অনলাইন প্রতারণা: ১৫০ টাকার লোভে ২৮ লাখ টাকা খোয়ালেন তরুণী
প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৯:৩৩
অনলাইন প্রতারণা: ১৫০ টাকার লোভে ২৮ লাখ টাকা খোয়ালেন তরুণী
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

বিউটি আক্তার (৩৫) (ছদ্মনাম) চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার আহসানিয়া পাড়া এলাকায় বসবাস করেন। পেশায় একজন সরকারি চাকরিজীবী।


গত ৮ নভেম্বর তার ব্যক্তিগত মুঠোফোন নম্বরে এই ০১৯৬৪**৮৩১৮ নম্বর থেকে একটি ক্ষুদে বার্তা আসে। ওই ক্ষুদে বার্তাটি বাংলা করলে দাঁড়ায়- 'প্রিয় আপনি ইন্টারভিউ পাস করেছেন। এখানে যান, ২০০০ টাকা/দিনে বেতন পাবেন। সাথে হোয়াটসঅ্যাপ লিঙ্ক যুক্ত।'


লিঙ্কের হোয়াটসঅ্যাপটি খোলা হয়েছে এই ০১৭৮৯**১৮২৮ নম্বর দিয়ে। লিঙ্কে প্রবেশ করে দেখেন তিনটি ভিডিও লিঙ্ক শেয়ার করার কথা জানানো হয়। যে তিনটি লিঙ্ক শেয়ার ও লাইকে ৫০ টাকা করে মোট ১৫০ টাকা পাবেন বিউটি আক্তার। কথা মতো কাজটি করলে তরুণীকে সাথে সাথে এই ০১৮৬**৩০৭৬২ নম্বর থেকে তাৎক্ষণিক প্রতারকেরা ১৫০ টাকা বিকাশ পাঠিয়ে দেন।


ঘটনার সময়টি ছিল গত বছরের ৯ নভেম্বর বিকাল ৪টা ৫ মিনিট। একই দিন বিকেল ৫ টা ৪৬ মিনিটে তাদের কথা মতো কাজ করলে আবারো এই ০১৮৩**৫৯৪৯৮ নম্বর থেকে পাঠানো হয় ১৪০০ টাকা। এটাই ছিল প্রতারণার প্রথম দরজা।


পরে আরেকটি টেলিগ্রাম লিঙ্কে নিয়ে যান। টেলিগ্রাম আইডির নামটি ছিল লউরেন্স গোমেজ। ওই আইডি আবার তরুণীকে লিঙ্ক করে দিলেন মিগেল এঞ্জেল নামে আরেক জনের সাথে। তাদেরও একই অফার লিঙ্ক শেয়ার করতে হবে তরুণীকে।


টেলিগ্রামের এই চ্যানেলে লাইক ফলোয়ার ৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন। ওই গ্রুপেই যুক্ত করে নেন তরুণীকে। নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসেই তরুণীকে এক টেলিগ্রামে চ্যানেল থেকে অন্য টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত করেন। যেখানে আগে থেকেই তিন চারজন সদস্য ছিলেন। তারা গ্রুপে টাকা লেনদেনের বিভিন্ন স্ক্রিনশট শেয়ার করেন। এমনকি ইসলামি ব্যাংক এবং ব্র্যাক ব্যাংকের একাধিক অ্যাকাউন্টের স্কিন শিট তারা আপ দেন। তারা এটাই বুঝিয়েছিলেন সকলে টাকা পাচ্ছেন।


এরপর তাকে অ্যাডভান্স বেনিফিট ট্যাক্সের কথা বলে ১৬০০ টাকা ইনভেস্ট করলে ২৪০০ টাকা। এক গুণ টাকা ইনভেস্ট করলে দ্বিগুণ টাকা মিলবে বলে আশ্বাস দেয়। এ শর্তে ভুক্তভোগী তরুণী রাজি হলে তাকে ক্রিপ্টোকারেন্সি অ্যাকাউন্টের লিংক দেন। সেখানে একটি অ্যাকাউন্ট করে এক বিকাশ নম্বরে টাকা পাঠাতে বলেন। একের পর এক নম্বর। একে একে লেনদেন। পরে তরুণী তার অ্যাকাউন্টে জমানো টাকা তুলতে গিয়ে দেখেন অ্যাকাউন্ট লক।


পরে সমস্যা সমাধানের জন্য আবারো ইনভেস্ট করতে বলেন। তবুও সমস্যা সমাধান না হওয়ায় তার সন্দেহ হয়। উল্টো পেমেন্টের ভুয়া স্ক্রিনশট দিতে থাকেন। এভাবে একাধিক দফায় ১২৩ টি বিকাশ নম্বর ও ২টি নগদ নম্বরে সুকৌশলে প্রতারক চক্রটি ২৭ লাখ ৯৩ হাজার ১৭৫ টাকা হাতিয়ে নেন। এরমধ্যে তরুণীর ধার দেনা করা ২৫ লাখ ও নিজের চাকরির বেতনের ২ লাখ ৯৩ হাজার ১৭৫ টাকা হাত ছাড়া হয়ে যায়।


এতে প্রতারকদের ব্যবহৃত ১২৩ টি বিকাশ নম্বর ও ২টি নগদ নম্বর গুলো হলো-


০১৩২**৫৮০৫৫, ০১৭৫**৬৭১৯৫, ০১৯৯**৫৯২৩৬, ০১৭০**৫৬৭২৯, ০১৬১**১০১১৬, ০১৯৭**৮৬১৯৯, ০১৯২**৪০৭৫২, ০১৯৫**০০৪৬৭, ০১৮৩**১২৪৯৪, ০১৮৪**৮৬৩৯৫, ০১৬০**৮১৫৬৬, ০১৯৭**৯৫৭৫২, ০১৯৪**৪৪৩৪৮, ০১৮৭**৭৪৫২১, ০১৩৩**০০৬৬৭, ০১৯৭**৩২১৮৪, ০১৮৮**২৪৪২০, ০১৮৫**১০২০০, ০১৬০**৯৮৭৪৩, ০১৬০**৬৮৫৪১, ০১৮৭**৩৫৫২৪, ০১৮৪**০৩২৮৪, ০১৯০**৬৬২৪২, ০১৬১**৭২৭৬২, ০১৯০**৩২০৬৭, ০১৬০**৯০৩৭৩, ০১৬০**৬৮৫৪১, ০১৮৯**৩৫৬৭৫, ০১৬০**৩০১০৩, ০১৮৬**৫১২৬৬, ০১৬০**৬৮৫৪১, ০১৯৪**৫০৩২৪, ০১৭৭**২৭৬৪৪, ০১৮৬**৯৬৭৩৯, ০১৯০**৩২০৬৭, ০১৮৪**৩৩৪১৭, ০১৯৪**৪০১৭৪, ০১৭১**৮৯৫৩২, ০১৭৪**৪২৭৩৫, ০১৮৮**৮৭৩৪১, ০১৮৪**৪৪২২৮, ০১৮৪**৬৭৩৮৬, ০১৮১**৯৬৯২৬, ০১৮৪**৮০৮৭১, ০১৩০**০৫১৮৮, ০১৭৪**৪২৭৩৫, ০১৮৯**১৭৯৯৭, ০১৯২**১৩০৭৩, ০১৮৩**৯৫২৩৩, ০১৬০**১২২০৬, ০১৯০**৮১২৭৪, ০১৯০**৪৩৭৫৪, ০১৬০**২৩৬৮৪, ০১৮১**৯৬৯২৬, ০১৬০**১২২০৬, ০১৬০**১২৬২৮, ০১৮৩**৯৯২০২, ০১৮৭**৯৮০৯৪, ০১৮৪**৯২৩১৮, ০১৮২**১১২৯৫, ০১৮৬**০১৬৭১, ০১৮৭৭**৬৯৭৬, ০১৯৫০**৮৩৭৯, ০১৮৭০**০২১১, ০১৯**৫১৩০৭৩, ০১৯৯**১৮৬৯৩, ০১৮৯**৫৬৩৭৫, ০১৬১**৭৯২৪১, ০১৩৩২**৬৯৩৬, ০১৯৩**৯৯৩৭৪, ০১৯১**৯৮৪০৩, ০১৯৪**৮৮৪৭৯ নগদ, ০১৭৫**৬৭১৯৫ নগদ, ০১৯১**৮০৪৫৭, ০১৮৬**১৯২৮২, ০১৮২**৪০৮৩২, ০১৬০**৮৩৩৪৯, ০১৮৮**০৩১২৪৬, ০১৩০**০৫১৮৮, ০১৮৮**২২৩৮৬, ০১৯০**৬৫৭৭৮, ০১৮৫৬**৯৩৮৫০, ০১৭৩**০৮৪৯৮, ০১৩২**৭৫৫৮০, ০১৯২৯**২৬৭৬৫, ০১৭২**১০৭১৭, ০১৭৮**৫৬০৭১, ০১৫৮**৬৫৭৫৭, ০১৮১৯**৭৯৪২২, ০১৬০**৩৪৫৯৭, ০১৭০**৩৫০২৬, ০১৩২**৬১৮৬৯, ০১৯৩**২৬৫৫৮, ০১৮৪**৯৪০০১, ০১৩৩০**০৭৬৭৬, ০১৯৭৭**১৪৩৯১, ০১৮১৯**৪৮২৫৮, ০১৩৩০**৯৬২৬৩, ০১৭১৬**১২০৬৬, ০১৬১০**৭৯৭২৬, ০১৮৬১-**৫৬১৮, ০১৯৬৯**১৬০৬৪, ০১৯১৭**১০১২, ০১৩২৭-**৭৪৯৪, ০১৯৭৫**৫৯৬৩, ০১৬০৬**১৯৬৯৩, ০১৮৮১**৮০৬, ০১৬০৩**১৯৩৩, ০১৭৪৫**৪২৮০, ০১৮৭৩**৮৩৩৫৮, ০১৯৪০**২৮২৩, ০১৯৪০**৮৪৭৯, ০১৮১৪**৩০৩৭, ০১৯৩৯**৬৫৫৮, ০১৯৩৯**৬৫৫৮, ০১৬০৭**১৩১১, ০১৮৮৫**৫৩৮৭, ০১৪০৬**৮০৭২, ০১৮৩১**৩৩৬৯, ০১৯০৩**৯৯৬৪, ০১৯৯৩**৭৮৫০, ০১৩৩১**৭৯৭৭, ০১৮১৪**৫৪৭৭, ০১৮৩৬**২০৪৭, ০১৫৮৬**২৯৭৪৯


পরে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে তরুণী কোন উপায়ন্তর না দেখে প্রথমে বাকলিয়া থানা ও পরে সিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটে ধরনা দিয়েও হতাশ হন।


পরে এ ঘটনায় ২৫ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আওলাদ হোসেন জুনায়েদের আদালতে ভুক্তভোগী তরুণী ওই প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে ডিজিটাল প্রতারণার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।


বিজ্ঞ আদালত মামলাটি গ্রহণ করে সিআইডিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই চক্রের সদস্যদের চিহ্নিত করে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেন।


মামলায় আসামি করা হয়-এলাইসা, লউরেন্স গোমেজ, আন্টোনিও মালদোনাদো ইভানজেলিস্ট, রিতা মেরিন, এসোক হুর, মৌসুমী সম ও আত্রেয়ী রায়। এরা সকলে ছদ্মনামে দেশি-বিদেশি চক্র ও টেলিগ্রাম হোয়াটসঅ্যাপে উল্লিখিত নামধারী প্রতারক চক্রের সদস্য।


এ প্রসঙ্গে বাদি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মাওলা মুরাদ বলেন, দেশি-বিদেশি এ ধরনের সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র শুধু এই নারী নয়, দেশের বিভিন্ন জায়গাতেই এভাবে প্রতারণার জাল বিছিয়ে নিরীহ মানুষের লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। প্রতারক চক্রের সদস্যদেরকে আইনের আওতায় আনতে না পারলে ভুক্তভোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলবে। এটাই আদালত কে বুঝিয়েছি।'


ভুক্তভোগী তরুণী বিউটি আক্তার বলেন, 'বর্তমানে আমি খুব শোচনীয় পর্যায়ে রয়েছি। মানসিকভাবেও খুব হতাশ। আমি প্রতারকদের ১২৩ টি বিকাশ ও ২ টি নগদ নম্বরে সমস্ত টাকা পাঠিয়েছি। কোনো কোনো নম্বর থেকে টাকা পাঠানো হয়েছে তাও জানিয়েছি। আমি আদালতের কাছে প্রার্থনা করেছি ওই সমস্ত নম্বরের লেনদেন স্থগিত করে আইনি প্রক্রিয়ায় যেন আমার টাকা ফেরত পাই।'


বিবার্তা/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com