টাঙ্গাইলে মৃত থেকে ‘জীবিত’ হলেন ২৭ ব্যক্তি, অপেক্ষায় আরো ২০৩ জন
প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৩, ১৭:১৯
টাঙ্গাইলে মৃত থেকে ‘জীবিত’ হলেন ২৭ ব্যক্তি, অপেক্ষায় আরো ২০৩ জন
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার আলমনগর ইউনিয়নের কামারকুমুল্লী গ্রামের জয়গন বেগমের অবস্থা রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্পের কাদম্বিনীর মতো হয়েছে। ৬৫ বছর বয়সী এই বৃদ্ধা বিধবা ভাতা উঠাতে গেলে উপজেলা সমাজসেবা অফিস থেকে তাকে জানানো হয়, ভাতা দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ তার জাতীয় পরিচয়পত্রে তিনি মৃত। পরে নির্বাচন অফিসে খোঁজখবর নিলে জানতে পারেন হালনাগাদ ভোটার তালিকায় তাকে মৃত দেখানো হয়েছে। সেই থেকে এই বিধবা নারীর বিধবা ভাতা বন্ধ রয়েছে।


শুধু জয়গন বেওয়াই নন, উপজেলায় নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে হালনাগাদ করা ভোটার তালিকায় অনেককেই জীবিত মানুষকে মৃত হিসেবে দেখানো হয়েছে। ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নানা কাজে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। এ ধরনের ভুলের সঙ্গে সম্পৃক্ত যারা, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন এই সব ভুক্তভোগীরা।


জানা গেছে, ইতোমধ্যে উপজেলার ২৭ জন মৃত ব্যক্তি জীবিত হয়েছেন। আরও ২০৩ জনের প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে!


জয়গন বেওয়ার নাতি রুমা (২৫) আক্তার জানান, নির্বাচন অফিস থেকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়। পরে আলমনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সঙ্গে যোগাযোগ করে তার কাছ প্রত্যয়নপত্র নিয়ে দাদিকে সশরীরে নির্বাচন অফিসে গিয়ে প্রমাণ করতে হয় তিনি জীবিত আছেন।


আলমনগর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. রুহুল আমীন জানান, যাদের নির্বাচন অফিস থেকে যারা ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে দায়িত্ব দিয়েছেন, তারা দায়িত্ব অবহেলা করেছেন। ফলে এই ইউনিয়নের অনেক জীবিতকে মৃত হিসেবে দেখানো হয়েছে।


আলমনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মোমেন জানান, ভোটার তালিকা হালনাগাদের তথ্যে ভুলের বিষয়টি আমি জানি। নির্বাচন অফিস থেকে ডাটাবেজে ভুল করেছে। ভুক্তভোগীদের জাতীয় পরিচয়পত্রে এমন ভুলগুলো সংশোধনে সহযোগিতা করছি।


গোপালপুর পৌরসভার মেয়র মো. রকিবুল হক সানা জানান, যাদের ভোটার তালিকায় মৃত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, তারা পৌরসভায় যোগাযোগ করলে আমরা ঠিক করে দিচ্ছি।


এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান জানান, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করার জন্য মাঠকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা সবাই ছিলেন স্কুলশিক্ষক-শিক্ষিকা। বাড়ি বাড়ি ঘুরে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করেন তারা। তাদের কাজের নিয়মাবলি শিখিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তারা দায়িত্বে অবহেলা করেছেন। জীবিতদের মৃত তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন।


তিনি আরও জানান, ২০০৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত উপজেলায় ২৭ জন ব্যক্তিকে মৃত দেখানো হয়েছে। যাদের জীবিত অবস্থায় তথ্য হালনাগাদে মৃত দেখানো হয়েছে, তারা জীবিত ফরমে আবেদন করলে সেগুলো সংশোধন করে দেওয়া হচ্ছে।


তিনি জানান, এ ছাড়া ২০২২ সালের তথ্য হালনাগাদে আরও ২০৩ জনের তথ্যে মৃত উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করে সংশোধনের কাজ চলছে। ইতোমধ্যে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। অনুমতি পেলে এদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।


এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও) আসফিয়া সিরাত জানান, বিষয়টি জেনেছি এবং নির্বাচন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


প্রসঙ্গত, উপজেলায় ৭টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা মিলে মোট ভোটার ২ লাখ ২৭ হাজার ২৩৫। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ১৪ হাজার ২২ জন ও নারী ভোটার ১ লাখ ১৩ হাজার ৭১২ জন।


বিবার্তা/ইমরুল/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com