কুড়িগ্রামে পাট নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছে চাষীরা
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৮:০৬
কুড়িগ্রামে পাট নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছে চাষীরা
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

উৎপাদিত পাট নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে কুড়িগ্রাম অঞ্চলের চাষীরা। পাটের ন্যায মূল্য না পাওয়ায় ফড়িয়া ও পাইকারদের খপ্পরে কম দামে পাট বিক্রি করে লোকসানের মুখে পড়েছে চাষীরা। এ অবস্থায় উৎপাদন খরচও উঠছে না চাষীদের ।


বর্তমানে কুড়িগ্রামের বিভিন্ন হাট বাজারগুলোতে প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮শ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা টাকা পর্যন্ত।


অনুকূল আবহাওয়ায় এবার জেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেও দাম নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছে তারা। উৎপাদন ব্যয়ের থেকে বিক্রি হচ্ছে কম দামে। এতে করে লোকসানের মুখে পড়েছে পাট চাষীরা।



চলতি পাট উৎপাদন মৌসুমে জেলায় ১৭ হাজার ৯শ হেক্টর জমিতে পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। অনুকুলে আবহাওয়ায় এবার লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল হেক্টর প্রতি ২.৫২ মেট্রিক টন।


সরেজমিনে দেখা গেছে, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বড় পাটের হাট যাত্রাপুর। এখানে সপ্তাহে দুইদিনই হাট বসে। প্রতি হাটে প্রায় ২ হাজার থেকে ৩ হাজার মণ পাট বেচাকেনা হয়। জেলার বিভিন্ন এলাকার চাষীরা তাদের পাট বিক্রি করতে নিয়ে আসে এই হাটে। কিন্তু ক্রয় কেন্দ্রে সরাসরি পাট বিক্রির কোন সুযোগ না থাকায় কৃষকরা ফরিয়া ও পাইকারদের খপ্পরে পড়ে উৎপাদিত পাট কম দামেই বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে।


কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের কাজিপাড়া গ্রামের কৃষক মোকসেদুল আলম জানান, পাটের বাজার দেখতে হাটে আসছি। পাটের দাম অনেক কম তো তাই আমার পাট এখনেই আর বিক্রি করবো না। বর্তমানে বাজারে প্রতিমণ পাটের দাম ১৮শ থেকে ২ হাজার টাকা। এই দামে পাট বিক্রি করলে লোকসান হবে। পাটের দাম বারলে বিক্রি করবো।


তিনি আরো বলেন, ১ বিঘা জমিতে পাট আবাদ করতে প্রায় ৯-১০ হাজার টাকা খরচ হয়। আর এক বিঘা জমিতে পাট উৎপাদন হয় ৭ থেকে ৮ মণ। এতো দাম কম হলে তো আর পাট চাষ করা যাবে না। প্রয়োজনে পাটের পরিবর্তে অন্য আবাদ করবো।


নাগেশ্বরী উপজেলার কালীগঞ্জ ইউনিয়নের মাদাইখাল এলাকা থেকে যাত্রাপুর হাটে পাট বিক্রি করতে আসেন কৃষক আনোয়ার হোসেন। তিনি জানন, ৫ বিঘা জমিতে ৩৫ মণ পাট পেয়েছি। মৌসুমের শুরুতে প্রতিমণ পাট ২ হাজার ৮শ টাকায় ২০ মণ বিক্রি করেছি। এখন অবশিষ্ট পাট ১৮শ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। আর প্রতি মণ পাটে নৌকা ভাড়া দিতে হয় ১৫ টাকা। হাটে প্রতি মণ পাটে খাজনা দিত হয় ৫০ টাকা। এর পরেও উৎপাদন খরচ বিবেচনায় লোকসানের হিসেব গুনছেন তিনি।



উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের তালপট্টি এলাকার চাষীদের নিকট থেকে ১৬ মণ পাট কিনে যাত্রাপুর হাটে বিক্রি করতে এসেছেন স্থানীয় পাইকার মনু ফারাজী । তিনি জানান, আমি ২১'শ থেকে ২২'শ টাকা দরে প্রতিমণ পাট কিনছিলাম। আজকে সেই কেনা দামেই বিক্রি করতে হলো। পরিবহন খরচ, কুলি খরচ, হাটের খাজনা হিসেব করলে মুনাফা থাকছে না।


যাত্রাপুর হাটের পাটের প্রান্তিক ফরিয়া ছকমল হোসেন বলেন, প্রতিমণ পাট ১৮শ থেকে ২ হাজার টাকা দরে ক্রয় করছি । কমপক্ষে প্রতিমণ পাটের দাম হওয়ার কথা ২৭শ থেকে ২৮শ টাকা। সে জায়গায় পাটের দাম অনেক কম।
এছাড়াও সদর উপজেলার পাটেশ্বরীহাট ও কাঠালবাড়ীহাট,উলিপুর উপজেলার দুর্গাপুরহাট, এবং ফুলবাড়ী উপজেলার খড়িবাড়িহাটে পাট বেচাকেনার একই চিত্র।


স্থানীয় পাইকার জাহেদুল ইসলাম বলেন, এক সপ্তাহ আগে প্রতিমন পাট ২৫'শ থেকে ২৬'শ টাকা মন দরে বিক্রি হয়েছে। আজকে সেই পাট সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকায় মণ দরে কিনছি। গত হাটে ৮০ মণ পাট কিনেছি। দাম না বাড়লে লোকসান গুণতে হবে। দাম বাড়ার সম্ভাবনাও আপাতত: দেখছি না।


জেলা মুখ্য পাট পরিদর্শকের কার্যালয়ের পাট পরিদর্শক এটিএম খায়রুল হক বলেন, কিছুদিন আগেও পাটের দাম ভালো ছিলো। কিন্তু দ্রুত এই দাম কমে গেছে। দাম কমার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, অধিকাংশ ব্যবসায়ী মিলে পাট সরবরাহের পর পুরো পাওনা টাকা বুঝিয়ে পাননি। তাই ব্যবসায়ীদের হাতে টাকা নাই। এজন্য ব্যবসায়ীরা পাট কেনায় আগ্রহ কমিয়ে দিয়েছে। ফলে পাট নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছে চাষীরা।


জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, আমার ধারণা পাটের আমদানি বেশি থাকার কারণে দামটা একটু কমে গেছে। কৃষকরা যদি পাট কিছুদিন ঘরে রেখে বিক্রি করে তাহলে ভালো দাম পেতে পারে।


বিবার্তা/বিপ্লব/এমজে

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com