শিরোনাম
শ্রমিকের অধিকার নিয়ে ইসলাম যা বলে
প্রকাশ : ০১ মে ২০২৩, ০৮:১৫
শ্রমিকের অধিকার নিয়ে ইসলাম যা বলে
ধর্ম ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

শ্রমিক ও মালিকের সম্পর্ক এবং দুই পক্ষের কর্তব্য ও অধিকার ন্যায়নীতি ও সমতার মাপকাঠিতে নির্ধারণ করেছে ইসলাম। 


শ্রমিক-মালিক নিছক প্রভু ও ভৃত্যের মতো নয়; বরং এটিকে ভাই ভাই সম্পর্ক বলে অভিহিত করেছেন মহানবী (সা.)। আল্লাহর নবী (সা.) বলেন,  ‘যারা তোমাদের কাজ করছে তারা তোমাদেরই ভাই। আল্লাহ তাদের তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছেন।’ (বুখারি শরিফ)


আল্লাহর নবী (সা.) শ্রমিকের অধিকার বিষয়ে অন্য এক হাদিসে উল্লেখ করেছেন, ‘তোমরা যা খাবে, তা থেকে তাদের (শ্রমিককে) খাওয়াবে এবং যা পরিধান করবে, তা তাকে পরিধান করতে দেবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)


শ্রমিকদের অধিকার সম্পর্কে ইসলামের নীতি হলো, ‘শ্রমিক নিয়োগ করলে তার মজুরি কত হবে, তা অবশ্যই তাকে জানিয়ে দিতে হবে।’ (হিদায়া)


নবিজি (সা.) খেটে খাওয়া শ্রমজীবীকে ভীষণ ভালোবাসতেন। মক্কা বিজয়ের দিন কাবা ঘরে প্রথম প্রবেশের সময় তিনি শ্রমজীবী বেলাল (রা.) ও খাব্বাব (রা.)কে সঙ্গে রেখেছিলেন। শুধু তাই নয়, হজরত বেলাল (রা.)কে ইসলামের প্রথম মুয়াজ্জিন বানিয়েছিলেন। অথচ ইসলাম পূর্ব যুগে হাবশী গোলাম বেলালের কোনো সামাজিক মর্যাদা ছিল না। ইসলাম বেলাল (রা.)কে সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছে। হজরত আনাস (রা.) বলেন, আমি দশ বছর নবিজি (সা.)-এর খেদমত করেছি। অথচ দীর্ঘ এ সময়ে তিনি কখনো আমাকে ধমক দেননি। তিনি খেতে বসলে আমাকে সঙ্গে নিয়েই খেতেন। একই প্লেটে খেতাম আমরা।


একই কথা মহানবী (সা.) অন্য এক হাদিসে উল্লেখ করেছেন এভাবে, ‘তোমরা অধীনস্থদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে এবং তাদের কোনো রকমের কষ্ট দেবে না। তোমরা কি জানো না, তাদেরও তোমাদের মতো একটি হৃদয় আছে। ব্যথা দানে তারা দুঃখিত হয় এবং কষ্ট বোধ করে। আরাম ও শান্তি প্রদান করলে সন্তুষ্ট হয়। তোমাদের কী হয়েছে যে তোমরা তাদের প্রতি আন্তরিকতা দেখাও না।’ (বুখারি)


শ্রমিকরাও মানুষ। তাদের শক্তি-সামর্থ্য ও মানবিক অধিকারের প্রতি লক্ষ রাখার বিষয়টি উল্লেখ করতে গিয়ে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘মজুরদের সাধ্যের অতীত কোনো কাজ করতে তাদের বাধ্য করবে না। অগত্যা যদি তা করাতে হয়, তবে নিজে সাহায্য করো।’ (বুখারি)


শ্রমিকের অধিকার নিশ্চিত না করার পরিণাম সম্পর্কে মহানবী (সা.) কঠোর বাণী উচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে আমি কঠিন অভিযোগ উপস্থাপন করব—যে ব্যক্তি কাউকেও কিছু দান করার ওয়াদা করে ভঙ্গ করে, কোনো মুক্ত-স্বাধীন ব্যক্তিকে বিক্রয় করে, যে তার মূল্য আদায় করে এবং যে ব্যক্তি অন্যকে নিজের কাজে নিযুক্ত করে পুরোপুরি কাজ আদায় করে নিল, কিন্তু তার মজুরি দিল না, ওরাই সেই তিনজন।’ (মিশকাত)


শ্রমিকদের প্রতি মালিক যাতে সহনশীল থাকে এবং তার ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দেয়, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়ে আল্লাহর নবী (সা.) এক হাদিসে বলেছেন, ‘মজুর-চাকরদের অপরাধ ৭০ বার পর্যন্ত ক্ষমা করে দাও।’ (তিরমিজি)


শ্রমিকের মজুরি যথাসময়ে পরিশোধ করার প্রতি গুরুত্বারোপ করে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘মজুরকে তার গায়ের ঘাম শুকানোর আগেই মজুরি পরিশোধ করে দাও।’ (ইবনে মাজাহ)


ইসলাম শ্রমের শ্রেণিবিন্যাসকে স্বীকার করলেও মানবিক মূল্যবোধ ও মৌলিক মানবাধিকারের ক্ষেত্রে সবাই সমান। রাসুলুল্লাহ (সা.) ব্যবসা, কৃষি ও দ্বীনচর্চাকে উৎসাহিত করেছেন।


আবার মর্যাদার ক্ষেত্রে সব শ্রমিক সাধারণভাবে সমান ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, শ্রমজীবী আল্লাহর বন্ধু। ইসলাম শ্রমিককে বলেছে, দক্ষ, বিশ্বস্ত ও দায়িত্ববান হতে। কোরআনে আদর্শ শ্রমিক হিসেবে হজরত মুসা (আ.)-এর বৈশিষ্ট্য এভাবে বর্ণিত হয়েছে, হে পিতা! আপনি তাকে শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ দিন। নিশ্চয় আপনার শ্রমিক হিসেবে সে-ই উত্তম যে সামর্থ্যবান ও বিশ্বস্ত। (সুরা কাসাস, আয়াত : ২৬)


ইবনে মাজায় বর্ণিত একটি হাদিসে হযরত আবু বকর (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, ক্ষমতার বলে অধীনস্থ চাকর-চাকরানি বা দাস-দাসীর প্রতি মন্দ আচরণকারী বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, কেউ তার অধীন ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে এক দোররা মারলেও কেয়ামতের দিন তার থেকে এর বদলা নেওয়া হবে।


বিবার্তা/এসবি

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com