ইসলামে হারাম গ্রহণযোগ্য নয় কেন?
প্রকাশ : ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:৪১
ইসলামে হারাম গ্রহণযোগ্য নয় কেন?
ধর্ম ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

হারাম অর্থ নিষিদ্ধ, অবৈধ, গ্রহণযোগ্য নয় এমন। ইসলামি শরিয়তের একটি পরিভাষা হারাম। হারাম বা বর্জনীয় কাজ করলে কবিরা গুনাহ হয়। কবিরা গুনাহ বা বড় গুনাহ, যে একটি গুনাহই জাহান্নামে নিয়ে যেতে পারে। কবিরা গুনাহ তওবা ছাড়া ক্ষমা করেন না আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। এ জন্য হারাম বর্জনীয়।


আল্লাহ তাআলা আমাদের সৃষ্টি করেছেন। পৃথিবী, গ্রহ, তারা সব তিনিই সৃষ্টি করেছেন। তিনিই ভালো জানেন, আমাদের জন্য কোনটি কল্যাণকর। কোনটি অকল্যাণকর। হারাম ঘোষণার মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের জন্য অকল্যাণকর বিষয়গুলো চিহ্নিত করে দিয়েছেন। তাই হারাম মুসলমানদের জন্য অবশ্যই বর্জনীয়।


হারাম শব্দের অর্থ কী
হারাম অর্থ নিষিদ্ধ, অবৈধ, গ্রহণযোগ্য নয় এমন। মহাগ্রন্থ আল কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা কিছু কাজ ফরজ তথা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন যার প্রতি তোমরা কখনোই অবহেলা করবে না। আরও কিছু কাজ তিনি হারাম করে দিয়েছেন যা তোমরা কখনোই করতে যাবে না, আরও কিছু সীমা (তা ওয়াজিব, মুস্তাহাব, মুবাহ যাই হোক না কেন) তিনি তোমাদের বাতলে দিয়েছেন যা তোমরা কখনোই অতিক্রম করতে যাবে না। তেমনিভাবে তিনি কিছু ব্যাপারে চুপ থেকেছেন (তা ইচ্ছে করেই) ভুলে নয়। সুতরাং তোমরা তা খুঁজতে যাবে না’। (দারাতুতনি ৪২, তাবরানি ৫৮৯, বায়হাকি ১৯৫০৯)


আল্লাহ তাআলা যা হালাল করে দিয়েছেন তা হালাল বলে মনে করতেই হবে। তিনি হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম মনে করে অবশ্যই বর্জন করতে হবে। হজরত আবু দারদা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা কোরআনে যা হালাল করে দিয়েছেন তা-ই হালাল। যা হারাম করে দিয়েছেন তা-ই হারাম। আর যে সম্পর্কে তিনি চুপ থেকেছেন তা মানুষের জন্য আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বিশেষ ছাড় (যা করাও যাবে ছাড়াও যাবে, তা নিয়ে তেমন কোনো চিন্তাও করতে হবে না)। সুতরাং তোমরা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে সেগুলোকে সেভাবেই গ্রহণ করো। কারণ, আল্লাহ তাআলা ভুলে যাওয়ার নন। অতঃপর তিনি উক্ত আয়াত তিলাওয়াত করেন যার অর্থ: তোমার প্রভু কখনো ভুলে যাওয়ার নন। (হাকিম ২/৩৭৫)


হারাম বর্জনীয় কেন?
হারাম কাজগুলোকেও কোরআনের ভাষায় ‘হুদুদ’ বলা হয়। যা করা তো দূরের কথা বরং তার নিকটবর্তী হওয়াও নিষিদ্ধ। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এগুলো আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে বাতলানো সীমা। অতএব তোমরা সেগুলোর নিকটেও যাবে না।’ (সুরা: বাকারা ১৮৭)


যারা আল্লাহ তাআলার বাতলানো সীমা অতিক্রম করবে আল্লাহ তাআলা তাদের জাহান্নামের হুমকি দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলা ও তার রাসুলের বিরুদ্ধাচরণ করে, আল্লাহর দেয়া সীমা অতিক্রম করে আল্লাহ তাআলা তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। তন্মধ্যে সে সদা সর্বদা অবস্থান করবে। তাতে তার জন্য লাঞ্ছনাকর শাস্তির ব্যবস্থাও রয়েছে’। (সুরা: নিসা ১৪)
এ কথা সবারই মনে রাখতে হবে যে, নিষিদ্ধ কাজগুলো একেবারেই বর্জনীয়। তাতে কোনো ছাড় নেই। তবে আদেশগুলো যথাসাধ্য পালনীয়। হযরত আবু হুরাইরাহ রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যখন আমি তোমাদেরকে কোন কাজের আদেশ করি তখন তোমরা তা সাধ্যানুযায়ী করতে চেষ্টা করবে। তবে যখন আমি তোমাদেরকে কোন কিছু বর্জন করতে বলি তখন তোমরা তা অবশ্যই বর্জন করবে’। (মুসলিম ১৩৩৭)


যারা হারাম থেকে বাঁচবে তাদের পুরস্কার
যারা কবিরা গুনাহ বা হারাম থেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য জান্নাতের ওয়াদা করেছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা যদি সকল মহাপাপ থেকে বিরত থাকো যা থেকে তোমাদেরকে (কঠিনভাবে) বারণ করা হয়েছে। তাহলে আমি তোমাদের সব (ছোট) পাপ ক্ষমা করে দেব। তোমাদেরকে প্রবেশ করাবো খুব সম্মানজনক স্থান তথা জান্নাতে।’ (সুরা: নিসা ৩১)


আর তা এ কারণেই, ছোট পাপগুলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, জুমার নামাজ ও রমজানের রোজার মাধ্যমেই ক্ষমা হয়ে যায়।
বান্দাহ হিসেবে আমাদের সকলকে এ কথা অবশ্যই মানতে হবে যে, আল্লাহ তাআলা যাই চান তাই বান্দার জন্য বিধান করেন। তাতে কারোর কোনো কিছু বলার নেই। তিনি ভালোমন্দ সব কিছুই জানেন। তিনি হলেন হিকমত ওয়ালা। কখন এবং কার জন্য তিনি কি বিধান করবেন তা তিনি ভালোভালেই জানেন। তিনি যা চান হালাল করেন আর যা চান হারাম করেন। বান্দা হিসেবে আমাদের কর্তব্য হচ্ছে সন্তুষ্টচিত্তে সেগুলো মেনে চলা।
আল্লাহ তাআলা কোরআনে কিছু জিনিসকে হারাম করে দিয়েছেন। তেমনিভাবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও কিছু জিনিসকে হারাম করে দিয়েছেন। হাদিসে এগুলোর উল্লেখ রয়েছে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘(হে মুহাম্মাদ!) তুমি সবাইকে বলো, আসো! তোমাদের প্রভু তোমাদের উপর যা যা হারাম করে দিয়েছেন তা তোমাদেরকে পড়ে শুনাবো। তা এই যে, তোমরা তাঁর সাথে কাউকে শরীক করবে না, পিতা-মাতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে, দরিদ্রতার ভয়ে নিজেদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, কারণ, আমিই তোমাদেরকে ও তাদেরকে রিযিক দিচ্ছি, অশ্লীল কথা ও কাজের নিকটেও যেও না, চাই তা প্রকাশ্যই হোক অথবা গোপনীয়, আল্লাহ তাআলা যাকে হত্যা করতে নিষেধ করেছেন তাকে অবৈধভাবে হত্যা করো না, এ সব বিষয়ে আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন যাতে তোমরা তা অনুধাবন করতে পারো। ইয়াতিমদের সম্পদের নিকটেও যেও না। তবে একান্ত সদুদ্দেশ্যে তা গ্রহণ করতে পারো যতক্ষণ না তারা বয়:প্রাপ্ত হয়’’। (সুরা: আনআম ১৫১-১৫২)


আল্লাহ তায়ালা কোরআনে বলেন, ‘তোমাদের ওপর হারাম করে দেয়া হয়েছে তোমাদের মায়েদেরকে, মেয়েদেরকে, বোনদেরকে, ফুফুদেরকে, খালাদেরকে, ভাইয়ের মেয়েদেরকে, বোনের মেয়েদেরকে, সে মায়েদেরকে যারা তোমাদেরকে স্তন দান করেছেন, তোমাদের দুধবোনদেরকে, স্ত্রীদের মায়েদেরকে এবং সে মেয়েদেরকে যাদেরকে লালন-পালন তোমরাই করছো এবং যাদের মায়েদের সাথে তোমরা সহবাসে লিপ্ত হয়েছো, তবে যদি তোমরা তাদের মায়েদের সাথে সহবাস না করে থাকো তা হলে তাদের মেয়েদেরকে বিবাহ্ করতে কোনো অসুবিধে নেই, তোমাদের ঔরসজাত সন্তানদের স্ত্রীদেরও হারাম করে দেয়া হয়েছে। তেমনিভাবে দু’সহোদরা বোনকে একত্রে বিবাহ করাও হারাম। তবে ইতঃপূর্বে যা ঘটে গিয়েছে তা আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করে দিবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা ক্ষমাশীল করুণাময়। আরও হারাম করা হয়েছে তোমাদের ওপর সধবা নারীগণ তথা অন্যের বিবাহিত স্ত্রীদের। (সুরা: নিসা ২৩-২৪)


তেমনিভাবে আল্লাহ তাআলা উপার্জন সংক্রান্ত হারামসমূহের বর্ণনায় বলেন, একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য কেউ কোন হারাম পরিত্যাগ করলে সে তার অন্তরে বিশেষ এক ধরনের ঈমানের স্বাদ অনুভব করবে এবং আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে এরই পরিবর্তে আরেকটি ভালো জিনিস দান করবেন।


বিবার্তা/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com