পরকীয়া প্রেমের জেরে খুন, ২২ মাস পর মিলল লাশের খোঁজ
প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২৪, ২২:১৭
পরকীয়া প্রেমের জেরে খুন, ২২ মাস পর মিলল লাশের খোঁজ
গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

নাটোরের গুরুদাসপুরে পরকীয়া প্রেমের জেরে খুন হয়েছিলেন মাফিজুল ইসলাম (২৮) নামের এক ব্যক্তি। দীর্ঘ ২২ মাস পরে নিহত ব্যক্তির লাশের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। একটি বালিকা মাদরাসার টয়লেটের মেঝেতে পুঁতে রাখা লাশটি উত্তোলনের জন্য আদালতে আবেদন করেছেন পুলিশ।


এঘটনায় ১ মার্চ, শুক্রবার রাতে চারজনকে অভিযুক্ত করে গুরুদাসপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহতের মা মাহিনুর বেগম।


হত্যার শিকার মাফিজুল ইসলাম গুরুদাসপুর পৌর সদরের চাঁচকৈড় খলিফা পাড়া মহল্লার আজাদ প্রামাণিকের ছেলে। তিনি পেশায় রঙ মিস্ত্রি ছিলেন।


হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সন্দেহে গৃহবধূ তানজিলা (৩৫) ও তার পিতা নৈশপ্রহরী তাহের খলিফা (৬৫), সাবেক স্বামী আল-হাবিব (৩৯) ও পরকীয়া প্রেমিক আশরাফুলকে (৪৫) পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।


এরমধ্যে পালানোর সময় আসামি আশরাফুলকে বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকা থেকে ২ মার্চ, শনিবার সকালে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এসময় তার কাছ থেকে দুটি পাসপোর্ট, দুটি মোবাইল ও একটি চেক বই জব্দ করা হয়।


আশরাফুল পৌর সদরের খামারনাচকৈড় মহল্লার আব্দুস সামাদের ছেলে। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী।


পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে- প্রায় ১৫ বছর আগে তানজিলা তার স্বামী আল-হাবিবকে সঙ্গে নিয়ে আপন ছোটভাই সবুজকে (১০) খুন করেছিলেন। ওই মামলায় আল-হাবিব জেলহাজতে থাকা অবস্থায় আশরাফুলের সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে যান তানজিলা। স্থানীয় একটি বেকারিতে চাকুরি করার সুবাদে মাফিজুলের সাথে আবারো পরকীয়ার সম্পর্ক গড়েন তিনি। মাফিজুলের সাথে প্রেমের বিষয়টি জানাজানি হলে ক্ষিপ্ত হন আল-হাবিব, শ্বশুর তাহের খলিফা ও পরকীয়া প্রেমিক আশরাফুল। আল-হাবিব জামিনে বেরিয়ে এলে ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল তানজিলা পরকীয়া প্রেমিক মাফিজুলকে চাঁচকৈড় পুড়ানপাড়ায় তার পিতার বাড়িতে ডেকে আনেন। একপর্যায়ে তানজিলা, তার স্বামী আল-হাবিব, পিতা তাহের খলিফা এবং প্রেমিক আশরাফুলের সহযোগিতায় মাফিজুলকে শ্বাসরোধে এবং বুকের ওপর শাবল দিয়ে আঘাত করে হত্যা করেন। রাতেই বাড়ির পাশের চাঁচকৈড় বালিকা দাখিল মাদরাসার নির্মাণাধীন টয়লেটের মেঝের বালু খুঁড়ে সেখানে লাশ পুঁতে রাখা হয়। তানিজলার পিতা ওই মাদরাসার নৈশপ্রহরী।


এঘটনায় নিহত মাফিজুলের পরিবারের পক্ষ থেকে ২০২২ সালের ৭ মার্চ গুরুদাসপুর থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়।


যেভাবে রহস্য উদ্‌ঘাটন হল


পুলিশ বলছে, হত্যাকাণ্ডের পর গত বছর তানজিলার সাথে স্বামী আল-হাবিবের বিচ্ছেদ ঘটে। একপর্যায়ে তানজিলার দায়ের করা যৌতুকের মামলায় আবারো জেলহাজতে যান আল-হাবিব। জেলহাজতে থাকা অবস্থায় আল-হাবিব গুরুদাসপুরের এক ব্যক্তির কাছে মাফিজুলকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। বিষয়টি জানাজানি হলে শুক্রবার থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলার আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত হয়। একপর্যায়ে আসামিদের সাহায্যে লাশের সন্ধান পাওয়া যায়। ঘটনাটি জানাজানি হলে মাদরাসাটিকে ঘিরে উৎসুক মানুষের ভিড় পড়ে। তবে শুক্রবার রাত থেকেই চাঁচকৈড় বালিকা দাখিল মাদরাসায় পুলিশ পাহারা বসানো হয়েছে। লাশটি উত্তোলনের জন্য আদালতে আবেদন করেছে পুলিশ।


মামলার বাদি মাহিনুর বেগম বলেন, তানজিলা তার ছেলের সাথে গুরুদাসপুরের মাহি বেকারিতে চাকরি করতেন। কিন্তু আসামি আশরাফুলের সাথে আগে থেকেই তানজিলার পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল। একারণে পরিকল্পিতভাবে তার ছেলে মাফিজুলকে রাতের বেলা বাড়িতে ডেকে নিয়ে হত্যা করেছেন আসামিরা। তিনি আসামিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন।


স্থানীয় কাউন্সিলর শেখ ফরিদ বলেন, মাফিজুলের সাথে তানজিলার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠায় ক্ষিপ্ত ছিলেন পরকীয়া প্রেমিক আশরাফুলও। মূলত পরিকল্পিতভাবে মাফিজুলকে খুন করেছেন আসামিরা।


গুরুদাসপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. উজ্জ্বল হোসেন বলেন, যেখানে লাশটি পুঁতে রাখা হয়েছে, সেখানে পুলিশ পাহারা বসানো হয়েছে।


সিংড়া-গুরুদাসপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, মামলা রজুর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তারা আসামিদের গ্রেফতার করেছেন। পুলিশ হেফাজতে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আদালতের নির্দেশে রবিবার লাশটি উত্তোলন করে ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হবে।


বিবার্তা/জনি/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com