক (প্রশিক্ষণ পরিচালনা) মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টা আমরা তদন্ত করে দেখবো। যেহেতু প্রতিষ্ঠানে একটা ঘটনা ঘটে গেছে, আর অধ্যক্ষ এ বিষয়ে একটি চিঠি দিয়েছেন। সুতরাং, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো’।
বিবার্তা/বাবর/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]