শেয়ারবাজারে পতন থামার লক্ষণ নেই, নিঃস্ব বিনিয়োগকারীদের হাহাকার
প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২৪, ১৬:৩২
শেয়ারবাজারে পতন থামার লক্ষণ নেই, নিঃস্ব বিনিয়োগকারীদের হাহাকার
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

টানা দরপতন চলছে দেশের পুঁজিবাজারে। দিন যতই যাচ্ছে লোকসানের পাল্লা ততই ভারী হচ্ছে। অন্যদিকে দাম পড়তির মুখেও বাজারে শেয়ার বিক্রির চাপ অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। কেউ আরও দর হারানোর আশঙ্কায় দ্রুত প্যানিক সেল করছেন। কারও কারও শেয়ার আবার মার্জিন ঋণের বাধ্যবাধকতায় ফোর্সড সেলের মুখেও পড়ছে। এর পরও অনেক ক্ষেত্রেই কেনার মতো ক্রেতা মিলছে না। ক্রেতাশূন্য বাজারে এখন বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ারের দামও হু-হু করে কমছে। পতনের ধাক্কায় সিংহভাগ পুঁজি হারিয়ে বিনিয়োগকারীদের নাভিশ্বাস তৈরি হয়েছে।


ফলে বাড়ছে বিনিয়োগকারীদের আর্তনাদ । নগদ অর্থ বিনিয়োগ করে কেউ পথে বসছেন, বিশেষ করে মার্জিন ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করা বিনিয়োগকারীরা আম-ছালা উভয়ই হারাচ্ছেন। কেউ আবার দাম বাড়বে আশায় দীর্ঘকাল অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।বর্তমান পুঁজিবাজারের অবস্থা ২০১০ সালের ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে।


আসন্ন ইদুল ফিতর । ঈদের আগে কিছুটা শেয়ার বিক্রির চাপ থাকে। মুনাফা না করতে পারলেও অনেকেই মূল পুঁজি তুলে নেন ঈদের ব্যয় মেটানোর জন্য।তবে এ বছর পরিস্থিতি ভিন্ন। মুনাফা দূরের কথা, ঈদের আগে শেয়ার বিক্রি করে মূল পুঁজি উত্তোলন করাই প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।এমন পরিস্থিতি বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে।


বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘদিন যাবত একটি চক্র অস্বাভাবিক সেল প্রেসার দিয়ে শেয়ারবাজারকে অস্থির করে তুলছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ সবাই বিষয়টি জানে। কিন্তু কেউ কিছুই করতে পারছে না।


তাঁদের দাবি, নিয়ন্ত্রক সংস্থার কয়েক কর্তার চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে শেয়ারবাজারে বড় বিনিয়োগকারীদের পক্ষ-বিপক্ষ তৈরি হয়েছে। বিপক্ষ পক্ষের লোকজনদের শক্তিমত্তা বেশি হওয়ায় তারা ধারাবাহিকভাবে শেয়ারবাজারে পতন ঘটাচ্ছে।


অন্যদিকে, কর্তাব্যক্তিদের চুক্তির পক্ষে যারা রয়েছেন, তাদের বাজার ধরে রাখাার দৃশ্যমান কোনো ভূমিকা নেই। তারা কেবল সুবিধাই নিয়েছেন, কিন্তু সাহায্য করার কোনো তৎপরতা তাদের নেই। যে কারণে বাজার ঠেকানোর কেউ নেই। প্রতিদিন বাড়ছে ফোর্স সেল। ফোর্স সেলের চাপে শেয়ারবাজারের এখন বেহাল দশা। রীতিমতো লন্ডভন্ড।


তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত ১৮ জানুয়ারি ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের দিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ছিল ৬ হাজার ৩৩৬ পয়েন্ট। আজ বুধবার (২৭ মার্চ) লেনদেনশেষে এসে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৬২ পয়েন্ট। ফ্লোর প্রত্যাহারের পর সূচক কমেছে ৫৭৪ পয়েন্ট।


অন্যদিকে, ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পর গত ১১ ফেব্রুয়ারি ডিএসই’র সূচক ছিল ৬ হাজার ৪৪৭ পয়েন্ট। আজ লেনদেনশেষে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৭৬২ পয়েন্ট। এই সময়ে সূচক কমেছে ৬৮৫ পয়েন্ট।


বুধবারের বাজার পর্যালোচনা


সপ্তাহের তৃতীয় কার্যদিবস বুধবার (২৭ মার্চ) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) মূল্য সূচক ৭১ পয়েন্ট কমেছে। তবে লেনদেন কিছুটা বাড়লেও ৩২১ কোম্পানির দর পতনে হয়েছে।


বাজার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের দিনের চেয়ে ৭১ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ৫ হাজার ৭৬২ পয়েন্টে। আর ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১৪ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ১ হাজার ২৫২ পয়েন্টে এবং ডিএসই–৩০ সূচক ১২ পয়েন্ট কমে অবস্থান করছে ২ হাজার ১২ পয়েন্টে।


দিনভর লেনদেন হওয়া ৩৯৬ কোম্পানি ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে দর বেড়েছে ৩৮ টির, দর কমেছে ৩২১ টির এবং দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৭ টির।


ডিএসইতে ৫৩৮ কোটি ৭৯ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। যা আগের কার্যদিবস থেকে ৯৩ কোটি ২৬ লাখ টাকা বেশি। এর আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৪৪৫ কোটি ৫৩ লাখ টাকার ।


অপরদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ১২৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৫৭৯ পয়েন্টে।


চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) আজ ৯ কোটি ৯৯ লাখ ৮১ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ১৬ কোটি ২৮ লাখ ০১ হাজার টাকার শেয়ার ও ইউনিট।


আজ সিএসইতে ২২৬টি প্রতিষ্ঠান লেনদেনে অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে দর বেড়েছে ৪০টির, কমেছে ১৬৭টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৯টি প্রতিষ্ঠানের।


আগের দিন সিএসইতে ২২৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। যার মধ্যে দর বেড়েছিল ৩৭টির, কমেছিল ১৫৭টির এবং অপরিবর্তিত ছিল ২৪টি প্রতিষ্ঠানের।

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com