তরুণ-তরুণীর চ্যাটিং কোন চোখে দেখে ইসলাম?
প্রকাশ : ১৬ নভেম্বর ২০২৩, ১০:৩২
তরুণ-তরুণীর চ্যাটিং কোন চোখে দেখে ইসলাম?
ধর্ম ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

বর্তমানে এমন একটা সময় পার করছে মানুষ যখন বেশিরভাগ মানুষের সময় কাটাতে হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। নেশায় বা পেশায়।


এ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তরুণ-তরুণীদের অবাধে চ্যাটিংয়ের সুবিধা রয়েছে। ইসলাম এসব বিষয় কোন চোখে দেখে? ইসলাম কি এ অবাদ কথাবার্তা, চ্যাটিং, ড্যাটিং ভালো চোখে দেখে? না ইসলাম এ বিষয়ে খুব কঠোর। পরনারীর সঙ্গে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলতেই ইসলাম নিষেধ করে। রসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সাবধান! কোন পুরুষ কোনও নারীর সাথে নির্জনে মিলিত হলে সেখানে অবশ্যই তৃতীয়জন হিসাবে শয়তান অবস্থান করে (পাপাচারে প্ররোচনা দেয়)। (সুনানে তিরমিজি ২১৬৫


সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতো নির্জন কথা বলার মহা সুযোগ তৈরি করে দেয়। সেখানে তরুণ-তরুণীরা অবাধে কথাবার্তা বলতে পারে। রাতের পর রাত চ্যাটিং করে। আল্লাহর রসুল এ বিষয়টা থেকেই সাবধান করেছেন। বর্তমান সময়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে ফেক আইডির কারণে অসংখ্য অঘটন ঘটছে। মানুষের ব্যক্তিগত পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সাইবার অপরাধ দিন দিন বেড়েই চলেছে।


অপরিচিত ছেলে-মেয়েদের মধ্যে ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ইমো, টিকটক, ইন্সটাগ্রাম, টুইটার, হোয়াটস্‌আপ, লিংকড্‌ইন ইত্যাদিসহ অসংখ্য সাইট এখন তরুণ-তরুণীদের প্রলুব্ধ করছে। অবাধ অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের ফলে অশ্লীলতা, পর্নোগ্রাফি, অসামাজিক কাজ ও সাইবার অপরাধ বেড়েই চলেছে। সবকিছুর জন্য দায়ী পারিবারিক শিক্ষা ও তরুণ-তরুণীদের অনিয়ন্ত্রিত প্রযুক্তি ব্যবহারের স্বাধীনতা।


ফেইসবুক তরুণরা তরুণীদের বন্ধু বানানোর মাধ্যমে পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমে গুনাহে লিপ্ত হবার সমূহ সম্ভাবনা তৈরি হয়। যদিও দীনি বা দুনিয়াবী প্রয়োজনে বেগানা নারী পুরুষ পর্দার সাথে প্রয়োজনীয় কথা বলার অনুমতি আছে। চাকরির সুবাদে বা প্রয়োজনীয় কাজে। কিন্তু ফিতনার সম্ভাবনা থাকলে কিংবা অপ্রয়োজনে কথা বলা জায়েজ নেই।


কিন্তু বর্তমানে ফেইসবুকসহ স্যোশাল মিডিয়ায় ছবি আপলোড, স্ট্যাটাস, চ্যাটিং ইত্যাদির মাধ্যমে তরুণ-তরুণীদের মাঝে অবৈধ সম্পর্ক তৈরির মাধ্যম হয়ে যাবার কারণে ফেইসবুক ফ্রেন্ড তালিকায় নারী বন্ধু রাখা, তাদের সাথে অপ্রয়োজনীয় চ্যাটিং করা জায়েজ নয়। এমন কি দীনি আলোচনায়ও যদি আকর্ষিত হবার সম্ভাবনা থাকে, তাহলেও চ্যাটিং করা, কথা বলা জায়েজ নয়। আল্লাহ রব্বুল আলামিন কোরআনে বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ ۚ وَمَن يَتَّبِعْ خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ فَإِنَّهُ يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاءِ وَالْمُنكَرِ ۚ وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ مَا زَكَىٰ مِنكُم مِّنْ أَحَدٍ أَبَدًا وَلَٰكِنَّ اللَّهَ يُزَكِّي مَن يَشَاءُ ۗ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ


‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। যে কেউ শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে, তখন তো শয়তান নির্লজ্জতা ও মন্দ কাজেরই আদেশ করবে। যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া তোমাদের প্রতি না থাকত, তবে তোমাদের কেউ কখনও পবিত্র হতে পারতে না। কিন্তু আল্লাহ যাকে ইচ্ছা পবিত্র করেন। আল্লাহ সবকিছু শোনেন, জানেন। (সুরা: নুর ২১)


আর এ অবাধ চ্যাটিং, লাইক, কমেন্টস ইত্যাদি যদি হয় ফেসবুক, টুইটার, গুগলপ্লে, ইউটিউব, অ্যান্ড্রয়েড, আইফোন কিংবা আরএসএস-এর মতো মাধ্যমগুলোতে, আর তাতে অপরাধ প্রবণতা বাড়ে কিংবা পর্দার খেলাফ হয় তবে তাও ইসলামে নিষেধ।


সুতরাং তরুণরা প্রয়োজন ছাড়া অপরিচিত কোনো তরুণীকে বন্ধু বানানো যেমন ঠিক নয়, তেমনি অপরিচিত পুরুষদের জন্যও অপরিচিত মেয়েকে বন্ধু বানানো ঠিক নয়। যদি বন্ধু হয়েও থাকে তবে আপত্তিকর, অসামাজিক ও ধর্মীয় বিষয়গুলোর প্রতি যথাযথ গুরুত্বারোপ করা আবশ্যক।
غَيْرَ مُسَافِحِينَ وَلَا مُتَّخِذِي أَخْدَانٍ ۗ وَمَن يَكْفُرْ بِالْإِيمَانِ فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ
কামবাসনা চরিতার্থ করার জন্যে কিংবা গুপ্ত প্রেমে লিপ্ত হওয়ার জন্যে নয়। (সুরা: মায়েদা ৫)


عَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَا تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنَ النِّسَاءِ
হযরত উসামাহ ইবনু যায়দ রা. হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, পুরুষের জন্য স্ত্রীজাতি অপেক্ষা অধিক ক্ষতিকর কোন ফিতনা আমি রেখে গেলাম না। (বুখারি ৫০৯৬)


নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্ত্রীগণ হলেন সকল মুমিনের মা। অথচ তাদের সাথেই কথা-বার্তা বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকে করতে বলা হয়েছে। তাহলে অন্যান্য সাধারণ বেগানা নারীদের ক্ষেত্রে এ হুকুম কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা সহজেই অনুময়ে।


আল্লাহ বলেন, ‘হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও (ইহুদি খ্রিষ্টান)। তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় পাও তবে আকর্ষণধর্মী ভঙ্গিতে কথা বলনা, যাতে যাদের মাঝে যৌনলিপ্সা আছে তারা তোমাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। বরং তোমরা স্বাভাবিক কথা বল। এবং তোমরা অবস্থান কর স্বীয় বসবাসের গৃহে, জাহেলি যুগের মেয়েদের মত নিজেদের প্রকাশ করো না।’ (সুরা: আহজাব ৩২)


সুতরাং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে যে কোনো বয়সের তরুণ-তরুণীর অবাধ চ্যাটিং কিংবা তথ্য আদান-প্রদানে সাবধানতা অবলম্বন করা অনেক জরুরি। যদি ফেতনার আশঙ্কা থাকে তাহলে কথা বলাই জায়েজ হবে না। আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেন, ‘জিনার ধারে-কাছেও যেও না, নিশ্চয় তা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট আচরণ।’ (সুরা: বনি ইসরাইল ৩২)
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: «إِنَّ الدُّنْيَا حُلْوَةٌ خَضِرَةٌ، وَإِنَّ اللهَ مُسْتَخْلِفُكُمْ فِيهَا، فَيَنْظُرُ كَيْفَ تَعْمَلُونَ، فَاتَّقُوا الدُّنْيَا وَاتَّقُوا النِّسَاءَ، فَإِنَّ أَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِي إِسْرَائِيلَ كَانَتْ فِي النِّسَاءِ»
হযরত আবু সাঈদ আল-খুদরি রা. থেকে বর্ণিত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি বলেন, নিশ্চয় দুনিয়া লোভনীয় ও সবুজ-শ্যামল। আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতে তোমাদেরকে খলিফা (শাসক) বানিয়েছেন। তিনি দেখবেন যে, তোমরা কেমন কাজ করো। সাবধান! দুনিয়া সম্পর্কে সতর্ক হও এবং নারীদের সম্পর্কেও সতর্ক হও। নিশ্চয় বনি ইসরাইলের মাঝে প্রথম ফিতনা নারীদের মাধ্যমেই হয়েছে। (মুসলিম ২৭৪২)


স্যোশাল মিডিয়ায় ইসলাম প্রচার কতটুকু বৈধ?


ইসলাম প্রচার করা প্রতিটি মুসলিমের জন্য কর্তব্য। সেই হিসেবে ইন্টারনেটের সীমানাহীন প্লাটফর্মে কোটি মানুষ সম্পৃক্ত। তাই ময়দানেও চোখের গোনাহসহ যাবতীয় গুনাহ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারলে ইসলাম প্রচার করা জায়েজ আছে।


কিন্তু ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে নিজেই গুনাহে জড়িত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা বা নিশ্চিত ধারণা হয়, তাহলে ইন্টারনেট জগতে ইসলাম প্রচারের নামেও অংশগ্রহণ করা জায়েজ নয়। বিশেষ করে নারীদের থেকে সাবধান থাকতে হবে। কিন্তু যাদের গুনাহে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা আছে তাদের জন্য ইন্টারনেটে ইসলাম প্রচার জায়েজ নয়।
هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَىٰ وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ


তিনিই প্রেরণ করেছেন আপন রসুলকে হেদায়েত ও সত্য দীন সহকারে, যেন এ দীনকে অপরাপর দীনের উপর জয়যুক্ত করেন, যদিও মুশরিকরা তা অপ্রীতিকর মনে করে। (সুরা: তাওবা-৩৩)
قُل لِّلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ
মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। (সুরা: নুর ৩০)


فَالْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظَرُ، وَالْأُذُنَانِ زِنَاهُمَا الِاسْتِمَاعُ، وَاللِّسَانُ زِنَاهُ الْكَلَامُ، وَالْيَدُزِنَاهَا الْبَطْشُ، وَالرِّجْلُ زِنَاهَا الْخُطَا، وَالْقَلْبُ يَهْوَى وَيَتَمَنَّى، وَيُصَدِّقُ ذَلِكَ الْفَرْجُ وَيُكَذِّبُهُ
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রসুল সা. বলেন, ‘চোখের জিনা হল (হারাম) দৃষ্টিপাত। কর্ণদ্বয়ের জিনা হল, (গায়রে মাহরামের যৌন উদ্দীপক) কথাবার্তা মনোযোগ দিয়ে শোনা। জিহবার জিনা হল, (গায়রে মাহরামের সাথে সুড়সুড়িমূলক) কথোপকথন। হাতের জিনা হল, (গায়রে মাহরামকে) ধরা বা স্পর্শকরণ। পায়ের জিনা হল, (খারাপ উদ্দেশ্যে) চলা। অন্তর চায় এবং কামনা করে আর লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবে রূপ দেয় (যদি জিনা করে) এবং মিথ্যা পরিণত করে (যদি অন্তরের চাওয়া অনুপাতে জিনা না করে)। (মুসলিম ২৬৫৭, মুসনাদে আহমাদ ৮৯৩২)


বিবার্তা/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com