শিরোনাম
সুরা আর-রাহমানের মাহাত্ম্য
প্রকাশ : ০৩ মে ২০১৮, ১৫:২৫
সুরা আর-রাহমানের মাহাত্ম্য
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

সুরা আর-রাহমান পবিত্র কুরআনের ৫৫তম সুরা। এতে রয়েছে ৭৮ আয়াত। মহান আল্লাহ তাঁর অশেষ করুণায় মানবজাতির জন্য যেসব বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক নেয়ামত দিয়েছেন - সেসবের কোনো কোনোটির কথা এ সুরায় স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে।


এই সুরার নানা আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে - সৃষ্টিকুলের জন্য মহান আল্লাহর বড় বড় অনেক নেয়ামত, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, বিচার দিবস ও মাপের পাল্লা, মানুষের কল্যাণের নানা সামগ্রী এবং আত্মা ও দেহের উপযোগী নানা খাদ্য। এ ছাড়াও জিন ও মানুষের সৃষ্টি, আকাশ ও জমিনে ছড়িয়ে থাকা মহান আল্লাহর নানা নিদর্শন, ঝর্ণা, উদ্যান, ফল, সুশ্রী ও পবিত্র স্ত্রী এবং মহামূল্যবান বিচিত্র পোশাকসহ বেহেশতের নানা নেয়ামতের কথাও রয়েছে এই সুরায়। অপরাধীদের ধ্বংসাত্মক পরিণতি এবং তাদের কঠোর ও যন্ত্রণাদায়ক নানা শাস্তির কথাও স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে এই সুরায়।


সুরা আর-রাহমান মুমিনদের হৃদয়ে যোগায় অশেষ আশার আলো ও আনন্দ এবং মুছে দেয় দুঃখ-বেদনা। খোদায়ী নানা নেয়ামতের বর্ণনার পাশাপাশি এই সুরার “ فَبِأَیِّ آلَاءِ رَبِّکُمَا تُکَذِّبَانِ – ফাবিআইয়ি আ’লায়ি রাব্বিকুমা তুকাজ্জিবান” শীর্ষক আয়াতটি তথা - ‘অতএব, তোমরা উভয়ে তথা জিন ও ইনসান তোমাদের পালনকর্তার কোন্ কোন‌্ অনুগ্রহকে অস্বীকার করবে?’ শীর্ষক বাক্যটির ঘন ঘন পুনরাবৃত্তি এই সুরাকে দিয়েছে অনন্য-ছন্দময়-সুরের চিত্তাকর্ষক সৌন্দর্য।
বিশ্বনবী (সা) বলেছেন, সব কিছুরই স্ত্রী বা পত্নী রয়েছে, কুরআনের স্ত্রী বা পত্নী হল সুরা আর-রাহমান।


সুরা আর-রাহমানের প্রথম চার আয়াতের অর্থ হল:


করুনাময় আল্লাহ। শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন, সৃষ্টি করেছেন মানুষ, তাকে শিখিয়েছেন বর্ণনার রীতি বা ভাষা।


আর-রাহমান মহান আল্লাহরই একটি নাম। এ শব্দটি মহান আল্লাহর সার্বজনীন দয়া ও করুণার তীব্রতা তুলে ধরে। মহান আল্লাহর সার্বজনীন দয়া ও করুণার দুয়ার সবার জন্যই খোলা। করুণাময় আল্লাহ আলো, বাতাস, তাপ, পানি, খাদ্য ইত্যাদি মুসলিম-অমুসলিম ও মুমিন-কাফির নির্বিশেষ সবাইকেই উদার হাতে দান করে থাকেন। মহান আল্লাহর আরেকটি নাম রাহিম। এ নাম বিশেষ দয়ার অর্থবোধক যা কেবল মুমিনদের জন্য নির্ধারিত।


সুরা আর-রাহমানে কুরআনের মত মহানিয়ামতের কথা উল্লেখ করার পর মহান আল্লাহ মানুষ সৃষ্টির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। মানুষ মহান আল্লাহর অনন্য সৃষ্টি ও মহানিয়ামত। মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ যে পূর্ণতা অর্জন করতে পারে খোদার করুণাবলে অন্য কোনো সৃষ্টি কখনো সে উচ্চতর অবস্থায় পৌঁছতে পারে না।


পবিত্র কুরআনের পরই মানুষের প্রসঙ্গ উল্লেখ করার বিষয়টি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। কুরআন ও মানুষ উভয়ই এই বিশ্ব-চরাচরের একটি সংস্করণ।


এরপর মানুষের পর সুরা আর-রাহমানে যে মহানিয়ামতের কথা তুলে ধরা হয়েছে তা হল বর্ণনার পদ্ধতি ও ভাষা শিক্ষা দেয়া। মনের ভাব ব্যক্ত করার মাধ্যম বা ভাষা তথা যোগাযোগের ক্ষমতা ও বুদ্ধি মানুষকে দান করেছেন মহান আল্লাহ। এ বিষয়টি মানব সভ্যতার সৃষ্টি, বিকাশ এবং মানব জীবনের উন্নতির জন্য অত্যন্ত বড় নিয়ামতগুলোর অন্যতম। মানুষের যদি যোগাযোগের ক্ষমতা না থাকতো তাহলে তারা নিজ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাগুলোকে পরবর্তী যুগের মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারত না এবং বিজ্ঞান, সভ্যতা, নীতি-নৈতিকতা ও ধর্মের এতো উন্নতি ঘটতো না।


এরপর সুরা আর-রাহমানে কিছু বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন মহান আল্লাহ। এ সুরার পঞ্চম আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন : সূর্য ও চন্দ্র নির্দিষ্ট হিসাবমত নিয়মিত চলে।


সূর্য মানুষ ও জীব জগতের জন্য অত্যন্ত জরুরি এবং অশেষ কল্যাণময় অমূল্য এক নিয়ামত। কারণ আলো ও তাপ ছাড়া বিশ্ব-চরাচরে জীবনের অস্তিত্বই থাকতো না। তাপ ও আলো ছাড়া পৃথিবীর সব কিছু হয়ে পড়ত অচল। উদ্ভিদের উন্মেষ ও বিকাশ এবং এর ফলে খাদ্যের উপাদান তৈরি হওয়া, বৃষ্টি বর্ষণ, বায়ু-প্রবাহ সবই সূর্যের ওপর নির্ভরশীল। তাই সূর্য মহান আল্লাহ প্রদত্ত খুব বড় নিয়ামত।


চাঁদও মানুষের জীবনে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাতের বেলায় আলো দেয়া ছাড়াও চাঁদ সমুদ্রে ঘটায় জোয়ার ও ভাটা। আর এ জোয়ার-ভাটার কারণেই সমুদ্র ও মহাসমুদ্রগুলোতে টিকে আছে নানা জীব।


গ্রহ-নক্ষত্রগুলোর সুনির্দিষ্ট গতি মহাজগতের স্থিতিশীল ব্যবস্থার নিয়ামক। পৃথিবীর চারদিকে চাঁদের আবর্তন এবং নিজ অক্ষ ও সূর্যকে ঘিরে পৃথিবীর ঘূর্ণন বা আবর্তনের কারণেই দেখা দেয় রাত আর দিন, বছর, মাস ও নানা ঋতুর চক্র। যদি এইসব গ্রহ-নক্ষত্রের গতি এলোমেলো হত বা সুনির্দিষ্ট না হত তাহলে সময়ের বা কালের এই চক্রগুলো থাকত না ও তাতে মানুষের জীবনযাত্রাই গড়ে উঠতো না। গ্রহ-নক্ষত্রের গতিই যে কেবল সুনির্দিষ্ট তা নয়, এইসব গ্রহ-নক্ষত্রের পারস্পরিক দূরত্ব ও পৃথিবী থেকে নানা গ্রহ-নক্ষত্রের দূরত্ব এবং এসবের পারস্পরিক আকর্ষণ ও ভর ইত্যাদিও সুনির্দিষ্ট।


এই সুনির্দিষ্ট বিষয় ও নিয়মগুলোর মধ্যে সামান্য ব্যতিক্রম ঘটলেই সৌর-জগত ও বিশ্ব-ব্যবস্থাপনায় দেখা দেবে বিচ্যুতি যার পরিণতিতে মানব-সমাজে দেখা দেবে মহা-বিপর্যয়। সৌর জগতের নানা বিষয়ের ব্যবস্থাপনা এতই নিখুঁত ও রুটিন-মাফিক যে বর্তমান যুগে নানা প্রাকৃতিক ঘটনা যেমন, বৃষ্টি কিংবা ঝড়-তুফানের মত দূর্যোগ ঠিক কোন্ দিন এবং কোন্ ঘণ্টার কতো মিনিট ও সেকেন্ডে ঘটবে তাও বলে দিতে পারছেন বিজ্ঞানীরা।


বিবার্তা/সোহান

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com