কুমিল্লায় পেটানো হলো দিনমজুর কিশোরকে, বাড়িতে ফিরে মৃত্যু
প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০২৪, ১৮:৪০
কুমিল্লায় পেটানো হলো দিনমজুর কিশোরকে, বাড়িতে ফিরে মৃত্যু
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

তিন মাস আগে কাজের সন্ধানে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলায় গিয়েছিলেন ১৬ বছরের কিশোর সুমনসহ ২৫-৩০ জন। সেখানে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অধীনে চিওড়া সরকারি কলেজের ভবন নির্মাণে কাজের শ্রমিক ছিল তারা। রমজানের শেষ দিকে ঈদের জন্য বাড়ি চলে আসে সবাই। কিন্তু হাতে টাকা না থাকায় বাড়িতে আসতে পারেননি সুমন ও তার প্রতিবেশী জিলানী। সেখানে ঈদের পরদিন তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে মারধরের শিকার হয় সুমন। সুমনকে উদ্ধার করে ভর্তি করা হয় চৌদ্দগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে অ্যাম্বুলেন্সে করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী খোকন মিয়া। রংপুরে ৫দিন চিকিৎসার পর সুমনের স্বজনদের উন্নত চিকিৎসার জন্য পরামর্শ দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।


তবে স্বজনেরা টাকার অভাবে সেখানে চিকিৎসা করাতে পারেননি। তাই গত শুক্রবার বাড়িতে নিয়ে আসেন তাকে। অর্থের টানাপোড়নে ছেলের চিকিৎসা করাতে না পেরে বাড়িতে এনে মৃত্যুর প্রহর গুনছিলেন হতদরিদ্র বাবা। অপেক্ষার প্রায় চব্বিশ ঘণ্টা পর বাবা নজরুল ইসলামের চোখের সামনেই মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন সুমন। এ ঘটনায় ওই এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।


শনিবার (২০ এপ্রিল) সকালে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আমজানখোর ইউনিয়নের জুগিহার কাশিবাড়ি গ্রামে এঘটনা ঘটে। ওই দিন সন্ধ্যায় বাড়ির পাশে সুমনকে দাফন করা হয়।


চিকিৎসকের কথা অনুযায়ী স্বজনেরা জানতেন সুমন আর বাঁচবে না। কিন্তু চিকিৎসার খরচ বহন করার মতো সামর্থ্য তাঁদের নেই। তাই শুক্রবার দুপুর থেকে শনিবার বেলা ১১টা পর্যন্ত সুমনের মৃত্যুর জন্য প্রহর গুনছিলেন তাঁর পরিবার।


সুমনের বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, ৩ মাস আগে কাজ করতে কুমিল্লায় যায় সুমন। ঈদের আগে সবাই বাড়ি আসলেও টাকার অভাবে সে বাড়িতে আসতে পারেনি। ঈদের পরদিন তাকে মারধর করা হয়। কিন্তু কেন মারধর করা হয়? কি তাঁর অপরাধ? আমরা কিছুই জানি না। ছেলেটাকে মারধর করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন লোকজন। আমরা গরিব মানুষ, দিনমজুর দিয়ে খায়। উন্নত চিকিৎসার জন্য আইসিইউতে ভর্তি করানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসক। যার প্রতিদিনের খরচ ২৫ হাজার টাকা। এত টাকা কোথা থেকে পাব! এ জন্য ছেলেকে বাড়িতে নিয়ে এসে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছিলাম! অ্যাম্বুলেন্সে ছেলেকে বাড়িতে নিয়ে আসার টাকা গ্রামবাসী চাঁদা তুলে দিয়েছে।


তিনি আরো বলেন, সুস্থ ছেলে কাজের সন্ধানে গেলো। আসলো অসুস্থ হয়ে। কি কারণে তাকে পেটানো হলো। কে মারল। প্রশাসনের কাছে এর সঠিক বিচার চাই।


সুমনের সঙ্গে কাজ করতে যাওয়া কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদে সবাই বাড়ি ফিরলেও জিলানী ও সুমন সেখানেই ছিল। পরে তাঁরা শোনেন, সেখানে মারামারি হয়েছে, হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে সুমনকে। কেন, কী কারণে মারামারি হলো কেউ পরিষ্কার করে বলতে পারছেন না। তবে সুমনের মৃত্যুর পর থেকে জিলানীও গা ঢাকা দিয়েছে বলে জানান তারা।


সুমনের প্রতিবেশীরা জানান, ২৫ হাজার টাকা প্রতিদিন খরচ করতে হবে, এটা শোনার পর বাবা তাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। এ ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। রাতে খাওয়ার জন্য যে চাল, ডাল লাগবে সেটার জন্য গ্রামবাসীর কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। অভাবী বাবা চোখের সামনে ছেলেকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে দেখেন তাঁরা।


ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক খোকনের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।


আর কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের এক সংবাদকর্মী ফোনে জানিয়েছেন, ওই ভবনের কাজ পেয়েছেন ফারুক আহমেদ মিয়াজী নামে এক ঠিকাদার। খোকন নামে কোনো ব্যক্তির অধীনে হয়ত সুমন শ্রমিকের কাজ করতেন। তিনি ঠিকাদার নন।


এরপর ঠিকাদার ফারুক আহমেদ মিয়াজীর নম্বরে কল করা হলে তিনি জানান, কাজ বন্ধ থাকা অবস্থায় জিলানী ও সুমনের মধ্যে মারপিটের ঘটনা ঘটে। এতে গুরুতর আহত হন সুমন।


আমজানখোর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আকালু (ডংগা) বলেন, ঘটনাটি মর্মান্তিক। ছেলেটির চিকিৎসা করানো সামর্থ্য নেই তার বাবার। তাই বাধ্য হয়ে এমন কাজ করেছে। গ্রামবাসীর সহযোগিতায় শনিবার রাতে তাকে দাফন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।


এ ব্যাপারে বালিয়াডাঙ্গী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ কবির বলেন, এ ধরনের কোন ঘটনা আমাদের কেউ অবগত করেনি। তবে পরিবারে কেউ অভিযোগ করলে পুলিশ আইনি সহায়তা প্রদান করবে।


বিবার্তা/মিলন/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com