সিন্ডিকেট চক্রের নিয়ন্ত্রণে মোংলার কাঁচাবাজার
প্রকাশ : ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৪:২৭
সিন্ডিকেট চক্রের নিয়ন্ত্রণে মোংলার কাঁচাবাজার
মোংলা প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

মোংলায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে কাঁচাবাজার সিন্ডিকেট চক্র। এ চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে পৌর শহরের প্রায় লক্ষাধিক বাসিন্দা। এগারো সদস্যের এ সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেছে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের বাজার। তাদের লাগামহীন মুনাফার কারণে কয়েকগুণ চড়া মূল্যে কাঁচাবাজার ও তরিতরকারি কিনতে বাধ্য হচ্ছেন শ্রমিক অধ্যুষিত এখানকার ক্রেতা সাধারণ। এ চক্রের বিরুদ্ধে যে কেউ মুখ খুললে হেনস্তার শিকার হতে হয়। নিয়মিত মাজার মনিটরিং না থাকায় সংঘবদ্ধ এ চক্রের দৌরাত্ম্য বেড়েইে চলছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।


অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসনকে ম্যানেজ করে দিনের পর দিন কাঁচামাল সিন্ডিকেটের অবৈধ কারবার চলছে। তাই এই সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কার্যকরী তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ক্ষোভ প্রকাশ করে বেশ কয়েকজন ভোক্তা বলেন, রাম রাজত্ব কায়েমের মাধ্যমে এরা অল্পতেই আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে যাওয়ার মতো বিপুল অর্থ-বৃত্তের মালিক বনেছেন। আর চড়া দামে কাঁচা তরিতরকারি কিনতে গিয়ে নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে সাধারণ ক্রেতাদের।


অনুসন্ধানে জানা গেছে, লবণাক্ত অঞ্চল হওয়ায় মোংলা ও আশপাশের এলাকায় মৌসুমি কাঁচামালের উৎপাদন তেমন নেই। আর চাহিদার তুলনায় উৎপাদন না থাকায় মোংলা পৌর কেন্দ্রিক নিত্যপণ্যের কাঁচাবাজারকে ঘিরে বিগত কয়েক বছরে গড়ে উঠেছে ১১ সদস্যের সিন্ডিকেট চক্র। এ চক্রের সদস্যরা হলেন-রফিক, আলু আলম, ফিরোজ, সুমন, কবির, কামরুল, আবজাল, নজরুল, জাহিদ, নাসির ও কালু।


খুলনা, যশোরের সাতমাইল, আঠারোমাইল, কেশবপুর, সাতক্ষীরার তালা, শাহাদাতপুরসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মোংলায় আসে কাঁচামালের তরিতরকারি। বিগত কয়েক বছর আগে ওই সকল এলাকা থেকে পাইকরা এখানে পাইকারি মূল্যে পণ্য সরবরাহ করতেন। কিন্তু নানা প্রভাব বিস্তার ও কারসাজি করে কাঁচামাল ও তরিতরকারির বাজার নিয়ন্ত্রণে নেয় স্থানীয় সিন্ডিকেট চক্র। প্রায় প্রতিটি পণ্যই কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি দাম লিখিয়ে আড়তে মজুদ রেখে খুচরা বিক্রেতাদের সরবরাহ করা হয়। আর খুচরা বিক্রেতারা সিন্ডিকেট চক্রের আড়ত থেকে এসব পণ্য নিয়ে কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়িয়ে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে। এ ছাড়া সিন্ডিকেট চক্রটি দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে যে পণ্য আনে তা মজুদ রেখে বাজারে কাঁচামালের সংকট তৈরি করে। এ সংকট দেখিয়েই নিজেদের সিন্ডিকেট বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে চক্রটি। সিন্ডিকেট চক্রটি খুচরা বাজারে কোন পণ্য কত টাকায় বিক্রি করা হবে তাও নির্ধারণ করে দেয়। বেঁধে দেয়া দামের কমে কেউ পণ্য বিক্রি করলে তাকে নানা ধরনের হয়রানি ও হুমকি প্রদান করা হয়।


এছাড়া গ্রামের গৃহস্থ চাষিরা বাজারে এলে তাদের নিয়মিত বাজারে প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। সপ্তাহে সোম, মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শুক্রবার-এ চার দিন গ্রামের কৃষকরা তরকারি বিক্রি করতে দেওয়া হলেও অন্য তিন দিন তাদের সবজি বিক্রি করা নিষিদ্ধ থাকে। কারণ গ্রামের কৃষকরা কিছুটা কম দামে সবজি বিক্রি করে থাকেন। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় কৃষকরা বাজারে এলে সিন্ডিকেট চক্রটি তাদের মালামাল কেড়ে নিয়ে ইচ্ছামতো দাম ধরিয়ে দিয়ে তাদের বিদায় করে।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দ্রব্যমূল্যের আকাশছোঁয়া দামে দিশেহারা হয়ে পড়েছে নিম্নবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা। বাজারে কাঁচামালের মালামালের সরবরাহ ঠিক থাকলেও দিগুণ-তিনগুণ দামে । হুহু করে বাড়ছে পণ্যের দাম। এ ছাড়াও বাজার সংশ্লিষ্টদের তদারকি না থাকায় আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা।


আলু ৪৫, বেগুন ৯০, কুমড়া ৩৫, ঢেড়শ ৬০, পেঁপে ২৫, কুশি ৫০, পটল ৪০, ঝিঙা ৪০, মুলা ৫০, পাতাকফি ৬০, করলা ৬০, চাল কুমড়া ২০ টাকা, কাচা মরিচ ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।


মোংলা কাঁচাবাজারে সবজি কিনতে আসা আবদুল মজিদ, নার্গিস বেগম ও তরুণ চন্দ বলেন, সকাল বিকাল নিত্য পণ্যের দাম ওঠা-নামা করে এখানে। সিন্ডেকেটের বেঁধে দেয়া মূল্যে সকল দোকানেই কাঁচামাল বিক্রি হয়। আর বিক্রি না হলে ফেলে দেয়া হয় ড্রেনে! সরবরাহ থাকলেও দাম কমে না। স্থানীয় আরও বেশ কয়েকজন ক্রেতা বলেন, সিন্ডিকেট আড়তদারদের কারণেই এ বাজারে দাম বেশি। তারা জানান, আশপাশের বাজারের চেয়ে শহরের প্রধান এ বাজারে সবসময় পণ্যের দাম অনেক বেশি নেয়া হয়। স্বল্প দূরত্বে অন্য কোনো বাজার না থাকায় একান্ত বাধ্য হয়ে এ বাজারে চড়া দামে তরকারি কিনতে এসে নাভিশ্বাস উঠে যায় তাদের।


সিন্ডিকেট চক্রটির সদস্যরা সকলেই পৌর বাজারের আড়তদার। এ চক্রটিই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে পুরো বাজার। এদের অনেকেই কাঁচামালের ব্যবসার নামে সিন্ডিকেট করে অল্পদিনেই বিপুল অর্থ, গাড়ি ও বাড়ির মালিক হয়েছে। যখন যে রাজনৈতিক নেতা প্রভাবশালী থাকে তখন তাকে ম্যানেজ করে দিনের পর দিন সিন্ডিকেট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে চক্রটি। তাই সবসময় ধরাছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায় তারা।


এ বিষয়ে কথা হয় মোংলা কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলম তালুকদার বলেন, বাজারে কোন সিন্ডিকেট নেই, সবই উড়ো কথা। তারা পাইকারিতে যে দামে পণ্য কেনেন তার চেয়ে সামান্য বেশি দামে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন।


আর খুচরা বিক্রেতারা বলেন, আড়ত থেকে যে দর দেওয়া হয়, তার চেয়ে সামান্য কিছু লাভে আমরা বিক্রি করে থাকেন। দাম বাড়ানো কিংবা কমানোর বিষয়টি আড়ৎদারদের হাতে। তবে মাঝে মধ্যে বাজার মনিটরিংয়ে স্থানীয় প্রশাসন অভিযানে নামে। তখন দু’একজনকে সামান্য জরিমানা ছাড়া তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না।


এ বিষয় উপজেলা বাজার মনিটরিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর দাস বলেন, বাজার মনিটরিংয়ের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ ও নিয়মিত বৈঠক করা হয় যাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায় থাকে। তাছাড়া অভিযোগ উঠলেই অভিযান পরিচালনা ও জরিমানাও করা হয়। এ ছাড়া রশিদের মাধ্যমে ক্রয় বিক্রয়ের জন্য বিক্রেতা ও ক্রেতাদের পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে।


বিবার্তা/জাহিদ/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com