অসহায়দের আশ্রয়স্থল নড়াইলের ‘বেলা শেষ’
প্রকাশ : ৩১ মার্চ ২০২৪, ১৭:৫৭
অসহায়দের আশ্রয়স্থল নড়াইলের ‘বেলা শেষ’
নড়াইল প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

নড়াইলের সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নের আলোক দিয়ায় গড়ে উঠেছে ‘বেলা শেষ’ বৃদ্ধাশ্রম। দোতলা অট্টালিকার নিচের তলায় বারান্দার রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছেন সুনাবান ও পূর্ণিমা মালো নামে দুই বৃদ্ধ। দুজনেরই বয়স সত্তর ছুঁই ছুঁই। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন তারা। সম্ভবত সেই দৃষ্টি সবকিছু ভেদ করে পৌঁছে গেছে তাদের অতীতে। এক পলকে অতীত জীবনের হিসাব কষছেন তারা। হিসাব হয়ত মিলছে না।


এক সময় যাদের জন্য প্রাণ উজাড় করে দিয়ে ছিলেন,বার্ধক্যের অসহায়ত্বে ছেড়ে গেছেন তারা। বেলা শেষে তাই দুই বৃদ্ধ নারীর ঠাঁই হয়েছে।


৩১ মার্চ, রবিবার সকালে সরেজমিনে বেলাশেষে বৃদ্ধাশ্রমে গেলে কথা হয় বৃদ্ধা সুনাবান এর সাথে। তিনি বলেন, ভিডিও করবেন বাবা। তিনি বলেন, তার বাড়ি নড়াইল পৌরসভার ভাটিয়ায়। স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করায় তার কাছে যেতে পারেন না। সাতটা সন্তানের কেউ বেঁচে নেই। এখন কোথাও কেউ নেই তার। থাকার মধ্যে আছে তিনটি বোন। বৃদ্ধাশ্রমে আসার আগে তাদের কাছেই থাকতেন তিনি।


বোনদের মধ্যে একজনই তাকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে গেছেন। এখানে ভালোই আছেন। থাকা-খাওয়ায় কোন সমস্যা নেই। ইফতারি-সেহরিতেও ভালো মানের খাবার পাচ্ছেন। বোনের বাড়ি মাঝে মাঝে বেড়াতেও যান তিনি। তবে সম্প্রতি বোন হজে গেছেন। তাই সে বাড়িতে অনেকদিন যাওয়া হয় না।


পার্শ্ববর্তী জেলা যশোর থেকে বৃদ্ধাশ্রমে আসা পূর্ণিমা মালো বলেন, চার ভাই এক বোন কে মানুষ করেছেন। এখন ভাই-বোন তাকে চেনে না। কিন্তু কপাল পুড়েছে তার। ভাই-বোন মানুষ করতে গিয়ে জীবনে বিয়ে করতে পারেন নি। এখন তারা কেউ কোন খোঁজ খবর নেয় না। তাই নিজেই এসেছেন বৃদ্ধাশ্রমে। দুই বছর ধরে তিনি এখানেই আছেন তবে থাকা-খাওয়ার কোন সমস্যা নেই।


শুধু সুনাবান বা পূর্ণিমা মালো নয় তাদের মত আরও ৫ জন অসহায় বৃদ্ধ নারী-পুরুষের ঠাঁই হয়েছে নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নের আলোক দিয়ায় গড়ে ওঠা ‘বেলা শেষ’ বৃদ্ধাশ্রমে।


২০২২ সালে নড়াইল জজ কোর্টের আইনজীবী হেমায়েত উল্লাহ হিরু ‘বেলা শেষ’ বৃদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন। ৪ জন পুরুষ ও ৩ জন নারী রয়েছে। প্রায় ৪০ জনের আবাসনের সুব্যবস্থা রয়েছে বৃদ্ধাশ্রমটিতে। কোন কিছুরই অভাব নেই। ফলে অসহায়দের কাছে বেলাশেষে হয়ে উঠেছে শেষ আশ্রয়স্থল।


প্রতিষ্ঠাতা অ্যাডভোকেট হেমায়েত উল্লাহ হিরু বলেন, অসহায় মানুষদের জন্য কিছু করার ইচ্ছা থেকেই পারিবারিকভাবে বৃদ্ধাশ্রমটি গড়ে তুলেছেন। এখানে আসা অসহায়ের বিনা পয়সায় থাকা, খাওয়া, চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য নেয়া হয়েছে নানান পরিকল্পনা। সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেতে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বিত্তবানদের যাকাতের টাকা এখানে দেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।


এ বিষয়ে নড়াইল জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশফাকুল হক চৌধুরী বলেন, শেষ বয়সে এসে মানুষ খুব অসহায় জীবন যাপন করে। এসব মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব এবং সওয়াবের কাজ। আমি বিত্তবানদের আহ্বান করব এই অসহায়দের আশ্রয়স্থল বেলা শেষের পাশে এসে দাঁড়াতে।


বিবার্তা/শরিফুল/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com