
রাজশাহীতে এক পোস্টমাস্টারের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের স্থায়ী আমানতের (এফডিআর) ৬৫,৯৬,৫৪০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পাশ বহির মাধ্যমে আমানতকারীদের জমাকৃত টাকা সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান না করে সম্পূর্ণ আত্মসাতের অভিযোগে কাটাখালি থানায় তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে। রাজশাহী সদর পোস্টমাস্টার কার্যালয়ের পরিদর্শক মো. মাহফুজুর রহমান বাদী হয়ে এ মামলাটি করেন।
ওই পোস্টমাস্টারের নাম মো. হাসিনুর রহমান (৬০)। তিনি রাজশাহী জিপিও এর হিসাবভুক্ত পোস্টাল বিভাগের আওতাধীন কাটাখালি শ্যামপুর উপ-ডাকঘরের সাব পোস্টমাস্টার। কাটাখালি থানাধীন বেলঘরিয়া এলাকার মৃত মো. হাবিবুর রহমানের ছেলে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, পোস্টমাস্টার মো. হাসিনুর রহমান, কাটাখালী বাজারস্থ শ্যামপুর পোস্ট অফিসের সাব পোস্টমাস্টার হিসেবে তার দায়িত্ব পালনকালীন সময়ে আনুমানিক ২৫ জানুয়ারি, ২০০৪ সাল থেকে ১৬ জানুয়ারি, ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়কালের মধ্যে সরকারি সীল ও রেকর্ডপত্র ব্যবহার করে গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানতের উদ্দেশ্যে জমাকৃত টাকা গ্রহণ করে শুধুমাত্র পাস বহিতে উল্লেখ করে এবং বিভাগীয় অন্য কোন রেকর্ডপত্রে কোন তথ্য লিপিবদ্ধ না করে ও সংশ্লিষ্ট হিসাব অফিসে হিসাব প্রেরণ না করে, নিজ জিম্মায় রেখে ব্যক্তিগত কাজে ব্যয় করে আত্মসাৎ করেছেন।
আত্মসাতের বিষয়টি পোস্টমাস্টার হাসিনুর রহমান নিজেই স্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন পরিদর্শক মাহফুজুর রহমান।
পরবর্তীতে গত ২৫ জানুয়ারি দুপুরে কাটাখালি পোস্ট অফিস থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। হাসিনুর রহমান গ্রেফতারের ১২ দিন পর মঙ্গলবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) বিষয়টি সামনে আসে।
ওইদিন হাসিনুর রহমানের বাসা থেকে ১৪৬টি সাধারণ ও মেয়াদি পাশ বইসহ তিনটি ল্যাপটপ উদ্ধার করে থানা পুলিশ ও পোস্টমাস্টার কার্যালয়ের কর্মকর্তারা বলে জানিয়েছেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আয়ব আলী।
তিনি বলেন, উদ্ধারকৃত পাশ বইয়ে উদ্ঘাটিত টাকার পরিমাণ ৬৫,৯৬,৫৪০ টাকা যা আত্মসাৎ করা হয়েছে মর্মে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
পোস্টমাস্টার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আত্মসাৎকৃত টাকা বিভিন্ন গ্রাহকের নিকট হতে আমানত হিসেবে গ্রহণ করা হতো এবং সরকারি পাশ বইয়ে টাকার পরিমাণ উল্লেখ করে সীল সহি দিয়ে আমানতকারীদেরকে ফেরত দিলেও টাকাগুলো কোষাগারে জমা দিতেন না হাসিনুর রহমান। পরবর্তীতে এফডিআরের মেয়াদ সম্পূর্ণ হওয়ার পর গ্রাহকরা তাদের টাকা উত্তোলনের জন্য পোস্ট অফিসে গেলে হাসিনুর রহমান চালাকি করে তাদের পাশ বই নিজের হেফাজতে নিতেন।
কাটাখালি মাসকাটা দিঘী এলাকার ভুক্তভোগী রুবিনা ও তার স্বামী বজলুর রহমান তিন বছর মেয়াদী ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা শ্যামপুর পোস্ট অফিসে এফডিআর করেছিলেন। রুবিনার মেয়াদ সম্পূর্ণ হয় ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে এবং বজলুর রহমানের মেয়াদ সম্পূর্ণ হয় ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। তাদের লভ্যাংশসহ ১৩,৭০,০০০ টাকা পাওয়ার কথা ছিল। এ টাকা উত্তোলন করতে গেলে তাদের হাত থেকে পাশ বই নিয়ে নেয় হাসিনুর রহমান।
এছাড়াও যে-সকল গ্রাহকের মেয়াদ সম্পূর্ণ হয়েছে তাদের সকলের কাছ থেকে সরকারি পাশ বই সংগ্রহ করে বাসায় নিয়ে যায়। এবং গ্রাহকদের আশ্বস্ত করে বইগুলো সদর অফিসে যাচাই-বাছাই চলছে আপনাদের পাওনাকৃত টাকা প্রদান একটু সময় লাগবে।
সহকারী পোস্টমাস্টার জেনারেল (কল্যাণ) মো. আলী আশরাফ বলেন, ইতোমধ্যে পোস্টমাস্টার জেনারেল এর কার্যালয়, উত্তরাঞ্চল সার্কেলের পক্ষ থেকে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি কর্তৃক তদন্ত কার্যক্রম সম্পাদিত হবার পর আত্মসাৎকৃত টাকার পরিমাণ ও গ্রাহকের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে।
এব্যাপারে কাটাখালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তৌহিদুর রহমান বলেন, জুলাই ২০২৩ থেকে অক্টোবর ২০২৩ পর্যন্ত অফিসটির কপি অব এসও অ্যাকাউন্টে অতিরিক্ত অর্থ হাতে রাখার বিষয়টি যাচাইকালে উল্লিখিত আত্মসাতের ঘটনাটি দৃষ্টিগোচর হয় কর্তৃপক্ষের।
ঘটনাটি সম্পর্কে গ্রাহক মোসা. ঝরনা বেগম (৪১), এফডি ৭৪২২৭, মোসা. রুবিনা বেগম (৪০), এফডি-৫৩৯০২, মো. বজলুর রহমান (৫২), এফডি-৫৭৪১৬, মোসা. মালেকা বেগম (৬৫), এফডি-৭৩৩২৩, মো. মফিজ উদ্দিন (৬৫), এফডি-৪৬৬৬১, রাজশাহীগণ-সহ অন্যান্য গ্রাহকদের আমানতকৃত টাকা আত্মসাতের বিষয়টি বিস্তারিত জানেন।
পোস্ট অফিসে আমানতকারীদের আত্মসাৎ করা টাকা উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে বিবার্তা প্রতিনিধিকে জানান কাটাখালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তৌহিদুর রহমান।
বিবার্তা/রানা/জবা
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]