কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ভানারোবেন ওমেন বেনিফিট মহিলা উন্নয়ন (ভিডব্লিউবি) এর চাল বিতরণে উৎকোচ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বস্তার নামে টাকা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এভাবে টাকা নেওয়ার কোন নিয়ম নেই বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা। একই সাথে পরিষদের ভিতরেই কেনা ও বিক্রি করা হচ্ছে সুবিধাভুগীদের দেওয়া চাল। ঘটনাটি ঘটেছে রমনা মডেল ইউনিয়ন পরিষদে।

এদিকে সুবিধাভুগীরা বলছেন, চালের সাথে দেওয়া বস্তার মূল্য হিসেবে নেয়া হচ্ছে এই টাকা।

ইউপি চেয়ারম্যানের দাবী, চালের বস্তার জন্য নেওয়া হয়েছে এই টাকা। অপরদিকে চাল কেনা ও বিক্রির বিষয়টি তিনি কোনো ভাবেই প্রতিকার করতে পারছেন না ।

১৪ মার্চ মঙ্গলবার বেলা ১২টা থেকে ১২ঃ ৩০ মিনিট পর্যন্ত উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়ন পরিষদে সরেজমিনে গেলে এমন চিত্র চোখে পড়ে। সুবিধাভোগীরা চাল নিয়েই সাথেসাথেই বিক্রি করছেন। অপর দিকে এই চাল কার্ডের বিপরীতে নেয়ার জন্য দিতে হচ্ছে মাথা পিছু ২০ থেকে ৩০ টাকা। এতে দেখা যায় গড়ে প্রায় ২৫ হাজার টাকা উত্তোলন হবে ওই ইউনিয়ন পরিষদেই।

কিসের টাকা নেওয়া হচ্ছে শ্রমিক মাইদুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, চেয়ারম্যান টাকা নিতে বলেছে। এ বিষয়ে আপনারা চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলতে পারেন।

এসময় সুবিধাভোগী রাহেনা বেগম বলেন, ৩০ কেজি করে চাল পেয়েছি। ভালো চালই দিয়েছে। কিন্তু তারা আমার থেকে ৩০ টাকা নিয়েছেন চালের বস্তার জন্যে।

অপর সুবিধাভোগী খালেদা ও ইয়েরন জানান, কেনো টাকা নিচ্ছে জানি না। সবার থেকেই এই টাকা নিচ্ছে। আমাকেও দিতে বলেছে। তাই আমিও দিয়েছি।

ঘটনাস্থলে এই প্রতিবেদকে দেখে এক সুবিধাভুগী চালের ব্যবসায়ী ভেবে ১১শ টাকা চাল দরদাম করে। অপরদিকে পরিষদে চাল বিতরণের স্থানের ঠিক সামনেই কয়েকজন ব্যবসায়ীকে চাল কিনতে দেখা গেছে। তারা ৩০ কেজি চালের বস্তা ১০৫০/১১৫০টাকা দিয়ে ক্রয় করছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সুবিধাভোগী একজন মহিলা বলেন, তিনি ৩০ কেজি চালের বস্তা ১১০০ টাকায় বিক্রি করেছেন। শুধু ওই মহিলাই নয় এমন আরো অনেকেই এভাবেই চাল উন্মুক্তভাবে দরদাম করে চাল বিক্রি করছেন। চাল ক্রেতাদের সাথে কথা বলতে গেলে তারা কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
চিলমারী উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলার ভানারোবেন ওমেন বেনিফিট মহিলা উন্নয়ন (ভিডব্লিউবি) আওতায় ৩ হাজার ২২৩ টি সুবিধাভোগীদের মাঝে এই কার্ড বিতরণ করা হয়েছে।

এর মধ্যে রাণীগঞ্জ ইউনিয়নে ৫শ ৬৮ টি, নয়ারহাটে ৩শ ৬০টি, থানাহাট ৭শ ৬০টি, চিলমারী ইউনিয়নে ৩শ ২৫টি, অষ্টমীরচর ৫শ ১৫টি এবং রমনা মডেল ইউনিয়নে ৬শ ৯৫টি কার্ড বিতরণ করা হয়েছে।

এর আগে সকালে উপজেলার থানাহাট ও রমনা মডেল ইউনিয়নে ১হাজার ৪৫৫জনের মাঝে চাল বিতরণের উদ্বোধন করেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. রুকুনুজ্জামান শাহীন।

এদিকে, শুরুর দিনে এমন অনিয়মের অভিযোগ উঠায় ভানারোবেন ওমেন বেনিফিট মহিলা উন্নয়ন (ভিডব্লিউবি) প্রকল্পের বিরুদ্ধে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ওই ইউনিয়নের দায়িত্বরত ট্যাগ অফিসার ও কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি অফিসিয়াল কাজে বাইরে এসেছি এর মধ্যেই ইউপি চেয়ারম্যান আমার সাথে কথা না বলে মালামাল বিতরণ শুরু করেছেন। আমি টাকা নেওয়ার বিষয়টি শুনেছি। এরপর চাল বিতরণ বন্ধ রাখতে ইউপি চেয়ারম্যানকে বলেছি।

টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাম আশেক আকা বলেন, বস্তার মূল্য হিসেবে এই টাকা নেওয়া হচ্ছে। চাল বিক্রির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা চেষ্টা করছি চাল যাতে কেউ বিক্রি না করে। আজ যেহেতু প্রথম দিন। তবে এরপর থেকে পুলিশের সহযোগীতা নিয়ে চাল বিতরণ করা হবে, যাতে কোনো ব্যবসায়ী পরিষদের ভিতর থেকে এইধরণের কার্যক্রম করতে না পারেন।

এবিষয়ে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোছা.সোহেলী পারভীন বলেন, বস্তার টাকা নেওয়া কোনো নিয়ম নেই। আপনাদের মুখে শোনার পর আমি লোক পাঠিয়েছি। খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিবার্তা/রাফি/জবা