রাজধানীতে গত ১০ বছরে ২৬৯ জনের মৃত্যু
অগ্নিকাণ্ডে হতাহতদের ক্ষতিপূরণ এবং নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন
প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৪, ২২:০৯
অগ্নিকাণ্ডে হতাহতদের ক্ষতিপূরণ এবং নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

বাংলাদেশ সাধারণ নাগরিক সমাজের উদ্যোগে রাজধানীতে অগ্নিকাণ্ডে হতাহতদের ক্ষতিপূরণ এবং নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ রাজউক, সিটি কর্পোরেশন, ফায়ার সার্ভিস ভবন মালিক ও অসৎ ব্যবসায়ীদের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।


৪ মার্চ, সোমবার সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।


মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, রাজধানীতে নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা আজ হুমকির মুখে। সড়কে নিরাপত্তা নাই, হোটেলে রেস্টুরেন্টে নিরাপত্তা নাই, বাসস্থানে নিরাপত্তা নাই এমনকি ইন্টারনেটে ও নিরাপত্তা নাই। চারদিকে শুধু মৃত্যুর মিছিল। এত সকল অগ্নিকাণ্ড ঘটে গেল শত শত মানুষের মৃত্যু হল, হাজার হাজার মানুষ মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে আহত হয়ে বেঁচে রইল অথচ এখন পর্যন্ত রাজউক, সিটি কর্পোরেশন, এবং ফায়ার সার্ভিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা হলো না।


এ সকল প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি অনিয়ম এবং স্বেচ্ছাচারিতার কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে তার দায়দায়িত্ব রাজউক, সিটি কর্পোরেশন, ফায়ার সার্ভিস এড়াতে পারেন না। অগ্নিকাণ্ডের এ দায় দায়িত্ব নিয়ে রাজউকের চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবি করেন বক্তারা।


সভাপতির বক্তব্যে মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, গত ২০১০ সাল থেকে ২০২৪ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডে শুধু রাজধানীতেই মৃত্যু হয়েছে ২৬৯ জনের।


তিনি অগ্নিকাণ্ডের একটি চিত্র তুলে ধরে বলেন, ২০১০ সালের ৩ জুন নিমতলীতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু হয় ১২৪ জনের, আগুনে পুড়ে যায় ১২৩টি বাড়িঘর। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি চুরি হাট্রা অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু হয় ৭১ জনের। ওই একই বছরের ২৮ মার্চ বনানীর এবং আর এফ টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন ২৭ জন, আহত হয়েছিলেন ৭০ জন। ২০২১ সালের ২৭ জুন মগবাজারে ১২ জনের মৃত্যু হয় তাছাড়া আহ্বান প্রায় ২০ শতাধিক ব্যক্তি। ২০২৩ সালের মহাখালীর খাজা টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যুবরণ করেন ২ জন, আহত হন প্রায় অর্ধশত। তাছাড়া সারাদেশে সপ্তাহব্যাপী ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হয়। এতে ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ১০০ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের ৪ এপ্রিল বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডে ৩৮৪৫ জন ব্যবসায়ী সর্বস্বান্ত হন। আর ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩০৫ কোটি টাকা।


এছাড়াও ছোট বড় মিলিয়ে আরও বহু ধরনের অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হয়। আর এ সকল অগ্নিকাণ্ডে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ রাজউক পরবর্তীতে সাফাই গাইতে থাকেন যে বিল্ডিং কোড অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছিল না বা নির্মাণ হয়নি। কিন্তু আমরা মনে করি এই প্রতিষ্ঠানের পিয়ন থেকে শুরু করে চেয়ারম্যান পর্যন্ত সবাই অসৎ দুর্নীতিবাজ। এদের দায়িত্বের অবহেলার কারণে আজকে নাগরিক জীবনে দুর্ভোগ নেমে এসেছে অথচ এখন পর্যন্ত এদের কারোর বিরুদ্ধে সরকার শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি যা অত্যন্ত দুঃখজনক।


অন্যদিকে সিটি কর্পোরেশন তাদের ব্যবসার করার জন্য বৈধ লাইসেন্স দিয়ে থাকেন। তারা কীসের ভিত্তিতে লাইসেন্স প্রদান করল আর ব্যবসা কীভাবে পরিচালিত হলো তার দায়ভার কোনোভাবেই সিটি কর্পোরেশন এড়াতে পারে না।


ফায়ার সার্ভিসের লাইসেন্স ছাড়া হোটেল রেস্টুরেন্ট, গুদাম, বাণিজ্যিক ভবন পরিচালিত হবার কথা না। অথচ পরবর্তীতে তারা বলেন পর্যাপ্ত ফায়ার ফাইটিং নাই বা বিভিন্ন ধরনের প্রেসক্রিপশন দিয়ে থাকেন। তাহলে সরকার তাদেরকে কেন রেখেছে? জনগণের পয়সায় তাদের বেতন কেন দেওয়া হয়? অন্যদিকে ভ্যাট কাস্টমস এ সকল প্রতিষ্ঠান থেকে কীভাবে রাজস্ব আদায় করল। এর জবাব কে দেবে?


আর ভবন মালিক এবং ব্যবসার সাথে নিয়োজিত ব্যবসায়ীরা যারা তাদের দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও সমাধান না করে অসৎ কর্মকর্তাদের যুগ সাজো সে ব্যবসা পরিচালনা করে এসেছেন বা ভবন নির্মাণ করেছেন তাদেরকেও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আমাদের দাবি নিহত প্রত্যেক ব্যক্তিকে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার সমস্ত দায় দায়িত্ব সরকার ইতিমধ্যে নিয়েছে এবং তাদেরকে ভবিষ্যতে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা সরকারকে করে দিতে হবে।


মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন, এডভোকেট বেলাল হোসেন, সংগঠনের যুগ্ম সদস্য সচিব মো. খন্দকার জুয়েল, কোষাধক্ষ্য লায়ন শ্যামল সাব্বির, লায়ন নুরুজ্জামান হীরা, জাতীয় মানবাধিকার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনজুর হোসেন ঈসা, জাতীয় স্বাধীনতা পার্টি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজু, জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগের চেয়ারম্যান মো. জলিল।


সঞ্চালনা করেন সংগঠনের প্রচার প্রকাশনা সম্পাদক মো. স্বপন। এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।


বিবার্তা/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com