নারীদের জান্নাতে যাওয়ার সহজ ৭ পথ
প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২৩, ০৮:৫৮
নারীদের জান্নাতে যাওয়ার সহজ ৭ পথ
ধর্ম ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

জান্নাত মুমিনের আবাস্থল। মুমিনরা জান্নাতে থাকবে এটাই আল্লাহ নির্ধারণ করেছেন। তবে দুনিয়াতে আল্লাহর বিধানমত না চললে পরকালীন অশান্তি আর জাহান্নাম অবধারিত হয়।


রাসুল সা. নারীদের সতর্ক করে বলেছেন, ‘হে নারীগণ! তোমরা দান-সদকা করো। বেশি বেশি করে আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। কেননা আমি জাহান্নামে তোমাদের অধিকহারে দেখেছি। এ কথা শোনার পর উপস্থিত মহিলাদের মধ্য থেকে একজন (যার নাম ছিল জাযলা) প্রশ্ন করলেন, হে রাসুলাল্লাহ! আমাদের কেন এ অবস্থা? কেন জাহান্নামে আমরা বেশি সংখ্যায় যাবো? রাসুলুল্লাহ সা. বললেন, ‘তোমরা স্বামীর প্রতি বেশি অকৃতজ্ঞ ও অভিশাপ দাও বেশি।’


দাম্পত্য জীবনে অনেক সুখী নারীকে দেখা যায়, তারা স্বামীর প্রতি অনেক সময় চরম অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকে। অনেক সময় সামান্য বিরক্ত হলে নিজ সন্তানদেরও অভিশাপ দেয়। নারীদের জাহান্নাম থেকে বাঁচার জন্য এ দুটো স্বভাব পরিহার করতে হবে অবশ্যই। আর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বলার উদ্দেশ্য এটাই। তিনি নারীদের স্বভাব সংশোধন করার জন্যই এ কথা বলেছেন। নারীদের খাটো করা বা তাদের ভূমিকা অবমুল্যায়নের জন্য বলেননি। (মুসলিম হাদিস ৭৯)


রাসুল সা. এর হাদিস অনুযায়ী কিছু গুণ থাকলে নারীদের জান্নাতে যাওয়া সহজ হয়।
১. যারা নামাজ রোজা জিকির তাসবিহ ও তিলাওয়াতে কোরআনে নিজেদের সময় অতিবাহিত করেন। যথাসময়ে যে নারীরা নামাজ আদায় করেন। পরপুরুষের সঙ্গে মেলামেশা থেকে বিরত থাকেন। রাসুল সা. বলেন, যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে, রমজানের রোজা রাখবে, নিজের গুপ্তস্থানকে হেফাজত করবে (পর্দা রক্ষা করে ও ব্যভিচার থেকে বিরত থাকবে) আর স্বামীর আনুগত্য করবে- এমন নারীর জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে। যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেন তিনি। (তিরমিজি ও তাবরানি)


২. যারা যথা সম্ভব নিজ ঘর-দুয়ারে থাকেন। অপ্রয়োজনে বাইরে ঘোরাঘুরি করেন না। পর্দা, হায়া ও সম্ভ্রম রক্ষার প্রতি সর্বোচ্চ যত্নশীল থাকেন।
৩. যে নারী নিজ পারিবারিক অভিভাবক তথা স্বামী, বাবা, ভাই বা পুত্রের সঙ্গে হৃদ্যতা ও মান্যতার সম্পর্ক রেখে চলেন।
৪. এমন নারী যিনি, অল্পে তুষ্টি আদর্শিকতা ও বিজ্ঞতার সঙ্গে নিজের প্রয়োজনীয় সমূদয় কাজ সম্পাদন করেন। নিজ সন্তান ও সহায় সম্পদের পূর্ণ হেফাজত করেন।
৫. যে নারী নিজে পরিবারের নেপথ্য পরিচালক হিসাবে পারিবারিক কাছে বা দূরে অবস্থিত সকল সদস্যদের প্রতি আন্তরিকতা, দরদ ও কল্যাণকামিতা পোষণ করেন।
৬. নিজের ঘর দুয়ার সর্বদা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও গুছিয়ে রাখেন। ঘরে গান বাজনা বা দৃষ্টিকটু ছবি রাখেন না।
৭. নিজে কাজের ফাঁকে যখনই একটু সুযোগ পান তখনই দীনি কোনো বই পড়েন কিংবা তাসবিহ আদায় করেন। সময় সুযোগ পেলেই কোরআন তিলাওয়াত করেন। গীবত শেকায়েতের সুযোগ দেন না। অযথা সময় নষ্ট করেন না।


হজরত আলী ও ফাতেমা রা. একবার রাসুল সা. এর কাছে গেলেন। রাসুল সা. কে কাঁদতে দেখলেন। হজরত আলী রাসুল সা.-এর কাছে কান্না করার কারণ জানতে চাইলে রাসুল সা. বললেন, মিরাজের রাতে আমি উম্মতের নারীদেরকে জাহান্নামে বিভিন্ন ধরণের ভয়ংকর ও কঠিন আজাবে লিপ্ত দেখেছি যা স্মরণ করে আমি কাঁদছি।
নবী কন্যা ফাতিমা রা. এ শাস্তির কারণ জানতে চেয়ে আরজ করলেন আব্বাজান! নারীদের এ ভয়াবহ শাস্তি ভোগের কারণ কী? উত্তরে মহানবী সা. বললেন, যে নারীকে নিজের মাথার চুল দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় সাজা ভোগ করতে দেখেছিলাম তার এই শাস্তির কারণ হলো, সে চলার পথে পরপুরুষ থেকে নিজের চুলকে ঢেকে রাখতো না। নগ্ন মাথায় পরপুরুষকে দেখানোর জন্য চুল ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়াতো। অথচ আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে নারীদেরকে মাথা ঘাড় ও বুক মোটা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন।
আরেকটি কারণ বলতে গিয়ে রাসুল সা. বলেন, যে নারীদের নিজ জিহ্বা দ্বারা ঝুলন্ত অবস্থায় জাহান্নামের শাস্তি ভোগ করতে দেখা গেছে, তাদের ওই শাস্তির কারণ হলো তারা কথাবার্তায় স্বামীকে কষ্ট দিত তাদের জবান থেকে শাশুড়ি আত্মীয়-স্বজন এমনকি প্রতিবেশী পর্যন্ত নিরাপদ থাকতো না। অনেক মহিলা আছে যারা নামাজ-কালামে খুবই পাকা কিন্তু মুখের বচন বিষের মত, এই শ্রেণীর নারীরা নামাজে পাকা পোক্ত হওয়া সত্ত্বেও কুরুচীপূর্ণ অশ্লীলভাষী হওয়ার কারণে জাহান্নামে কঠিন শাস্তির উপযুক্ত হয়ে যাবে। রাসুল সা. বলেন, মুসলমান হচ্ছে ওই ব্যক্তি যার হাত মুখ এবং আচরণ থেকে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে। (মুসলিম)


অন্য আরেকটি কারণ বলতে গিয়ে রাসুল সা. বলেন, অবৈধ সম্পর্ক হচ্ছে নারী শাস্তির তৃতীয় কারণ। মহানবী সা. যে নারীকে স্তনে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়েছিলেন তার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন; ওই নারী ছিল বিবাহিতা, সে বিবাহিতা হওয়া সত্ত্বেও তার সম্পর্ক ছিল পরপুরুষের সাথে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে লজ্জাস্থান হেফাজতকারী মহিলাকে জান্নাতী বলে ঘোষণা করেছেন। (সূরা মুমিনুন ৫)
ইবাদতে অনিহার কারণে নিজের পা বুকে ও হাত কপালে লটকানো অবস্থায় সাজাপ্রাপ্তা নারীরা দুনিয়ায় ফরজ গোসল ও ঋতুবতী হওয়ার পরবর্তী পবিত্রতা অর্জনে উদাসীন ছিল। নামাজ যথারীতি পালন করা তো দূরের কথা বরং নামাজ বা অন্যান্য ইবাদত নিয়ে উপহাস করতো।
নারীদের জাহান্নামে যাওয়ার আরেকটি কারণ; পরনিন্দা ও মিথ্যা কথা বলা। মুখাকৃতি শুকর ও শরীরের বাকী অংশ গাধার ন্যায় রূপান্তরিত আর অসংখ্য সাপ বিচ্ছু বেষ্টিত অবস্থায় শাস্তি ভোগকারীনি নারীর শাস্তির কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুল সা. বলেন, এ নারীরা পরনিন্দা ও মিথ্যা বলতে অভ্যস্ত ছিল। হিংসা ও খোটা দেয়া তাদের অভ্যাস ছিলো। রাসুল সা. জাহান্নামের যে নারীকে মুখচ্ছবি কুকুর আকৃতির ও তার মুখে আগুন ঢুকে মলদ্বার দিয়ে বের হতে দেখেছেন সে ছিল হিংসুক ও খোটা দানকারীনি। (আল কাবায়ের)


বিবার্তা/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com