যে ব্যক্তির রোজা মূল্যহীন
প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০২৪, ০৯:৩০
যে ব্যক্তির রোজা মূল্যহীন
ধর্ম ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

চলছে পবিত্র মাহে রমজান মাস। আর রোজা হচ্ছে ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ। রোজা শব্দটি ফারসি। এর আরবি পরিভাষা হচ্ছে সাওম, বহুবচনে বলা হয় সিয়াম। সাওম অর্থ বিরত থাকা, পরিত্যাগ করা। পরিভাষায় সাওম হলো, আল্লাহর সন্তুটি কামনায় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়তসহ পানাহার থেকে বিরত থাকা।


তবে শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকলেই রোজার হক আদায় হয়ে যাবে না। পানাহার থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি সকল প্রকার পাপ কাজ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে হবে এবং অন্যান্য আমল ও ইবাদতে নিজেকে মশগুল রাখতে হবে, তবেই রোজার পূর্ণ হক আদায় হবে।


নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রোজা রেখেও অশ্লীল কাজ ও পাপাচার ত্যাগ করতে পারল না, তার পানাহার ত্যাগ করার কোনো মূল্য নেই।’ (বুখারি, হাদিস, ৬০৫৭, ইবনে মাজাহ, হাদিস, ১৬৮৯)


রোজা তাকওয়া অবলম্বনের মাধ্যম


আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য রোজার বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা তাকওয়া (আল্লাহভীরুতা) অবলম্বন করতে পারো। (সূরা বাকারা, আয়াত, ১৮৩)


যেহেতু রোজা আল্লাহর বিধান এবং আমাদের জন্য তা ফরজ করা হয়েছে, তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে রোজা পালন ও রোজার অন্যান্য হক যথাযথভাবে আদায় করতে হবে।


আল্লাহ তায়ালা বলেন, রোজা একমাত্র আমার জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দিব। (মুসলিম, হাদিস, ২৭৬০)


রোজায় করণীয় বর্জনীয়


রোজা রাখার মাধ্যমে যেহেতু তাকওয়া অর্জন হয়, তাই রমজান মাসে প্রত্যেক মুমিন-মুসলমানের কর্তব্য হচ্ছে, তাকওয়া অর্জনের জন্য দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। রমজান মাসে একটি নেক আমলের সওয়াব ৭০ গুণ। তাই এই মাসে আমরা মুখরোচক ইফতার সামগ্রী আর সেহরি নিয়ে ব্যস্ত না থেকে যথাসম্ভব ইবাদত ও আমলে মশগুল থাকব। বেশি বেশি দান-সদকা করব।


তাহাজ্জুদ আদায়ে মনোযোগ


বছরের অন্যান্য সময় ঘুমের কারণে তাহাজ্জুদ পড়তে আমাদের অনেকরই কষ্ট হয়ে যায়, রমজান আমাদের জন্য তাহাজ্জুদ আদায়ের সুবর্ণ সুযোগ।


সেহরির কিছু সময় আগে উঠে তাহাজ্জুদ আদায় করে; আল্লাহ তায়ালার দরবারে হাত তুলে নিজেদের ভুলের জন্য ক্ষমা চাইব, পাশাপাশি আগামী দিনগুলোতেও যেন শয়তানের ধোকা থেকে নিজেকে মুক্ত রেখে আল্লাহর পথে চলতে পারি, সেজন্য দোয়া করব।


দোয়া- মুনাজাত


রমজান মাস হচ্ছে দোয়া কবুল ও সওয়াব অর্জনের মাস। এ মাসে আল্লাহর অবারিত রহমত-বরকতের পাশাপাশি দোয়া-মুনাজাতের মাধ্যমে নিজেকে পবিত্র করে নেওয়া যায়। নিশ্চয় আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করবেন এবং আশ্রয় দিবেন শয়তানের ধোকা থেকে ইনশাআল্লাহ।


ইস্তেগফার পাঠ


রমজানে আমরা বেশি বেশি ইস্তেগফার পড়ব। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই আমলটি বেশি বেশি করতেন। কোরআন মাজিদে ইরশাদ হয়েছে, হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে তওবা করো। এতে আশা করা যায়, তোমাদের রব তোমাদের পাপরাশিকে মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন জান্নাতে। (সূরা তাহরিম, আয়াত, ৮)


বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত


রমজান কোরআন নাজিলের মাস, তাই এই মাসে আমরা বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করব এবং অর্থ বুঝে বাংলা তরজমা ও তাফসির সহকারে পড়ব। এতে করে আমরা কোরআনে আল্লাহ তায়ালা কী বলেছেন, তা সহজেই বুঝতে পারব এবং সে অনুযায়ী কাজ করতে পারব।


জামাতে নামাজ আদায়


খুশু-খুযুর সঙ্গে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ (পুরুষেরা জামাতে) আদায় করবো। পাশাপাশি গুরুত্বসহকারে নফল ইবাদতগুলোও করার চেষ্টা করব। সেই সঙ্গে সকল প্রকার পাপ কাজ থেকে নিজেকে হেফাজত করার অভ্যাস করব। যাতে বাকি জীবন এভাবেই কাটাতে পারি।


অপ্রয়োজনীয় কথা-কাজ থেকে বিরত থাকা


অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলা থেকে নিজেকে বিরত রাখব এবং খুব বেশি প্রয়োজন না থাকলে অনলাইনভিত্তিক সোস্যাল সাইডগুলো যথাসম্ভব কম ব্যবহার করব।


শবে কদর তালাশ করা


রমজানের শেষ দশকে বিজোড় রাতগুলোতে হাজার বছরের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রজনী লাইলাতুল কদরের সন্ধান করব। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে শবে কদর সন্ধান করো। (মুসলিম)


এটি একটি মহিমান্বিত রাত। কারণ এ রাতে আল্লাহ তায়ালা কোরআনুল কারিম নাজিল করেছেন। উবাদা ইবনে সামিত থেকে বর্ণিত, নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে কদরের রাতের অন্বেষণে সেই রাতে নামাজ পড়ে এবং তা পেয়ে যায়, তার অতীতের ও ভবিষ্যতের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (নাসায়ি)


রমজান মাসকে আল্লাহ তায়ালা যেহেতু বিভিন্ন নেয়ামত ও রহমত দ্বারা পরিপূর্ণ করেছেন, সেহেতু আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে, যাতে সেই নেয়ামত ও রহমতের বারিধারায় নিজেকে সিক্ত করতে পারি।


আল্লাহর রহমত-বরকত লাভের চেষ্টা করা


আমাদের পছন্দের কোনো শপে যখন অফার চলে, তখন যেমন আমরা তড়িঘড়ি করে সেই অফার নেওয়ার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠি, তার চেয়েও সহস্র গুণ মরিয়া হয়ে উঠতে হবে রমজান মাসে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ রহমত ও বরকত হাসিলের জন্য। কারণ, তা নিঃসন্দেহে তা দুনিয়াবি অফারের থেকে উত্তম।


আমাদের সদাসর্বদা সজাগ থাকতে হবে, যেন অবহেলাবশত এই মহান মাসটির এত এত নেয়ামত থেকে আমরা ছিটকে না পড়ি। এতো এতো নেয়ামত পেয়েও যদি আমরা তা হাসিল করতে না পারি তাহলে আমাদের চেয়ে হতভাগা আর কে আছে?


রমজান পেয়েও যে হতভাগা


জিবরাঈল আলাইহিস সালাম বলেছেন, ওই ব্যক্তি ধ্বংস হোক যে রমজান পেয়েও নিজের গুনাহ মাফ করাতে পারল না। তার কথার সাথে একমত পোষণ করে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমিন বলেছেন।


আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে রমজানের হক আদায় করার তাওফিক দান করুন এবং নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামমের অভিশাপ থেকে বাঁচার তাওফিক দান করুন। আমিন।


বিবার্তা/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com