পেশা বদলে জুতার কারখানায় সফল মজনু সরকার
প্রকাশ : ১৩ এপ্রিল ২০২৩, ১০:৩২
পেশা বদলে জুতার কারখানায় সফল মজনু সরকার
গুরুদাসপুর (নাটোর) প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

নাটোরের গুরুদাসপুর পৌরসদরের চাঁচকৈড় বাজারপাড়া মহল্লায় মজনু সরকারের বাস। আর্থিক দৈন্যতায় বেশিদূর পড়াশোনা হয়নি তার। বাবাকে সাহায্য করতে ১০ বছর বয়সে কাঠমিস্ত্রির কাজ শুরু করেন। কাঠের কাজে কঠোর পরিশ্রম দেখে বাবা সেখান থেকে সরিয়ে মোবাইল সার্ভিসিং কাজে যুক্ত করেন। কাজ শিখে মাসিক পরিশ্রমিকে অন্যের দোকানে জুটে চাকরী। এরমধ্যে বিয়ে ও পরিবারের সদস্য সংখ্যা বাড়ে মজনুর। বেতন স্বল্পতায় এ পেশা ছেড়ে ঢাকায় চলে যান তিনি। সেখানে এক জুতা তৈরীর কারখানায় ৩মাস কাজ শিখে নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেন জুতার কারখানা। যেখানে তৈরি হচ্ছে ছেলে মেয়েদের বিভিন্ন ধরনের ।


বুধবার(১২ এপ্রিল) সকালে সরোজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মজনু বসে জুতার জোড়া মিল করছেন, এ কাজে তার স্ত্রী তাকে সহযোগীতা করছে। পাশে ছেলে জিহাদ চাপ মেশিনে জুতা কাটছেন। এমন অবস্থায় কথা হয় মজনুর সাথে জানান, বাসায় জমানো ৮০ হাজার টাকা দিয়ে জুতা তৈরির কারখানা চালু করেন তিনি। উদ্যোগের নাম দিলেন ‘জিহাদ সু ’। ৯ মাসের মাথায় ব্যবসায় আরও ১ লক্ষ টাকা বিনিয়োগে পরিধি বাড়ে। বাধ্যহয়ে মাসিক ৪ হাজার টাকায় একটি বাসা ভাড়া নিয়ে সেখানে কারখানা স্থানান্তর করেন। বর্তমানে পরিবারের ৫ সদস্য এবং দৈনিক ৪শ টাকা হাজিরায় আরও ৩ জনের কর্মসংস্থান হয়েছে সেখানে।


মজনু সরকার আরও জানান, তিনটি মেশিনে তিনধাপ কাজ শেষে বিক্রির উপযোগী হয়। প্রথমে ঢাকা থেকে আসা উপকরণগুলো কাটিং মেশিনে সাহায্যে ছোট বড় বিভিন্ন আকৃতিতে কাটা হয়। বাড়তি টেকসই করতে লেস লাগিয়ে হাতে সেলাই করা হয়। এরপর আকর্ষনীয় করতে প্রিন্ট মেশিনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের লগোসহ নানান ডিজাইনের প্রিন্ট করা হয়। প্রিন্ট শেষে আঠা লাগিয়ে শুকিয়ে জোড়া লাগানো হয়। চাপ মেশিনের মাধ্যমে দুটি অংশের জোড়াকে আরও শক্ত মজবুত করা হয়।শেষধাপে ফিনিশিং মেশিনের মাধ্যমে ফিনিশিং দিয়ে বাজারে বিক্রির উপযোগী করে প্যাকেটজাত করে হয়।


মজনুর কারখানায় তৈরি স্থানীয় বাজার ছাড়াও পাশ্ববর্তী পাবনা, সিরাজগঞ্জ, নাটোরের চাটমোহর, তাড়াশ, বড়াইগ্রাম, সিংড়া উপজেলায় পাইকারি বিক্রি হয়। প্রতিমাসে প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ ডজন তৈরি হয় । আর্থিক দৈন্যতায় ব্যবসা সম্প্রসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান তিনি। সরকারি অথবা বেসরকারি আর্থিক সহযোগীতা পেলে কারখানা বড় পরিসরে সম্প্রসারণ করে এখানে চামড়াসহ সবধরনের জুতা তৈরীর স্বপ্ন আছে তার। যেখানে অনেক বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব হবে বলে জানান মজনু সরকার।


বর্তমানে এ পেশায় খরচবাদে মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় হচ্ছে তার।


উদ্যোক্তা মজনু সরকার আরও জানান,‘শুরুটা অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিলো। ধৈর্য্যধরে এ পেশায় যুক্ত রয়েছি। পরিবারের সদস্যরা আন্তরিকতার সাথে কাজ করে। বাজারে এখন বেশ সাড়া পাচ্ছি। আমার ‘জিহাদ সুজ’ এর জুতা বাংলাদেশের সব জায়গায় পৌঁছে দিতে চাই।’


জুতা কারখানা পরিদর্শনে আসা যুবক মাসুদ রানা জানান,অল্প পুজিতে এমন কারখানা দেখে তিনি অনুপ্রানিত হয়েছেন। চাকরীর পেছনে না ছুটে একটি কারখানা গড়ে নিজে বেকারত্ব ঘুচিয়ে অন্যদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চান।


গুরুদাসপুর পৌরমেয়র শাহনেওয়াজ আলী জানান, মজনু একজন সফল ক্ষুদ্রশিল্প উদ্যোক্তা। তার কারখানায় উৎপাদিত জুতাগুলোর গুনগতমান ভালো। এখানে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। তার সফলতা অন্যদের অনুপ্রানীত করছে।


বিবার্তা/ জনি পারভেজ/ মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com