ঠাকুরগাঁওয়ে দুই মাসের ব্যবধানে একই রাস্তা দুইবার নির্মাণ!
প্রকাশ : ১৪ মে ২০২৪, ১৪:৪৩
ঠাকুরগাঁওয়ে দুই মাসের ব্যবধানে একই রাস্তা দুইবার নির্মাণ!
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

দুই মাস আগে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঠাকুরগাঁওয়ে ৮৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫’শ মিটার রাস্তা হেরিং বোন বন্ড (এইচবিবি) রাস্তার নির্মাণ কাজ শেষ হয়। আর দুই মাস না পেরোতেই পাকা রাস্তা নির্মাণের জন্য ওই রাস্তার ইট তুলে খোয়া তৈরি করছেন এলজিইডির নিযুক্ত ঠিকাদার।



স্থানীয়রা বলছেন, মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে দুটি দপ্তর একই রাস্তায় তৈরি করতে মরিয়া। জনগণের টাকা এভাবেই অপচয় করছে সরকারি কর্মকর্তারা।


উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮০ লাখ ৯৯ হাজার ৪১৫ টাকা ব্যয়ে জেলার ঠাকুরগাঁওয়ে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর পাড়িয়া আজিজুলের বাড়ি থেকে কমরেড কম্পরাম সিংহ কমপ্লেক্স চত্বর পর্যন্ত ৫০০ মিটার রাস্তা হেরিং বোন বন্ড (এইচবিবি) দরপত্র আহ্বান এবং লটারিতে বিজয়ী ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কার্যাদেশ অনুযায়ী ঠাকুরগাঁওয়ের ঠিকাদার হাসান মাহমুদ খোকা ওই প্রকল্পের কাজ গত ১৫ ফেব্রুয়ারি শেষ হলেও চূড়ান্ত বিল পাননি তিনি।


এদিকে এরই মধ্যে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের এক ঠিকাদার ওই রাস্তার ইট তুলে রীতিমতো খোয়া বানাচ্ছিলেন তার লোকজন দিয়ে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকতা সাইদুর রহমান। ইউএনওকে অবগত করলে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেন তিনি।



সরেজমিনে দেখা যায়, ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের করা রাস্তার ইট তুলে রাস্তার পশ্চিম পাশে রেখেছেন এলজিইডির ঠিকাদার। প্রায় ২০০ মিটার রাস্তার ইট তোলা হয়েছে। মেশিন দিয়ে এসব ইট খোয়া তৈরির কাজ শেষের দিকে। রাস্তার ইট তুলে ফেলার কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন স্থানীয়রা।


ইজি বাইক চালক মিনহাজ জানান, অনেক দিন পর ভাঙা রাস্তাটি ঠিক হয়েছিল। এক মাস ভালোভাবে গাড়ি চালিয়েছি। এখন আবার ইট তুলে নিয়েছে। বালুর ওপর দিয়ে গাড়ি চলে না, পেছন থেকে ঠেলার জন্য একজন লোক দরকার হয়। বর্ষায় তো আসাও যাবে না এই রাস্তায়।


স্থানীয় কৃষক রুবেল রানা বলেন, ক্ষেত থেকে ভুট্টা ভ্যানে আনতে হচ্ছে সাত কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে। ভাড়া লাগছে দেড় গুণ। একবার রাস্তায় ইট দিচ্ছে, আরেকবার তুলে নিচ্ছে। কী যে শুরু হলো। যত ভোগান্তি আমাদের।


স্থানীয় বুধুরাম সিংহ জানান, অনিয়ম আর দুর্নীতির একটা সীমা আছে। সরকারের টাকা একই রাস্তায় দুটি দপ্তর অপচয়ের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এগুলো বন্ধ করা উচিত।


বালিয়াডাঙ্গী প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, মাত্র কাজ শেষ হয়েছে, এখনো ঠিকাদারকে বিল দিতে পারিনি। এর মধ্যেই কাউকে কোনো বিষয়ে অবগত না করে এলজিইডির নিযুক্ত ঠিকাদার ইট তুলে খোয়া করেছেন। এলজিইডি কীভাবে এক মাসের মধ্যে একই রাস্তার কার্পেটিংসহ পাকাকরণের টেন্ডার করে, এটি মাথায় আসে না।


ব্যাপারে বালিয়াডাঙ্গী ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রকৌশলী সফিউল আলম জানান, প্রায় তিন কোটি ব্যয়ে ওখানে রাস্তা পাকাকরণের একটি বড় কাজ শুরু হয়েছে। ত্রাণে এইচবিবিকরণের ইট তুলে ফেলার বিষয়টি তিনি অবগত আছেন। তবে কোন ঠিকাদার করেছেন, কত মিটার রাস্তা নতুন করে পাকা হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো তথ্য জানাতে পারেননি।



বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আফছানা কাওছার বলেন, না জানিয়ে ঠিকাদার ইট রাস্তা থেকে তুলে খোয়া বানিয়েছেন। এটি অনিয়ম। দুটি দপ্তরের অফিস তৃতীয় তলা এবং চতুর্থ তলায়। কাছাকাছি থাকার পরও এত সমন্বয়হীন কীভাবে হয়, জানতে চেয়ে দুই দপ্তরকেই ডাকা হয়েছে। একই সাথে বন্ধ রাখা হয়েছে এলজিইডির ওই রাস্তা নির্মাণের কাজ।


উল্লেখ্য, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার মাছ বাজার এলাকায় ২০১৯ সালে ৯৯ লাখ টাকা দিয়ে এক কিলোমিটার রাস্তা এইচবিবিকরণের কাজ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। পরে এক বছর পর সেই ইট তুলে চার লাখ টাকা বিক্রি করে ওই রাস্তা পাকাকরণের কাজ করে এলজিইডি। ওই সময় কর্মরত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা খায়রুল আলম সুমন উপজেলা প্রকৌশলীকে কারণ দর্শানোর জন্য নোটিশ দিলেও করোনা এবং বিভিন্ন আলোর মুখ দেখেনি ইউএনওর সেই নোটিশ।


বিবার্তা/মিলন/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com