ইয়াবাসহ আটক, টাকার বিনিময়ে এসআই-এএসআইয়ের রফাদফা
প্রকাশ : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২০:২৯
ইয়াবাসহ আটক, টাকার বিনিময়ে এসআই-এএসআইয়ের রফাদফা
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা মাদকদ্রব্যসহ আটক সিএনজি চালিত অটো রিকশা টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দুই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ঘটনাটি জানাজানি হলে তোলপাড় শুরু হয়। প্রশ্ন উঠে মাদক বিরোধী অভিযানে কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।


কসবা থানা ও স্থানীয় সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৪ ফেব্রুয়ারি  সন্ধ্যার  কিছুটা আগে উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের নোয়াগাও মোড়ে মাদক উদ্ধারে অভিযান চালায় থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খায়রুল ইসলাম ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মুখলেছুর রহমান। 


অভিযানকালে একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা তল্লাশির জন্য আটক করেন। এসময় চালক সহ সিএনজিতে থাকা তিন যুবকের মধ্যে একজন দৌড়ে পালিয়ে যান৷ পুলিশ সিএনজি চালক বাহার মিয়া ওরফে মনা'র দেহ তল্লাশি করে আন্ডারওয়্যারের ভেতর লোকানো ১৫২ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে। এই ঘটনায় বাহার মিয়া ওরফে মনা (৩০) ও তার সাথে থাকা সোহেল মিয়া (২২) নামের আরেক যুবককে আটক করে পুলিশ। পাশাপাশি সিএনজি থেকে দৌড়ে পালিয়ে যাওয়া মো. হাকিম (২৯) কে আটক করা হয়। তারা আটককৃত ৩জনই জেলা শহরের গোকর্ণঘাট এলাকার বাসিন্দা।


পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ইয়াবার মূল মালিক হাকিম এবং সহযোগী মনা ও সোহেল। ঘটনাস্থলে জব্দ তালিকা করার পর স্থানীয় দুইজনের সাক্ষী  হিসেবে,  স্বাক্ষর নিয়ে পুলিশ সিএনজিসহ ইয়াবা এবং আটক তিন মাদক ব্যবসায়ীকে থানায় নিয়ে আসেন।


নাম না প্রকাশ করার শর্তে একটি সূত্র জানায়, থানায় আসার পর সিএনজিচালক মনার বাড়িতে খবর দেওয়া হয়। তার পরিবারের সদস্যরা গেলে মাদক পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত সিএনজিটি ছাড়িয়ে নিতে অভিযানে থাকা এএসআই মুখলেছ ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন।


পরবর্তীতে রাতে ৩০ হাজার টাকা মুখলেছের হাতে দেওয়া হয়, এসময় মধ্যস্থতা করেন রাসেল নামের এক সোর্স। টাকা পাওয়ার পর মধ্যরাতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা রিকশাটি ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপর দিন ৫ ফেব্রুয়ারী ১৫২ পিস ইয়াবাসহ হাকিমকে প্রধান আসামী করে সিএনজি চালক মনা ও সোহেলের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়ের করেন এসআই খায়রুল ইসলাম। আদালতে আসামীদের সাথে পাঠানো হয় জব্দ তালিকা। সেই তালিকা মাদকের কথা লিখা থাকলেও সিএনজি চালিত অটো রিকশার কথা উল্লেখ নেই। জব্দ তালিকায় সাক্ষি হিসেবে মো. জাহাঙ্গীর ও সাইফুল ইসলাম নামের দুইজনের নাম এবং স্বাক্ষর রয়েছে।


এই বিষয়ে জব্দ তালিকায় স্বাক্ষী হিসেবে থাকা সাইফুল ইসলাম বলেন, আমার নাম সাক্ষি হিসেবে এএসআই মুখলেছ ভাই দিয়েছে। উনি আমার পূর্ব পরিচিত। আমি বাড়িতে ফেরার সময় সে দিন দেখা হয়। এসময় সিএনজিসহ তিনজনকে আটক করে। তল্লাশি করে একজনের আন্ডারওয়্যারের ভেতরে ইয়াবা পাওয়া যায়। পরে সিএনজি সহ তিনজনকে তারা নিয়ে যায়। আমি স্বাক্ষী থাকতে চাইনি, মুখলেছ ভাই বলেছে সমস্যা হবে না। আমার এলাকার জাহাঙ্গীর ভাইকেও সাক্ষী করা হয়।


মো. জাহাঙ্গীর নামে অপর সাক্ষী বলেন, আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম। পুলিশ সিএনজিসহ তিনজনকে ইয়াবাসহ আটক করে।


এ বিষয়ে কসবা থানা পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মুখলেছুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমি এই বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না। আপনি এসআই খায়রুল সাহেবের সাথে কথা বলুন।' আপনিও তো এই অভিযানে খায়রুল সাহেবের সাথে ছিলেন এবং আপনার হাতেই টাকা দেওয়ার প্রমাণ আছে, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'এই অভিযানের মামলার বাদি খায়রুল সাহেব। তেমন কিছু হয়নি, উনি ভাল বলতে পারবেন।'


থানার উপপরিদর্শক খায়রুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার সাথে এএসআই মুখলেছ ছিলেন। কোন সিএনজি আমরা পাইনি। ইয়াবাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছি।


এই বিষয়ে জানতে চাইলে কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মহিউদ্দিন বলেন, এটা ছিল ইয়াবার মামলা৷ আমি এই বিষয়টি অবগত নই, খোঁজ নিচ্ছি।


বিবার্তা/আকঞ্জি/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com