গোবিন্দগঞ্জ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস দুর্নীতির আখড়া
প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২৪, ২০:৫৩
গোবিন্দগঞ্জ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস দুর্নীতির আখড়া
গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস দুর্নীতির আখড়া হয়ে উঠেছে। অর্থের বিনিময়ে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে এ অফিসের কর্তারা সবই করেন। বিশেষ করে ভুয়া-নকল কাগজপত্র ম্যানেজ প্রক্রিয়ায় শিক্ষক বা কর্মচারীদের এমপিও তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তি এবং কর্তনের মত দুঃসাহসিক ঘটনায় উৎকণ্ঠিত উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। এমন বিস্তর অভিযোগ চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি অবসরে যাওয়া শিক্ষা অফিসার শাহ আলম পারভেজ এবং এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে যোগদান করা এ. কে. এম. মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে।


এ অফিসের কর্তাদের নিয়ে সর্বশেষ মে ২০২৪ তারিখে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতার এমপিও (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) সিট প্রকাশের পর নানা অনিয়ম প্রকাশ্যে আসে। এ মাসের এমপিও সিটেই মহামান্য হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও হরিরামপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে দু’জন কর্মচারীর নাম অন্তর্ভুক্তি এবং ধরমা বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকের নাম কর্তন করা হয়। শুধু তাই নয় অবৈধ জানার পরও হরিরামপুর বালিকা বিদ্যালয়ের আইসিটি শিক্ষক এবং ধরমা থেকে অবৈধভাবে নাম কর্তন করা শিক্ষককে কাজীপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে এমপিওভুক্তির জন্য ফাইল প্রেরণ করা হয়েছে।


জানা গেছে, ধরমা বালিকা বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে ১ জানুয়ারি ২০০১ সালে যোগদান করেন ১৫ অক্টোবর ২০০০ তারিখে প্রকাশিত ১৯৯৯ সালে বিএসসি এবং ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০০৬ সালে প্রকাশিত ২০০৫ সালের বিএড পাশ করা মোছা. মোনোয়ারা বেগম। তিনি যোগদানের তারিখ থেকেই এরিয়াসহ মে ২০০১ সালের এমপিওতে বেতন-ভাতা উত্তোলন করেন। পরবর্তীতে এ শিক্ষকের নিয়োগ সংক্রান্ত একটি তদন্ত অনুষ্ঠিত হয় ২০১৮ সালে। সেসময় একাডেমিক সুপারভাইজার (বর্তমান) ফিরোজ আলম তদন্তানুসারে এবং এরও পর উপজেলা ডাইরি নং ৭৯৭, তাং-১৮-৮-২০১৯ অনিয়ম ও জাল-জালিয়াতির প্রমাণ উল্লেখ করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন এ কে এম মামুনুর রশিদ।


অভিযোগ রয়েছে, গত ২ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে পূর্বের প্রতিষ্ঠান ধরমা বালিকা বিদ্যালয় থেকে কোন ইস্তফা/ছাড়পত্র/অব্যাহতি না নিয়েই বর্তমান প্রতিষ্ঠানে যোগদান করেন এবং জাল জালিয়াতি কাগজপত্রে এমপিও থেকে নাম কর্তন করে জুন/২০২৪ মাসের প্রথম সপ্তাহেই এমপিও’র জন্য ফাইল প্রেরণ করেন মোনোয়ারা বেগম। এর আগে জাল-জালিয়াতি ও আত্মসাৎ মামলা সিআর ৩৮২/২০২০ (সেশন ৪৩৩/২১ চলমান) এ গত ৮ সেপ্টেম্বর থেকে ১১ অক্টোবর/২০২১ পর্যন্ত কারাগারে আবদ্ধ থেকে সেপ্টেম্বর মাসের সব দিনের বেতন-ভাতা উত্তোলনও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।


অপরদিকে হরিরামপুর বালিকা বিদ্যালয়ের সভাপতি ও প্রধান শিক্ষক নিয়ে মহামান্য হাইকোর্টে বিচারাধীন মামলায় একাধিক নির্দেশনাকে তোয়াক্কা না করে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সভাপতি নিযুক্ত হন এ প্রতিষ্ঠানেরই অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বাচ্চা মিয়া। তিনি প্রতিষ্ঠানের বৈধ প্রধান শিক্ষক মো. শরিফুল ইসলামকে পাশ কাটিয়ে তারই স্ত্রী চামেলী বেগমকে (সহকারী শিক্ষক প্রাথমিক শাখা) ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক করে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে থাকেন। এ সুযোগে তিনি নবসৃষ্ট তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির দু’জন কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে মে ২০২৪ সালে এমপিওভুক্ত করেন। এছাড়াও সম্প্রতি তিনি তার ছেলেকে ব্যাকডেটে নিয়োগ দেখিয়ে জাল-জালিয়াতি কাগজপত্রে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এ কে এম মামুনুর রশিদকে ম্যানেজ করে এমপিও’র জন্য ফাইল পাঠান। যা বর্তমানে জেলা শিক্ষা অফিস হয়ে বিভাগীয় অফিসে (ডিডি) রয়েছে।


এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক শরিফুল ইসলাম বিবার্তাকে জানান, আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও অবৈধভাবে নিয়োগ বাণিজ্য করছে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষিকা চামেলী বেগম (ভারপ্রাপ্ত প্রধান) এবং তার স্বামী সভাপতি হিসেবে। বিষয়টি আমি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, জেলা শিক্ষা অফিসার এবং রংপুর বিভাগীয় অফিসে জ্ঞাত করলেও কোনো লাভ হয়নি। পরবর্তীতে আমি লিখিতভাবে তাদের দপ্তরে আবেদন করেছি।
একাধিক অভিযোগের বিষয়ে অবসরে যাওয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহ আলম পারভেজের মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি এসব বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি নন।


এদিকে উপজেলা মাধ্যমিক অফিসার এ. কে. এম. মামুনুর রশিদ তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বিবার্তাকে বলেন, হরিরামপুরের দুজন কর্মচারীর বেতন-ভাতার জন্য পাঠানো ফাইলটি আমার সময়কার নয়। তেমনি ধরমা বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষকের নাম কর্তনের ফাইলও আমাদের অফিসের মাধ্যমে পাঠানো হয়নি। তবে জুন মাসে প্রধান শিক্ষক হিসেবে মোনোয়ারা বেগমের ফাইল এবং হরিরামপুর বালিকা বিদ্যালয়ের আইসিটি শিক্ষকের বেতন-ভাতার ফাইলটি যথাযথ মন্তব্যসহ প্রেরণ করা হয়েছে।


বিবার্তা/খালেক/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com