পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা বায়তুল মামুরের কথা উল্লেখ করেছেন। আরবি বায়ত শব্দের অর্থ ঘর। আর মামুর শব্দের অর্থ প্রাণবন্ত, আবাদ, অধিক পদচারণ আছে এমন স্থান। ইসলামি বিশ্বাস মতে, বায়তুল মামুর হলো সপ্তম আকাশে মহান আল্লাহর ঘর। পৃথিবীতে যেমন পবিত্র কাবাঘরকে কেন্দ্র করে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করা হয়, তেমনি আকাশেও ফেরেশতারা বায়তুল মামুরকে ঘিরে সার্বক্ষণিক আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকেন। তাই একে বায়তুল মামুর বা আবাদ ঘর বলা হয়।
সুরা তুরের শুরুতে আল্লাহ তাআলা কয়েকটি বিষয়ের শপথ করেছেন। এর মধ্যে একটি বায়তুল মামুর। এসব বিষয়ের শপথ করে আল্লাহ তাআলা তাঁর আজাব সম্পর্কে মানুষকে সতর্ক করেছেন। এরশাদ হয়েছে, ‘কসম তুর পর্বতের, প্রশস্ত পত্রে লিখিত কিতাবের, বায়তুল মামুরের, সুউচ্চ ছাদের ও উত্তাল সমুদ্রের, তোমার পালনকর্তার শাস্তি অনিবার্য; তা কেউ প্রতিরোধ করতে পারবে না।’ (সুরা তুর: ১-৮)
মুফাসসিররা বলেছেন, বায়তুল মামুরের অবস্থান পবিত্র কাবাঘরের ঠিক ওপরে; সপ্তম আকাশে। মহানবী (সা.) মিরাজের রাতে বায়তুল মামুর পরিদর্শন করেছেন। হাদিসে এসেছে, তিনি বলেছেন, ‘এরপর আমরা সপ্তম আকাশে এলাম। আমাকে বায়তুল মামুর দেখানো হলো। আমি জিবরাইলকে এটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন, এটি বায়তুল মামুর। এখানে প্রতিদিন ৭০ হাজার ফেরেশতা নামাজ আদায় করেন। যখন তাঁরা বেরিয়ে যান, এরপর কিয়ামত পর্যন্ত আর ফিরে আসতে পারেন না।’ (বুখারি: ৩২০৭) এ হাদিস থেকে ফেরেশতাদের সংখ্যার বিশালতারও প্রমাণ পাওয়া যায়।
প্রতিটি আসমানে একটি করে কিবলা ও ইবাদতের স্থান রয়েছে। যেমন দুনিয়ার কিবলা বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবাঘর এবং প্রথম আসমানের কিবলাটির নাম বায়তুল ইজ্জত, তেমনি বায়তুল মামুর সপ্তম আসমানের কিবলা। ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, ‘প্রতিটি আসমানেই ইবাদতের ঘর রয়েছে, যেখানে সেই আসমানের বাসিন্দারা ইবাদত করেন। প্রথম আসমানে যে ঘরটি আছে, তার নাম বায়তুল ইজ্জত।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির)
ইবনে কাসির (রহ.) আরও বলেন, ‘সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম থেকে মহানবী (সা.)-এর বায়তুল মামুর পরিদর্শনের বিষয়টি প্রমাণিত। হাদিস থেকে বোঝা যায়, বায়তুল মামুরে ফেরেশতারা ইবাদত করেন, তাওয়াফ করেন—যেভাবে পৃথিবীর মানুষ পবিত্র কাবাঘর তাওয়াফ করেন। বায়তুল মামুর হলো সপ্তম আসমানের বাসিন্দাদের কাবাঘর।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির)
মক্কার পবিত্র কাবাঘর নির্মাণ করেছিলেন হজরত ইবরাহিম (আ.)। এর বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা তাঁকে সপ্তম আসমানে বায়তুল মামুরের পাশে অবস্থান করার সুযোগ দিয়েছেন। এ কারণেই মিরাজের রাতে মহানবী (সা.) হজরত ইবরাহিম (আ.)-কে বায়তুল মামুরের দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে থাকতে দেখেছেন। সেখানেই তাঁর সঙ্গে মহানবী (সা.)-এর সাক্ষাৎ হয়। (তাফসিরে ইবনে কাসির)
বিবার্তা/মাসুম
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]