টাঙ্গাইল কোর্ট চত্বরে কাজির ছড়াছড়ি, চলছে অবাধে বাল্যবিবাহ!
প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২৩:৪৩
টাঙ্গাইল কোর্ট চত্বরে কাজির ছড়াছড়ি, চলছে অবাধে বাল্যবিবাহ!
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

টাঙ্গাইল জেলা সদর আদালত চত্বরে ভুয়া কাজির ছড়াছড়ি হওয়ায় অবাধে চলছে বাল্যবিবাহ। অধিক লাভের আশায় এসব ভুয়া কাজিদের পরোক্ষ মদদ দিচ্ছে একটি শক্তিশালী চক্র। তাদের পশ্রয়ে প্রকাশ্যে বাল্য বিয়ে পড়াতে সমর্থ হচ্চে এসব কাজিরা। এই এলাকার জন্য নির্ধারিত মুলকাজির ডিআর বই ব্যবহার না করে অন্য এলাকার কাজির ডি আর বই নিয়ে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের বিয়ে পড়ানো হচ্ছে হরহামেশাই। তাদের দৌরাত্ব্যে বঞ্চিত হচ্ছে অত্র এলাকার জন্য নিবন্ধন প্রাপ্ত কাজি।


সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সখিপুর উপজেলার নলুয়া বাছেদ খান উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির এক ছাত্রীর বিয়ে পড়াচ্ছেন মো. শাহীন নামের এক কাজি। তিনি দীর্ঘ পনেরো  বছর যাবত কোন রকম বৈধ অনুমোদন ও কাগজপত্র ছাড়াই কোর্ট চত্বরে বিয়ে পড়িয়ে আসছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়,তিনি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার গালা ইউনিয়নের আব্দুল হাই কাজির ডি আর বইসহ মধুপুর, মির্জাপুর ও সখিপুরে ডিআর বই ব্যবহার করে অধিক টাকার বিনিময়ে অপ্রাপ্ত বয়স্কদের বিবাহ পড়াচ্ছেন। এসব বাল্যবিয়ে পড়িয়ে টাঙ্গাইল শহরের একটি ক্লিনিকের অংশীদারসহ কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। তার ছত্রছায়ায় একাধিক কাজি কোর্ট চত্বরে দেদারছে চালাচ্ছে বিবাহ রেজিস্ট্রি ও তালাক নিবন্ধন। অধিক মুনাফার আশায় আদালত চত্বরে কর্মরত বেশ কিছু  আইনজীবী  তাদের সেরেস্তা ব্যবহার করতে দিচ্ছেন এই সব কাজিদের । ফলে আইনজীবীদের সেরেস্তা  ব্যবহার করেই এসব বাল্যবিবাহ পড়ানো হচ্ছে। 


এ বিষয়ে তদারকির জন্য জেলা রেজিস্ট্রারের উপর দায়িত্ব থাকলেও অজ্ঞাত কারণে জেলা রেজিস্ট্রার কার্যকরী পদক্ষেপ নেয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। কোর্ট চত্বর এলাকা ব্যবহার করে অবাধে চলছে ভুয়া জন্মসনদ, নকল কাবিননামা আর জাল সিল-স্বাক্ষরে বিয়ে ও তালাক রেজিস্ট্রি। জেলার বিভিন্ন উপজেলাসহ প্রত্যান্ত অঞ্চল থেকে আসা অপ্রাপ্ত বয়স্কদের নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেফিট করে প্রাপ্তবয়স্ক বানিয়ে বিয়ে রেজিস্ট্রি করা হচ্ছে। গ্রাম অঞ্চলে এক শ্রেনীর দালালদের মাধ্যমে গুঞ্জণ আছে কোর্ট চত্বরে গেলে অভিভাক ছাড়াই বিয়ে পড়ানো যায়। এর সুযোগ নিচ্ছে অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোর-কিশোরী ও ঘর পালানো প্রেমিক-প্রেমিকারা।


এসব কাজি তাদের প্রয়োজনে নকল কাবিননামা, তালাকনামা ও বয়স প্রমাণের এফিডেফিটের ঘোষণাও দিচ্ছেন। এতে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে যেমন আতঙ্কে রয়েছেন তেমনি পরকীয়ার বলি হচ্ছে রেমিটেন্স যোদ্ধা (প্রবাসীদের) সংসার।


অভিযোগ প্রসঙ্গে মো. শাহিন মিয়া জানান, তার কোন বৈধ কাজির কিম্বা বিবাহ পড়ানোর অনুমোদন নেই। তিনি সাব কাজি হিসেবে কাজ করেন। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের বিবাহ পড়ান তিনি,তবে বয়স প্রমানে কাগজপত্র জমা না দিলে কাবিনের সার্টিফাইড কপি দেন না তিনি। তিনি আরো জানান, আমি ছাড়াও আরো অনেকে কোর্ট চত্বরে এ বিয়ে পড়ান তারা হচ্ছে-মো. জয়নাল আবেদিন, মো. হামিদুল ইসলাম,আকরাম হোসেন ও কায়সার আহম্মেদ।


টাঙ্গাইল জেলা সদর ১নং ওয়ার্ডের ভারপ্রাপ্ত কাজি আব্দুল সামাদ জানান, এ বিষয়ে জেলা রেজিষ্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আশাকরি জেলা রেজিষ্ট্রার যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করিবেন।


টাঙ্গাইল জেলা রেজিষ্ট্রার মো. মাহফুজুর রহমান খান’র জানান, এ বিষয়ে লিখিতসহ একাধিক অভিযোগ পেয়েছি। টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মহাদয়ের পরামর্শক্রমে ব্যবস্থা গ্রহণ  করা হবে। 


বিবার্তা/ইমরুল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com