কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের গোয়ালগ্রাম গণহত্যা দিবস আজ (৬ সেপ্টেম্বর)। রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকহানাদার বাহিনী অতর্কিত হামলা চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধাসহ ১৭ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে গুলি করে হত্যা করে। গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন দুই মুক্তিযোদ্ধাসহ অসংখ্য নারী-পুরুষ। জ্বালিয়ে দেওয়া গ্রামের অসংখ্য ঘর বাড়ি। দীর্ঘ ৫২ বছরেও শহীদরা স্বীকৃতি না পাওয়ায় তাদের মনে দানা বেঁধেছে ক্ষোভ।
১৯৭১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাতে একদল মুক্তিযোদ্ধা দৌলতপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের গোয়ালগ্রাম ফরাজী বাড়িতে অবস্থান নেয়। মুক্তিযোদ্ধাদের অবস্থানের খবর পেয়ে রাত আনুমানিক ২টার দিকে স্থানীয় রাজাকারদের সহযোগিতায় পাকহানাদার বাহিনী ওই বাড়ি ঘিরে ফেলে অতর্কিত গুলি চালায়। গুলির শব্দে ঘুমন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের কেউ পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন। আবার কেউ পাল্টা গুলি বর্ষন করে শহীদ হন। পাকহানাদার বাহিনীর নির্মম গুলিবর্ষণে ফরাজী বাড়িতে অবস্থান নেয়া মুক্তিযোদ্ধাসহ ওই পরিবারে ১৭ জন শহীদ হন। তাদের গণকবরে সমাহিত করা হয় ওই বাড়ির পিছনের বাগানে। পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা গুলি করে গণহত্যা চালিয়ে ক্ষ্যান্ত হয়নি, সেদিন আগুন জ্বালিয়ে দেয় ওই গ্রামের অসংখ্য বাড়ি ঘরে। সেদিনের স্মৃতি বর্নণা করতে দিয়ে আবেগে আপ্লুত ও কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন যুদ্ধে অংশ নেওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আফফান। আবেগে আপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, সেদিনের দুঃসহ স্মৃতি আজও ভুলতে পারিনি। আমার চোখের সামনে সহযোদ্ধাদের শহীদ হতে দেখেছি। গ্রামের অসংখ্য ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয় পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকাররা। তিনিও চান সেদিন যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাঁদের বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। এমন দাবি করেছেন ওইদিন যারা প্রাণে বেচেঁ গেছেন তাদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোয়াজ্জেম হোসেন ও আব্দুস সাত্তার।
পাকহানাদার বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞ ও দুঃসহ স্মৃতি আজও ভুলতে পারেননি ওই সময়ের ৮বছর বয়সী গুলিবিদ্ধ জয়তুন নেছা। তার বাম বাহুতে গুলি লেগে সেদিনের শিশু জয়তুন নেছা প্রাণে বাঁচলেও পরিবারের সবাইকে হারিয়ে আজও তিনি বয়ে বেড়াচ্ছেন দুঃসহ যন্ত্রণা। স্বাধীনতার ৫২ বছর পর জয়তুন নেছা তার পরিবারের সকল শহীদদের স্বীকৃতির পাশাপাশি তাকেও দেওয়া হোক যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি। এমনটাই দাবি করেছেন তিনি সরকারের কাছে।
১৯৭১ সালের আজকের দিনে যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাদের অনেকেই আজও পাননি স্বীকৃতি ও মর্যাদা। দীর্ঘ ৫২ বছরের যাতনা বুকে নিয়ে অন্তত শেষ বয়সে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি নিয়ে মরতে চান শহীদ পরিবারের সদস্যরা। এমনটাই দাবি এলাকাবাসী ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের।
গণকবরস্থলের শহীদদের স্মরণে স্মৃতিফলক নির্মান করেছেন কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন। এদিন সেখানে মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান শহীদ পরিবরের সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ।
বিবার্তা/শরীফুল/মাসুম
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]