
রাজধানীর কল্যাণপুরের নতুন বাজার বস্তি। ওই বস্তিতে ১০টি সেকশন রয়েছে। শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) মধ্যরাতে ওই বস্তির ৭ নম্বর সেকশনে আগুন লাগে। মুহূর্তেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় সব। ওই বস্তিতে বেশিরভাগ মানুষ ৩০ বছর ধরে বসবাস করছেন। ৩০ বছরের লালিত সব স্বপ্নই রাঁতের আধাঁরে আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। শনিবার (৩১ অক্টোবর) ঘটনাস্থল ঘুরে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাত ১০টা ৩ মিনিটের সময় নতুন বাজার বস্তিতে আগুন লাগে। খবর পেয়ে একে একে ফায়ার সার্ভিসের ১৫টি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। এরপর রাত ১১টা ১০ মিনিটের সময় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। রাত ২টা ৫ মিনিটের সময় আগুন পুরোপুরি নেভাতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিস। এ সময় আনোয়ার হোসেন (২১) ও আক্তার হোসেন (১৯) নামের দুইজন দগ্ধ হন। পরে তাদের উদ্ধার করে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসক জানিয়েছে তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আনোয়ারের শরীরের ৭৫ শতাংশ ও আক্তার হোসেনের শরীরের ৪০ শতাংশ পুড়ে গেছে।
তবে কি কারণে আগুন লেগেছে তা তদন্তের পরই বলা যাবে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মো. সালেহ উদ্দিন বলেন, পানির যথেষ্ট সমস্যা ছিলো। আমাদের পানিবাহী গাড়ির ওপর নির্ভর করতে হয়েছে। এটা নিয়ে একটি কমিটি হবে। তদন্ত কমিটি আগুন লাগার কারণ এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বলতে পারবে।
শনিবার বস্তিতে গিয়ে দেখা গেছে, সহায়-সম্বল হারিয়ে অনেকেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খোলা আকাশের নিচে বসে রয়েছেন। এছাড়া অনেকেই ছাইয়ের স্তূপে দাঁড়িয়ে সবাই কী যেন খুঁজছেন। তখনও সেখানে আগুনের তাপ। নিজের পোড়া ঘর থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আব্দুল মালেক বলেন, ‘আগুনের এই তাপ আর কতটুকু ক্ষতি করবে। যা করার তা তো করেছে। ছাইয়ে কী হারানো সম্পদ মেলে, মেলে না!’
মহিউদ্দিন নামের এক বসিন্দা বিবার্তাকে জানান, তার গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলায়। দীর্ঘ দিন ধরে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে এই বস্তিতে থাকেন। পেশায় একজন নির্মাণ শ্রমিক। গতকাল আগুন লাগার সময় ঘরের বাইরে ছিলেন। এ জন্য ঘর থেকে কিছুই বের করতে পারেনি তিনি। কান্না জড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, চোখের সামনেই সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
মো. রাসেল নামের এক ব্যক্তি বিবার্তাকে জানান, দীর্ঘ ৩০ বছর আগে তার বাবা-মা বরিশালের ভোলা থেকে ঢাকা আসেন। ঢাকা এসে নতুন বাজার বস্তিতে বাসা ভাড়া করেন।
রাসেলের মা কুহিনুর বেগম জানান, নান্নু মিয়া নামের এক ব্যক্তির ভাঙ্গারির দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। আশপাশের বেশিরভাগ ঘর টিনের থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আগুনে তার প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
কুহিনুর বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার ৩০ বছরের সব স্বপ্নই শেষ। আর কিছুই বলার নেই।
নান্নু মিয়ার বোন শান্তি বেগম জানান, তারা টিনসেটের দোতলা বাড়িতে থাকতেন। নিচ তলায় ভাঙ্গারি দোকান ছিল। রান্না করার জন্য তারা গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার করতেন। সেই গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয়েই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে হবে জানান তিনি।
এদিকে, এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য গভীর দুঃখ ও সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম। ডিএনসিসির প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা এ এস এম মামুন জানান, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি পরিবারকে মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের পক্ষ থেকে জরুরিভিত্তিতে পাঁচ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে। এছাড়া তার পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য সেখানে পর্যাপ্ত খাবার ও পানি সরবরাহের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, অগ্নিকাণ্ডের স্থানে ডিএনসিসির অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প ও মোবাইল টয়লেট স্থাপন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সার্বক্ষণিক তদারকির জন্য মেয়র ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর দেওয়ান আবদুল মান্নানকে দায়িত্ব দিয়েছেন।
বিবার্তা/খলিল
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]