সিগারেটের সূত্র ধরে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন
প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২৩, ১৫:০২
সিগারেটের সূত্র ধরে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

ঢাকা জেলার আশুলিয়া বিমল চন্দ্র মণ্ডলের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মো. হাফেজ নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। দুইটি সিগারেটের সূত্র ধরে স্বল্প সময়েই এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয় পিবিআই ঢাকা জেলা।


পিবিআই জানায়, অনেক দিন ধরে বিদেশ যাওয়ার জন্য টাকা জোগাড় করছিলেন মো. হাফেজ। টাকার জন্য দুইটি রিকশা চুরি করে বিক্রি করেছে সে। সর্বশেষ গত ১৬ এপ্রিল বিমল চন্দ্র মণ্ডল নামের একজনের বাসায় চুরি করতে গিয়ে তাকে হত্যা করেন হাফেজ।


রবিবার (২৫ জুন) দুপুরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই সদরদপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পিবিআই ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. কুদরত-ই-খুদা।


তিনি বলেন, নিহত বিমল চন্দ্র মন্ডল স্ব-পরিবারে আশুলিয়ার জামগড়া মনির মার্কেট এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় বিমল বাসায় থাকেন এবং জীবিকার তাগিতে তার স্ত্রী এবং কন্যা গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চাকরি করেন।


গত ১৬ এপ্রিল প্রতিদিনের মতো বিমলের স্ত্রী-মেয়ে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে চলে যায়, বিমল একাই বাসায় অবস্থান করছিলেন। পরে ডিউটি শেষে অফিস ছুটি হওয়ার পর বিকেলে সাড়ে ৪ টায় বিমলের মেয়ে পূর্ণিমা রানী মণ্ডল বাসায় গিয়ে তার বাবাকে রক্তাক্ত অবস্থায় মুখের ভেতরে কাপড় কাটার কাচি (সিজার) ঢুকানো অবস্থায় দেখতে পায়।


এ ঘটনায় নিহতের স্ত্রী পারুল অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা করেন। আশুলিয়া থানা পুলিশ ১৭ এপ্রিল থেকে ৪ জুন পর্যন্ত মামলাটি তদন্ত করে। গত ৪ জুন পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে পিবিআই ঢাকা জেলাকে মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয়।


তিনি বলেন, ঘটনার ৬ মাস আগে বিমল স্ট্রোক করেন। তখন থেকে তিনি ধুমপান ছেড়ে দেন। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের ঘটনার দিন নিহত বিমল বাসায় সিগারেটের দুটি শেষাংশ পাওয়া যায়।


আর এ সিগারেটের শেষাংশের সূত্র ধরেই তদন্ত অগ্রসর হতে থাকে এবং বেশ কয়েকজনকে সন্দেহের তালিকায় আনা হয়। তার মধ্যে মো. হাফেজকে সন্দেহের তালিকায় ১ নম্বরে রেখে তার বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া শুরু হয়।


তদন্তের এক পর্যায়ে পিবিআই তথ্য-প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ২২ জুন বিকেল ৫টার দিকে আশুলিয়ার জিরানী বাজার এলাকা থেকে মো. হাফেজকে গ্রেফতার করা হয়।


হাফেজকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি জানান, নিহত বিমল ও হাফেজের স্ত্রী একই গার্মেন্টেসে চাকরি করেন। এ সুবাদে হাফেজ মাঝে মধ্যেই নিহতের বাসায় যাতায়াত করতেন। ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৭টায় হাফেজ যান বিমলের বাসায়।


ওই বাসার লোকজন সবাই গামেন্টসে চলে যাওয়ায় বাসা ফাঁকা ছিল। হাফেজ ও বিমল চন্দ্র একসঙ্গে টিভি দেখে এবং খাওয়া-দাওয়া করে। পরে বিমলকে দিয়ে সিগারেট নিয়ে আসার জন্য বাসার নিচে দোকানে পাঠান হাফেজ।


পুলিশ সুপার বলেন, ওই সময়ে বিমলের স্ত্রীর অলংকার ও টাকা পয়সা খোঁজাখুঁজি করতে থাকে হাফেজ। সিগারেট নিয়ে বাসায় চলে এসে দেখেন হাফেজ ঘর অগোছালো করে কি যেন খোঁজাখুঁজি করছে। চুরির বিষয়টি বিমল দেখে ফেলায় হাফেজ টেবিলে থাকা কাপড় কাটার কাচি দিয়ে প্রথমে বিমলের গলায় ডান পাশে আঘাত করে।


পরে বিমলের মুখে ঢুকিয়ে হত্যা করে বাসা থেকে একজোড়া স্বর্ণের বাঁধানো শাখা, দুই জোড়া কানের দুল এবং দুই জোড়া চুড়িসহ আলমারিতে থাকা ৯ হাজার ৫২০ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।


গ্রেফতারের পরের দিন হাফেজকে আদালতে পাঠানো হলে সে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।


এসপি মো. কুদরত-ই-খুদা বলেন, হাফেজ বিদেশে যাওয়ার জন্য টাকা জোগাড় করছিল। এর আগে বিদেশ যাওয়ার জন্য টাকা জোগাড় করার জন্য দুইটি অটোরিকশা চুরি করে বিক্রি করে। সর্বশেষ বিমলের বাসায় চুরি করতে গিয়ে বিমলকে হত্যা করে।


এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, হাফেজের চুরি করা স্বর্ণালংকার বিক্রিতে যারা সাহায্য করেছেন তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।


বিবার্তা/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com