একুশে পদক পাচ্ছেন কবি ‘রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ’
প্রকাশ : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ২০:২৭
একুশে পদক পাচ্ছেন কবি ‘রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ’
মোংলা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ভাষা ও সাহিত্যে অবদান রেখে মরণোত্তর একুশে পদক-২০২৪ পেলেন মোংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান ‘ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো’ গানের স্রষ্টা তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক দ্রোহের কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ।


১৩ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আইরীন ফারজানা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে পদক প্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করা হয়।


বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিককে একুশে পদক-২০২৪ প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সরকার। এ তালিকায় ভাষা ও সাহিত্যে শ্রেণিতে নাম রয়েছে এ সাহিত্যিকের।


কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ ছাড়াও একুশ পদক-২০২৪ প্রাপ্ত অন্যান্যরা হলেন- ভাষা আন্দোলন ক্যাটাগরিতে মৌ. আশরাফুদ্দীন আহমদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হাতেম আলী মিয়া (মরণোত্তর)।


শিল্পকলার বিভিন্ন শ্রেণিতে ১১ জন পেয়েছেন এই পদক। সংগীতে পেয়েছেন জালাল উদ্দীন খাঁ (মরণোত্তর), বীর মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণী ঘোষ, বিদিত লাল দাস (মরণোত্তর), এন্ড্রু কিশোর (মরণোত্তর) ও শুভ্র দেব। অভিনয়ে ডলি জহর ও এমএ আলমগীর, আবৃত্তিতে খান মো. মুস্তাফা ওয়ালীদ (শিমুল মুস্তাফা) ও রূপা চক্রবর্তী, নৃত্যকলায় শিবলী মোহাম্মদ এবং চিত্রকলায় শাহজাহান আহমেদ বিকাশ।


মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ও আর্কাইভিংয়ে কাওসার চৌধুরী, সমাজসেবায় মো. জিয়াউল হক ও আলহাজ রফিক আহামদ। ভাষা ও সাহিত্যে এবার একুশে পদক পেয়েছেন ৪ জন। তারা হলেন লুৎফর রহমান রিটন, মিনার মনসুর ও কবি মুহাম্মদ সামাদ। এছাড়া শিক্ষায় প্রফেসর ড. জিনবোধি ভিক্ষু রয়েছেন এ তালিকায়।


কবি হিসেবে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ সুপরিচিত।১৯৫৬ সালের ১৬ অক্টোবর এই দিনে বরিশালের রেডক্রস হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করেন এই গুণী কবি। তার পৈতৃক নিবাস বাগেরহাটের মোংলা থানার মিঠাখালী গ্রামে। তার প্রকৃত নাম শেখ মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ। রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ নামটি তিনি নিজে গ্রহণ করেন।


মা শিরিয়া বেগম। বাবা শেখ ওয়ালীউল্লাহ ছিলেন চিকিৎসক। রুদ্র ঢাকা ওয়েস্ট অ্যান্ড হাই স্কুল থেকে এসএসসি, ঢাকা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮০ সালে বিএ অনার্স (বাংলা) ও ১৯৮৩ সালে এমএ পাস করেন।


ছাত্রজীবনেই তার দুটি কাব্য ‘উপদ্রুত উপকূল’ (১৯৭৯) ও ‘ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম’ (১৯৮১) প্রকাশিত হয়। এ দুটি কাব্য তাকে কবিখ্যাতি এনে দেয়।


জানা গেছে, মাত্র ৩৫ বছরের (১৯৫৬-১৯৯১) স্বল্পায়ু জীবনে তিনি সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং ভালো আছি ভালো থেকো সহ অর্ধ শতাধিক গান রচনা ও সুর করেছেন। পরবর্তীকালে এ গানটির জন্য তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি প্রদত্ত ১৯৯৭ সালের শ্রেষ্ঠ গীতিকারের (মরণোত্তর) সম্মাননা লাভ করেন। এ ছাড়াও নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।


‘উপদ্রুত উপকূল’ ও ‘ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম’ কাব্যগ্রন্থ দুটির জন্য ‘সংস্কৃতি সংসদ’ থেকে পরপর দুবছর ‘মুনীর চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার’ লাভ করেন। এছাড়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।


অকাল প্রয়াত এই কবি তার কাব্য যাত্রায় যুগপৎ ধারণ করেছেন দ্রোহ ও প্রেম, স্বপ্ন ও সংগ্রামের শিল্পভাষ্য। ‘জাতির পতাকা আজ খামচে ধরেছে সেই পুরোনো শকুন’ এই নির্মম সত্য অবলোকনের পাশাপাশি ততোধিক স্পর্ধায় তিনি উচ্চারণ করেছেন ‘ভুল মানুষের কাছে নতজানু নই’। যাবতীয় অসাম্য, শোষণ ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে অনমনীয় অবস্থান তাকে পরিণত করেছে ‘তারুণ্যের দীপ্ত প্রতীক’-এ। একই সঙ্গে তার কাব্যের আরেক প্রান্তর জুড়ে রয়েছে স্বপ্ন, প্রেম ও সুন্দরের মগ্নতা। দেশ ও জাতির সংকটে রুদ্রের কবিতা হয়ে উঠেছে তারুণ্যের হাতিয়ার।


১৯৯১ সালের ২১ জুন ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক দ্রোহের কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ।


বিবার্তা/জাহিদ/সউদ










সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com