জনগণের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ আত্মসাতসহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার ৩নং চন্ডিগড় ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ড ইউপি সদস্য (মেম্বার) মো. সিরাজুল ইসলাম তোতা মিয়ার বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর গণস্বাক্ষরের এক লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই ওয়ার্ডের ভুক্তভোগীরা।
জানা গেছে, ৩নং চন্ডিগড় ইউনিয়ন পরিষদের ২নং ওয়ার্ডে মেম্বার পদে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তার অনিয়ম, দুর্নীতির কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ হচ্ছে সাধারণ জনগণ। সরকারি বিভিন্ন ভাতার কার্ড করে দিতে জনগণের কাছ থেকে বেশি অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। তার চাহিদা মোতাবেক টাকা দিতে না পারলে ভাতা পাওয়ার উপযোগী হওয়া সত্ত্বেও মেলে না ভাতার কার্ড। এতে করে প্রকৃত সুবিধাভোগীরা সরকারের সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
মেলাডহর গ্রামের ডালিয়া বেগম,পারভীন আক্তার,ফাতেমা খাতুন,রাবিয়া খাতুনসহ আরো অনেকেরই কাছ থেকেই চালের কার্ড/বয়স্কভাতার কার্ড করিয়ে দেয়ার কথা বলে জনপ্রতি অগ্রিম ১ হাজার থেকে ১৩ শত টাকা নিয়েছেন। এছাড়াও গভীর নলকূপ (সাবমার্সেবল) পাইয়ে দেয়ার কথা বলে বিভিন্নজনের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে আদায় করাসহ অনেক অভিযোগ রয়েছে ইউপি সদস্যর বিরুদ্ধে।
মেলাডহর গ্রামের গৃহবধূ মৌসুমি আক্তার বলেন, আমি গর্ভবতী ভাতার কার্ড করার জন্য মেম্বারের কাছে গেলে তিনি আমাকে বলেন, তাকে কিছু টাকা দেয়া লাগবে। তাকে ২ হাজার ৫০০ টাকা দিয়েছি, কিন্তু আমার কার্ড হয়নি।
ফাতেমা খাতুন বলেন, আমার স্বামী অসুস্থ হয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই বিছানায় পড়ে আছে। স্বামীর বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য মেম্বারের কাছে গেলে তিনি টাকা দাবী করেন। তাকে ১ হাজার টাকা দিয়েছি। পরবর্তীতে আবারও ২০০ টাকা নেন। কিছুদিন পর আবারও ১০০ টাকা নিয়েছেন। কিন্তু ১ বছর হয়ে গেছে তারপরও কার্ড পাচ্ছি না।
ধানশিরা গ্রামের বাসিন্দা বিলকিস বেগম বলেন, চালের কার্ডের জন্য মেম্বারের কাছে গেলে তিনি বলেন, কার্ড করে দিবেন কিন্তু ৪ হাজার টাকা অগ্রিম দিতে হবে। তারপর আমি ১হাজার ৫শত টাকা ওনাকে দিয়েছি। কিন্তু সে টাকা তিনি নেন নাই। তার ৪ হাজার টাকাই লাগবে । পরবর্তীতে আর চালের কার্ডটিও করে দেননি। তিনি আরও বলেন, কোনো কাজের জন্য কেউ স্বাক্ষরের জন্য গেলেও টাকা দিতে হয়। নয়তো তিনি স্বাক্ষর করেন না।
অপর বাসিন্দা আবুল কাশেম বলেন, সাবমার্সেবল এনে দিবেন বলে মেম্বার আমার কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা নিয়েছেন ১ মাস আগে। কিভাবে তিনি সাবমার্সেবল দিবেন এটা তিনিই জানেন! এ বিষয়ে ভুক্তভোগিরা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মো. সিরাজুল ইসলাম তোতা মিয়া মুঠোফোনে বলেন,"আমি কোনো টাকা-পয়সা নেইনি। অভিযোগগুলোর প্রমাণ নাই। আর নলকূপের টাকা ওই লোক দিয়েছেন। এনে দিতে না পারলে টাকা ফেরত দিয়ে দিবো।গভীর নলকূপের জন্য আপনি কত টাকা করে নিয়েছেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যিনি টাকা দিয়েছেন উনাকেই জিজ্ঞেস করুন উনিই বলুক।
৩নং চন্ডিগড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এমদাদুল হক (আলম) সরকার বলেন, পরিষদের প্রতিটি মিটিং এ মেম্বারদের এই সকল বিষয়ে সর্তক করা হয়। আমার পরিষদের ঐ সদস্যের ব্যপারে আমার কাছে এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ আসেনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান বলেন, অভিযোগ পেয়েছি বিষয়টি তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিবার্তা/রফিক/সউদ/এসবি
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]