শিশুর কান্নায় জোড়া লাগলো বিচ্ছেদের সংসার!
প্রকাশ : ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০৯:৩২
শিশুর কান্নায় জোড়া লাগলো বিচ্ছেদের সংসার!
রাজশাহী প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

আদালতেই বিয়ে হলো যৌতুকের মামলার আসামি ও বাদী যুবক-যুবতীর। আট মাস আগে সামান্য ভুল-বোঝাবুঝির কারণে বিয়ের সংসার ভেঙে যায় তাদের।


বৃহস্পতিবার (২ ফেব্রুয়ারি) রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এ এই বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ের সময় আদালতে বাদী জান্নাতের মা–বাবা ও আসামী শিমুলের বাবা উপস্থিত ছিলেন।


বাদীপক্ষের আইনজীবী রেবেকা সুলতানা গণমাধ্যমকে ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।


রেলওয়ে কর্মচারী শিমুল পারভেজের (২২) সঙ্গে ২০২১ সালের ২ এপ্রিল জান্নাত ফেরদৌসের বিয়ে হয়। রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালী পৌর এলাকায় তার বাড়ি। সন্তান জন্মের দুই মাস আগেই শিমুল পারভেজ-জান্নাত ফেরদৌস দম্পতির বিচ্ছেদ হয়। বিচ্ছেদের কয়েক দিন পর গত ১২ অক্টোবর জান্নাত ফেরদৌসের মা আদালতে যৌতুকের মামলা করেন।


ছয় মাসের শিশুটির বাবা যখন আসামির কাঠগড়ায়। সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা মায়ের কোলে শিশুটি তখন কাঁদছিল। এই দৃশ্য নজরে পড়ে আদালতের। তখন আগে বিবাহবিচ্ছেদ হওয়া বাদী ও আসামীর মামলা আপস করে তাৎক্ষণিকভাবে আদালতেই আবার তাদের বিয়ের আয়োজন করেন। তাতে জোড়া লাগে ভেঙে যাওয়া সংসার।


আদালত জানতে পারেন, সামান্য ভুল-বোঝাবুঝি থেকে আট মাস আগে তাদের সংসার ভেঙে যায়। আইনি জটিলতায় জড়িয়ে তাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছিল। এই অবস্থায় আদালতের একটি মানবিক উদ্যোগে দুই কার্যদিবসেই মামলা নিষ্পত্তি হয়ে যায়।


বৃহস্পতিবার এ মামলার জামিন শুনানিকালে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদুজ্জামান লক্ষ্য করেন, সাক্ষীর কাঠগড়ায় মামলার বাদী জান্নাত ফেরদৌসের কোলে ছয় মাসের ফুটফুটে একটি শিশু কাঁদছে। আসামির কাঠগড়ায় ২২-২৩ বছরের এক তরুণ শিমুল পারভেজ; যার সঙ্গে বাদীর আট মাস আগে বিয়ের পর সামান্য ভুল বোঝাবুঝিতে ছাড়াছাড়ি হয়েছে। ইতোমধ্যে তা কার্যকরও হয়েছে।


আদালতে জান্নাতের মা-বাবা এবং শিমুলের বাবা উপস্থিত ছিলেন। শুনানিকালে জান্নাতের চোখে পানি ছিল এবং শিমুলও মাথা নিচু করে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। দুই পক্ষের আইনজীবী পক্ষে-বিপক্ষে তাদের বক্তব্য দেন। কিন্তু আদালতের দৃষ্টি পড়ে থাকে অসহায় শিশুটির দিকে। আদালত জানতে চান শিশুটির ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে বাদী ও আসামি আপস করতে চান কি না।


তখন জান্নাত ও শিমুল পরস্পরের কিছু দোষত্রুটি উল্লেখ করতে শুরু করেন। এই পর্যায়ে আদালত নিজ দায়িত্বে সামাজিক প্রেক্ষাপটে তাদের উদ্দেশে কিছু উপদেশমূলক কথা বলেন। একপর্যায়ে তারা দুজনই আপস করতে রাজি হন। কিন্তু তা অবশ্যই আদালতের মধ্যস্থতায় করতে চান। এ সময় দুই পক্ষের আইনজীবীর অনুরোধে বিচারকাজ শেষে আদালত কক্ষেই উভয় পক্ষের আইনজীবী, অভিভাবকেরা ও বার সমিতির সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে কাজি ডাকেন। আদালতের ভেতরেই এক লাখ টাকা দেনমোহর নির্ধারণ করে ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক পুনরায় তাদের বিয়ে দেয়া হয়। আদালত সবাইকে মিষ্টিমুখ করান।


সবশেষে আদালতের বিচারক স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই তার খাস কামরায় ডেকে নিয়ে সুন্দর করে সংসার করার উপদেশ দিয়ে শিশুটিকে কোলে নিয়ে কিছুক্ষণ আদর করেন। আদালতের এই মানবিক উদ্যোগে বাদী, আসামি, আইনজীবী, আদালতের পেশকার, পিয়ন ও ম্যাজিস্ট্রেট সকলেই খুশি হন।


বাদীপক্ষের আইনজীবী রেবেকা সুলতানা বলেন, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদুজ্জামান আদালতে যোগদানের পরই তিনি বিভিন্ন মামলায় মানবিক আচরণ, সুন্দর ব্যবহার ও আন্তরিক মধ্যস্থতায় অনেক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করে যাচ্ছেন। তিনি মানবিক বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তার আন্তরিক প্রচেষ্টায় আদালত কক্ষে এই ব্যতিক্রমী বিয়ের আয়োজনের মাধ্যমে একটি সংসার যেমন জোড়া লাগল, তেমনি শিশুটির ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত হলো, ফিরে পেলো তার পরিবার।


বিবার্তা/বিএম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com