
দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় প্রকৃত পাট ও পাট বীজ চাষিদের বাদ দিয়ে সরকারি দপ্তরের কর্মচারী ও জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে খানসামা উপজেলায় পাট ও পাট বীজ উৎপাদনকারী প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর এতেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন প্রকৃত পাটচাষিরা। প্রতি বছর যারা প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন, তাদের অনেকেরই জমি নেই। যাদের জমি আছে তারাও প্রশিক্ষণ নিয়ে পাট চাষ করেন না।
এ নিয়ে উপজেলা পরিষদ হলরুমে সম্মানী ও ব্যাগ বিতরণে পাটচাষিদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
এসময় প্রশিক্ষণার্থীরা অভিযোগ করেন, এই প্রশিক্ষণে অংশ নিতে পারেন না প্রকৃত পাটচাষিরা। যারা অংশ নেন তাদের অনেকেরই জমি নেই, থাকলেও তাতে পাট চাষ করেন না। সেই সাথে উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মচারির নাম দেখে সবাই ক্ষুব্ধ হয়।
এদিকে পাটচাষি প্রশিক্ষণার্থীদের তালিকা চাইলে সেটি দিতে গড়িমসি করে দীর্ঘসময় অপেক্ষার পরেও তালিকা দিতে পারেননি।
২৭ জুন, বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা পরিষদ হলরুমে উপজেলা প্রশাসন ও পাট অধিদপ্তরের আয়োজনে পাট অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন "উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর পাট ও পাট বীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ" (১ম সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় এ প্রশিক্ষণ শুরু হয়।
জানা যায়, এই প্রশিক্ষণে মোট ১৫০ জন প্রশিক্ষণার্থী অংশগ্রহণ করেন। এদের প্রত্যেকে দৈনিক ৬০০ টাকা প্রশিক্ষণ ভাতা, দুপুরের খাবারের একটি প্যাকেট এবং একটি পাটের ব্যাগ পাবেন।
এদিন দুপুর ২ টার দিকে সরেজমিনে উপজেলা পরিষদ হলরুমে গিয়ে দেখা যায়, ১৫০ জন প্রশিক্ষণার্থী উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও অধিকাংশ চেয়ার ফাঁকা। এই সময়ে প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে ভাতা, ব্যাগ ও দুপুরের খাবার প্যাকেট বিতরণ করছেন জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার মালাকার ও উপ-সহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা সোহেল রানা।
জানা যায় যে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে কর্মরত কর্মচারীরা এই প্রশিক্ষণে উপস্থিত না থেকেও সম্মানী ও খাবার প্যাকেট গ্রহণ করছেন। তখন এ নিয়ে তীব্র হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। ঘটনাস্থলে মেজাজ হারিয়ে উপ-সহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা সোহেল রানার উপর ক্ষিপ্ত হন জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার মালাকার।
পাটচাষি প্রশিক্ষণার্থীদের সম্মানী ও খাবারের প্যাকেট বিতরণকালে দেখা যায়, উপজেলা পরিষদ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, উপজেলা প্রকৌশলী অফিস, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক, উপজেলা পল্লী উন্নয়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ে কর্মরত কর্মচারীরা এবং বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য, হিসাব সহকারী, গ্রাম পুলিশের নাম রয়েছে। এর মধ্যে অনেকেই প্রশিক্ষণে অনুপস্থিত ছিলেন। তবে সম্মানী গ্রহণের সময়ে অনুপস্থিত অনেকেই আসেন আবার একজনের পরিবর্তে অন্যজনকে সম্মানির টাকা গ্রহণ করতে দেখা যায়।
ক্ষোভ প্রকাশ করে উপজেলার বেলপুকুর গ্রামের পাটচাষি জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা সারাদিনে পাট চাষের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছি কিন্তু সম্মানী ও খাবার প্যাকেট গ্রহণের সময় যারা সরকারি অফিসে চাকরি করে তারা আগে। এমনটা হলে প্রশিক্ষণের কি দরকার শুধু সরকারের টাকা নষ্ট করা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পাটচাষি বলেন, প্রশিক্ষণ করা যেমন-তেমন সম্মানির টাকা আর খাবার প্যাকেট নেওয়াই মূল কথা।
আংগারপাড়া এলাকার পাটচাষি আব্দুল বারি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পাটচাষ করে আসছি কিন্তু কখনও ট্রেনিং এর কোন খবর পাইনি।
প্রশিক্ষণার্থীর তালিকা বিষয়ে জানতে চাইলে উপ-সহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মাধ্যমে আমরা তালিকা তৈরি করি। কিন্তু সরকারি কর্মচারীরা কীভাবে প্রশিক্ষণের তালিকায় আসলো সে বিষয়ে জানতে চাইলে কোন সদুত্তর দিতে না পেরে সংবাদকর্মীদের এড়িয়ে যান তিনি।
এ বিষয়ে জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা দিলীপ কুমার মালাকার বলেন, এই প্রশিক্ষণার্থীদের তালিকা তৈরি করেন উপ-সহকারী পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা। এতে তাঁর কোনো গাফিলতি থাকলে তদন্তপূর্বক পরবর্তী বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এমন ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: তাজ উদ্দিন বলেন, প্রশিক্ষণ নিয়ে এমন বিশৃঙ্খলা অপ্রত্যাশিত। অভিযোগ তদন্তপূর্বক দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিবার্তা/জামান/এমজে
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]