দুই কোটি টাকা লোপাট!
অনিয়ম-দুর্নীতির আখড়া চট্টগ্রাম বিআরটিএ, নিবন্ধনে নীতিমালা লঙ্ঘন!
প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৩, ১৮:২৯
দুই কোটি টাকা লোপাট!
জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম
প্রিন্ট অ-অ+

ফোর স্ট্রোক থ্রি হুইলার (সিএনজি) সার্ভিস নীতিমালা-২০০৭ লঙ্ঘন করে মেট্টো এলাকায় অতিরিক্ত সিএনজি নিবন্ধন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ‘বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) চট্টগ্রামের বিরুদ্ধে। এই সুবাদে চট্টগ্রাম ও ঢাকা অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট দালাল চক্র প্রায় ২ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে.


ঢাকা এবং চট্টগ্রাম মহানগরের রাস্তায় শৃঙ্খলা আনতে, সিলিং ঠিক রাখতে সিএনজি চলাচল ও নিবন্ধনের জন্য একটি নীতিমালা করা হয়। নীতিমালা অনুযায়ী ঢাকা এবং চট্টগ্রামে ১৩ হাজার করে মোট ২৬ হাজার সিএনজি চলাচল করার কথা। সে অনুযায়ী অতিরিক্ত সিএনজি নিবন্ধন দেওয়া বন্ধ রাখার কথা নীতিমালায় রয়েছে।


দীর্ঘদিন যাবত দুই মহানগরে ফোর স্ট্রোক থ্রি হুইলার নিবন্ধন প্রক্রিয়া বন্ধ আছে। আইনগতভাবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে ১৩ হাজারের অধিক সিএনজি থাকবে না। যাত্রী চাহিদায় অতিরিক্ত গাড়ির প্রয়োজন হলে নীতিমালা সংশোধন করে নতুন নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু করবে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে, নিজেদের পকেট ভারী করতে সিএনজি প্রতি মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ৪০১টি সিএনজি নিবন্ধন দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।


এই বিষয়ে সাধারণ সিএনজি ড্রাইভার ও চট্টগ্রাম অটোরিকশা অটোটেম্পু শ্রমিক লীগের নেতারা দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। পাশাপাশি গত ২৭ এপ্রিল বিআরটিএ চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন চট্টগ্রাম অটোরিকশা অটোটেম্পু শ্রমিক লীগের (রেজি.নং-১৪৬৯) সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম খোকন।


অভিযোগে উল্লেখ আছে, ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ধাপেধাপে মেয়াদোত্তীর্ণ সিএনজি চালিত ফোর স্ট্রোক থ্রি-হুইলার অটোরিকশা রাস্তা থেকে তুলে তার বদলে রাস্তায় নতুন অটোরিকশা নিবন্ধন দেয় বিআরটিএ। চট্টগ্রামে ২০০১, ২০০২, ২০০৩, ২০০৪ মডেলের প্রস্তুতকৃত ১১,৮২৯টি স্ক্র্যাপকৃত সিএনজি চালিত থ্রি-হুইলার অটোরিক্সা নতুন নিবন্ধন দেয় চট্টগ্রাম বিআরটিএ।


২০২১ সালের মার্চ মাসে ২০০৫ মডেলের ১ হাজারটি অটোরিকশা স্ক্র্যাপ করে নতুন করে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। বাকি ১৭১টি গাড়ি ভাঙ্গার অপেক্ষায় রয়েছে। চট্টগ্রাম বিআরটিএ’র মেট্রো সার্কেল অটোরিক্সা সার্ভিস নীতিমালা ২০০৭ উপেক্ষা করে স্ক্র্যাপকৃত ১২,৮২৯টি সিএনজি চালিত থ্রি হুইলার অটোরিকশার স্থলে ১৩,২৩০টি অটোরিকশা নতুন করে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। এতে ধরা পড়ে ৪০১টি অটোরিকশা অতিরিক্ত নিবন্ধন দেয়া হয়েছে।


তারমধ্যে ২০০১, ২০০২, ২০০৩, ২০০৪ ও ২০০৫ মডেলের সর্বশেষ সিরিজ ছিল চট্ট মেট্টো-থ-১২-৫১৮৫ পর্যন্ত। রিপ্লেসমেন্টের পর নতুন নিবন্ধনের সিরিজ শুরু হয়। চট্ট মেট্রো-থ-১২-৫১৮৬ থেকে চট্ট মেট্রো-থ-১২-৯৯৯৯ পর্যন্ত ৪৮১৩ টি আর ১৩ সিরিজের নতুন নিবন্ধনের সংখ্যা ৮৪১৭টি। সর্বমোট নতুন নিবন্ধনের সংখ্যা ১৩,২৩০টি, ভাঙ্গার অপেক্ষায় রয়েছে ১৭১টি।


এতে দেখা যায় নীতিমালার বাইরে অতিরিক্ত ৪০১ টি সিএনজি চালিত থ্রি হুইলার রেজিস্ট্রেশন নাম্বার দেওয়া হয়েছে। ১৭১টি থ্রি হুইলার অটোরিক্সা স্ক্র্যাপ কার্যক্রম শেষ না করে অটোরিকশা সার্ভিস নীতিমালা ২০০৭ সংশোধন না করে ৪০১টি নতুন নিবন্ধন দেওয়া মালিক-শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।


এ ধরনের দুর্নীতির সাথে যুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোরতম আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে উচ্চ আদালতের শরণাপন্ন হবেন বলেও পিটিশনে উল্লেখ করেছেন।


অভিযোগের বিষয়ে জানতে, বিআরটিএ চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক শফিকুজ্জামার ভুঁইয়া, বিআরটিএ চট্টগ্রাম মেট্রো সার্কেল-১ এর উপ পরিচালক তৌহিদুল হোসেন ও বাংলাদেশ রোড ট্র্যান্সপোর্ট অথরিটির (বিআরটিএ) চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারের মোবাইলে একাধিকবার কল করা হলেও তারা সকলেই এ বিষয়ে কিছু বলতে পারে না বলে জানান।


মেট্টো সিএনজি চালক মাহমুদুল হক ও ফরুক উদ্দিন বিবার্তাকে বলেন, ‘গতবারেও সব কাগজ ঠিক থাকলে বিআরটিএ নিবন্ধন করেছে সিএনজি প্রতি ৪০ থেকে ৪২ হাজার টাকা বেশিতে। অতিরিক্ত ৪০১টি বেশি নিবন্ধন করেছে প্রতি সিএনজি থেকে ৫০-৬০ হাজার টাকা গোপনে করে বেশি নিয়েছে। সে হিসাব মতে ২ কোটি ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে কারা নিয়েছে, কাদের পকেট ভারি হয়েছে সবাই জানে। কিন্তু উপায় নেই। কেউ মুখ খুলবে না।’


শ্রমিক নেতা নজরুল ইসলাম খোকন বিবার্তাকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিআরটিএ ১৩ হাজার পুরাতন মেয়াদউত্তীর্ণ অটোরিকশা প্রতিস্থাপনের আড়ালে অতিরিক্ত নাম্বার দেওয়া শুরু করেছে। আমরা রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছি, বেশ কয়েকবার তারা আমাদেরকে মৌখিক ভাবে জানিয়েছেন ২৩০টির মতো অটোরিকশা নিবন্ধন অনলাইন ডাটা ভুল হওয়ার কারণে অতিরিক্ত দেখা যাচ্ছে। অথচ আমরা হিসেবে দেখেছি বর্তমানে ৪০১টি অটোরিকশা নিবন্ধন অতিরিক্ত করেছেন।’


এ বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয়ের মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী বিবার্তাকে বলেন, ‘ঢাকা ও চট্টগ্রাম শহরে নীতিমালার বাইরে (১৩ হাজারের বেশি) সিএনজি অটোরিকশা নিবন্ধন দেওয়ার কোন সুযোগ নাই। অভিযোগ যেহেতু উঠেছে আমরা তদন্ত করে দেখব। যদি কেউ আইন ভঙ্গ করে এসব অপকর্মে জড়িত থাকে তবে প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’



বিবার্তা/রোমেল/এনএস


সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com