আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়া নিরাপত্তা, যৌথবাহিনীর অভিযান এবং শ্রমিকনেতা ও স্থানীয় রাজনীতিবিদদের আশ্বাসের পরও সাভারের আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে ৭৯টি পোশাক কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে মালিকেরা।
এর আগে রবিবার ‘বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে’ অন্তত ৩২টি কারখানায় ছুটি ঘোষণা করেছিল কর্তৃপক্ষ। রোববার রাতে আশুলিয়ার শিমুলতলা এলাকার বেঙ্গল গ্রুপের ইউফোরিয়া অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার র্যাবের একটি গাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টাসহ সেনাবাহিনীর গাড়ি ভাঙচুর করে আন্দোলনকারীরা।
সরেজমিনে সোমবার সকাল থেকেই আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকদের তাদের নিজ নিজ কর্মস্থলে যোগ দিতে দেখা গেছে। আবার অনেক শ্রমিককে কাজে এসে কারখানা ছুটি দেখে বাড়ি চলে যেতেও দেখা গেছে।
তবে চালু কারখানাগুলোয় শান্তিপূর্ণভাবেই চলছিল উৎপাদন। হঠাৎ বেলা ১২টার দিকে একে একে বহু কারখানার শ্রমিকরা বের হয়ে চলে যান। কয়েকটি কারখানার শ্রমিকদের বিক্ষোভ করতেও দেখা গেছে।
শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ এর সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, সোমবার সকালে শ্রমিকরা কারখানায় এসে কাজে যোগদানের জন্য প্রবেশ করে। পরে কিছু শ্রমিক কারখানার পাশের সড়কে নামার চেষ্টা করলে আতঙ্কিত হয়ে বিভিন্ন কারখানা কর্তৃপক্ষ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করতে থাকে।
পরে একে একে ৭৯টি কারখানায় কর্তৃপক্ষ সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
এদিকে সোমবার শতাধিক কারখানায় ছুটি দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ও সোয়েটার্স শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু।
তিনি বলেন, সকালে কিছু কারখানার শ্রমিকরা ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে বিক্ষোভ করার চেষ্টা করলে সেনাবাহিনী তাদের সরিয়ে দেয়। পরে পর্যায়ক্রমে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে শতাধিক কারখানার ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
মিন্টু আরও বলেন, “যে সব কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দাবি মেনে নিয়েছে সেগুলোতে স্বাভাবিক কাজ চলছে। শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে মালিকপক্ষ কিছুটা আন্তরিক হলে এই সমস্যা (অসন্তোষ) সমাধান হবে বলে আশা করছি।”
তবে শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনা নিয়ে সন্ধ্যায় বিজিএমইএর কার্যালয়ে সোমবার কারখানা মালিক, শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের জরুরি বৈঠক ডাকা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, রবিবার সকাল থেকে আশুলিয়ার শিমুলতলা এলাকার ইউফুরিয়া গার্মেন্টসের শ্রমিকরা টিফিন বিল ও রাত্রিকালীন অতিরিক্ত ডিউটির টাকা বৃদ্ধি, ছুটি বাড়ানোসহ ১৬ দফা দাবিতে কর্মবিরতি পালন করে।
বিকালের দিকে স্টাফদের সঙ্গে শ্রমিকদের কথা কাটাকাটি হলে রাতে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় কারখানাটিতে ভাঙচুর শুরু করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা।
খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কারখানা এলাকায় গেলে তাদের সঙ্গেও সংঘর্ষ হয়। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।
তিনি বলেন, তখন র্যাবের একটি গাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টাসহ সেনাবাহিনীর গাড়ি ভাঙচুর করে। পরে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
শিল্পাঞ্চলে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কারখানাগুলোর সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ছাড়া শিল্পাঞ্চলে সেনা ও বিজিবি টহলও রয়েছে।
গার্মেন্টস খাতকে অস্থিতিশীল করতে যারা উসকানি দিচ্ছে তাদের শনাক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
পোষাক শিল্পে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য ডা. দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু বলেন, পোশাক শিল্পে কোনো নৈরাজ্য সহ্য করা হবে না। এই শিল্প আমাদের জাতীয় সম্পদ। তাই এই সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব সবার। এই সম্পদ রক্ষা করতে আমরা সকাল থেকে বিকাল পযন্ত মাঠে থাকবো। কোনো অপশক্তি এই সম্পদ বিনষ্ট করতে পারবে না।
বিবার্তা/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]