বাবা খেলনা নিয়ে ফিরবেন, অপেক্ষায় ছোট্ট তামিম
প্রকাশ : ০৪ মার্চ ২০২৪, ২১:১৬
বাবা খেলনা নিয়ে ফিরবেন, অপেক্ষায় ছোট্ট তামিম
গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

বাবা খেলনা নিয়ে ফিরবেন। ছোট্ট শিশু তামিমের (৪) এই অপেক্ষা দুই বছরের। বাবা মাফিজুল (২৫) যখন নিখোঁজ হয়েছিলেন, তামিমের বয়স তখন দুই। এই দীর্ঘ সময়ে বাবার কথা মনে হলে মা মিনা খাতুন সন্তানকে সান্ত্বনা দিতেন। বলতেন, টাকা-পয়সা রোজগার করে বাবা ফিরবেন তামিমের জন্য খেলনা নিয়ে। মা শোক বুকে চেপে সান্ত্বনার বাণী শোনালেও ছোট্ট তামিমের অপেক্ষার প্রহর এখনো শেষ হয়নি। ছোট্ট শিশুটি জানে না বাবা মাফিজুল খুন হয়েছেন। বাবার অন্তিম পরিণতির কথা তামিম বুঝতে না পারলেও নিখোঁজের দুই বছর পর মিনা খাতুন জানতে পেরেছেন স্বামী খুন হয়েছেন। স্বামী হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মিনা খাতুন, শ্বশুর-শাশুড়িসহ পরিবারের লোকজন।


হত্যাকাণ্ডের শিকার মাফিজুল ইসলাম নাটোরের গুরুদাসপুর পৌর শহরের খলিফাপাড়া মহল্লার আজাদ প্রামাণিকের ছেলে। পিতা-মাতা, ছোট দুই ভাইবোন ও স্ত্রী সন্তান নিয়ে ছিল মাফিজুলের সুখের সংসার। বাড়ির ভিটার ১১ কাঠা জমি ছাড়া তাদের কোনো আবাদি জমিজমা নেই।


মাফিজুলের পিতা আজাদ প্রামাণিক বলেন- দিনমজুরি করে মাফিজুল ও মাহফুজকে বড় করেছেন। বড় ছেলে মাফিজুল রঙ মিস্ত্রি এবং ছোট ছেলে মাহফুজ জুতার দোকানে কাজ করতেন। বাবা ছেলের আয়ে তাদের ছয় সদস্যের সংসার ভালোই চলছিল। কিন্তু বছর দুয়েক আগে বড় ছেলে মাফিজুল হঠাৎ নিখোঁজ হন। তখন থেকে সন্তানের শোকে রুগ্ন হয়ে পড়েছেন স্বামী-স্ত্রী।


তিনি বলেন, মাফিজুলের স্ত্রী-সন্তানকে ভরণপোষণ দিতে তিনি ব্যাটারি চালিত ভ্যান চালানো শুরু করেছিলেন। আশায় বুক বেঁধেছিলেন, ছেলে মাফিজুল ফিরে আসবেন তাদের বুকে। কিন্তু গত রবিবার তার হাড়গোড় উদ্ধার করা হয়েছে। এখন তাদের ৫ সদস্যদের পরিবারের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেল। আসামিদের মুখোশ উন্মোচিত হয়েছে। ছেলের হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি তার।


পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ৭ মে নিখোঁজ হন মাফিজুল। সন্তানকে খোঁজাখুঁজি করে সন্ধান না পাওয়ায় গুরুদাসপুর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন নিহত মাফিজুলের মা। মাফিজুল ফেরার অপেক্ষায় পথ চেয়ে ছিলেন পরিবারের লোকজন। কিন্তু সম্প্রতি প্রতিবেশী জাকির মুন্সির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ছেলের শেষ পরিণতির বিষয়ে জানতে পারে মাফিজুলের পরিবার।


১ মার্চ, শুক্রবার গুরুদাসপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন মাফিজুলের মা মাইনুর বেগম। এরপর ৩ মার্চ, রবিবার দুপুরে চাঁচকৈড় বালিকা দাখিল মাদরাসার শৌচাগারের মেঝে খুঁড়ে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মামলায় চার আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।


রোববার মাফিজুলের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়- মাফিজুলের লাশ উদ্ধারের খবর শুনে স্ত্রী-স্বজনেরা আহাজারি করছেন। মা মাহিনুর বেগম ছেলের মৃত্যুশোকে অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে গেছেন। মাঝেমধ্যে চিৎকার করে উঠছেন। বাবা আজাদ প্রামাণিক কোনো কথা বলছেন না। বাবা হারিয়ে নির্বাক তাকিয়ে আছে অবুঝ তামিম।


মাফিজুলের স্ত্রী মিনা খাতুন কান্নাজড়ানো কণ্ঠে বলেন- মাফিজুলের সাথে তার বিয়ের পাঁচ বছর। পাঁচ বছরের সংসারে একমাত্র সন্তান তামিমকে (৪) নিয়ে দিনের পর দিন স্বামীর অপেক্ষায় কাটিয়েছেন। ভেবেছিলেন স্বামী ফিরবেন। কিন্তু এখন নিশ্চিত হয়েছেন স্বামী হত্যাকাণ্ডের শিকার। স্বামী হারিয়ে এখন নিজের এবং সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত তিনি।


বিবার্তা/জনি/রোমেল/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com