করোনাভাইরাস মহামারী ঠেকাতে বিশ্বের সরকারগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ জোরদার করেছে। এ ধারাবাকিতায় বাংলাদেশেও নেয়া হয়েছে সময় উপযোগি পদক্ষেপ। এ জন্য বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) সকাল থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের মানুষকে ঘরে অবস্থান করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেই নির্দেশনা অনুযায়ি সকাল থেকে সবাই ঘরে অবস্থান করেছেন। এতে পাল্টে গেলে রাজধানী ঢাকার চিত্র। তীব্র যানজটের নগরী এখন একদম ফাঁকা। সকাল থেকে নিরব নিস্তব্ধ হয়ে পড়েছে পুরো নগরী। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে এবং বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
জানা গেছে, গত ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের উহানে প্রথম শনাক্ত হয় করোনাভাইরাস। বর্তমানে ওই রোগ মহামারি আকার ধারণ করেছে। করোনাভাইরাস মহামারী ঠেকাতে বিশ্বের সরকারগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ জোরদার করায় বুধবার বিশ্বের ৩০০ কোটির বেশি মানুষ লকডাউন অবস্থায় রয়েছে। এই মহামারীতে বিশ্বে ২০ হাজারের বেশী লোকের মৃত্যু হয়েছে।
ওই ভাইরাস বাংলাদেশেও আঘাত এনেছে। গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম ওই ভাইরাস শনাক্তা করা হয়। এরপর থেকে রাজধানীবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েন। তবে ওই ভাইরাস মোকাবেলায় সরকারি ও বেসরকারিভাবে নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্কুল-কলেজ বন্ধের পাশাপাশি অনেক অফিসও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাই ঢাকা শহর ছেড়ে রাজধানীবাসী গ্রামে ছুটে গেছে। আর যারা আছেন; তারাও বাসায় অবস্থান করেছেন। তাই পুরো রাজধানী একদম ফাঁকা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বুধবার থেকে রাজধানীর বাসিন্দারা গ্রামে যাওয়া শুরু করেন। গতকাল পর্যন্ত অনেকেই নিরাপদ আশ্রয়ের খুঁজে গ্রামে অবস্থান করেন। ফলে রাজধানীর একটি বড় অংশ পরিবার-পরিজন নিয়ে চলে গেছেন গ্রামের বাড়িতে।
রাজধানীর পান্থপথ, কাওরান বাজার, মগবাজার, ফার্মগেট, পশ্চিম তেজতুরী বাজার, তেজকুনি পাড়া, তেজগাঁও শিল্পা অঞ্চল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মানুষের আনাগোনা একদম কম। এছাড়াও পাড়া-মহল্লার দোকান-পাটগুলো রয়েছে বন্ধ। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, করোনার জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে সকালে দুই একটি দোকান খোলা হয়েছি। পরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপতা থাকায় সেই দোকানগুলোও বন্ধ রাখা হয়েছে।
পশ্চিম তেজতুরি বাজারের নিরাপত্তা কর্মী আব্দুল মতিন। তিনি বিবার্তাকে জানান, আজ সকালে তাদের পাড়ায় কয়েকটি দোকান খোলা হয়েছি। পরে পুলিশ এসে সেগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। এরপর থেকে কেউ কোনো দোকান খুলেনি।
তিনি আরো জানান, এলাকার মানুষ সকাল থেকে কেউ বাসা থেকে বের হচ্ছে না। আর কেউ বের হলেও তাকে বুঝিয়ে আবার বাসায় ফিরে দেয়া হচ্ছে। একই অবস্থা রাজধানীর পুরান ঢাকা, মতিঝিল, উত্তরা, গুলশান, ধানমিন্ড, মিরপুর এলাকায়ও।
পুনার ঢাকার বাসিন্দা উজ্জ্বল সরকার। তিনি বিবার্তাকে বলেন, আমাদের এলাকায় সকাল থেকে কেউ বাহিরে যাচ্ছে না। সবাই বাসায় অবস্থান করেছেন। আমরাও ভাই বোন সবাই বাসায় অবস্থান করেছি। গত দুই দিন থেকে কেউ বাহিরে যাইনি।
ধানমন্ডির বাসিন্দা সেলিম আহমেদ বিবার্তাকে বলেন, সকাল থেকে সেই এলাকায় কোনো গাড়ি চলাচল করেছে না। এছাড়াও সেই এলাকার প্রতিটি বাসিন্দা বাসায় অবস্থান করেছেন। আমাদের এলাকা একদম নিরব, নিস্তব্ধ রয়েছে।
এদিকে, বিশ্ব মহামারী করোনা ভাইরাস থেকে সম্মানিত ঢাকা মহানগরবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নগরীর বিভিন্ন স্থানে জীবাণুনাশক ঔষধ ছিটিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।
ট্রাফিক পূর্ব বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. সাহেদ আল মাসুদ জানান, করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জনস্বার্থের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পণ্যবাহী যানবাহনসহ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত যানবাহনে বাধ্যতামূলকভাবে জীবাণুনাশক পদার্থ দ্বারা পরিষ্কার করা হচ্ছে। আপনারা জরুরী প্রয়োজন ব্যতীত বাসা থেকে বের হবেন না। দেশপ্রেমিক হিসাবে সরকারী আদেশ মান্য করুন। আমরা আপনাদের জন্য ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় আছি, আপনারা ঘরে থেকে নিজ দায়িত্ব পালন করুন। আপনি সচেতন তো জাতি সুরক্ষিত।
বিবার্তা/খলিল/জহির
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]