
বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে রক্তাক্ত পন্থায় দমন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধান পরিপন্থি হিসেবে আখ্যায়িত করে শিক্ষার্থীদের ওপর সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সশস্ত্র হামলার তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ।
বাংলাদেশ ন্যাপ এর চেয়ারম্যান ও মহাসচিব জেবেল রহমান গানি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেও হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
১৬ জুলাই, মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।
বিবৃতিতে হামলা, মামলা ও দমন-পীড়নের পথ পরিহার করার দাবি জানিয়ে তারা বলেন, কোটা আন্দোলনকারীদের প্রতিপক্ষ বানিয়ে সরকার পরিস্থিতিকে সংকটাপন্ন করে ফেলেছে। সারাদেশে কোটা আন্দোলনকারী নিরীহ নিরপরাধ ছাত্রদের উপর ছাত্রলীগের হামলা পরিস্থিতিকে আরো বেশি জটিল করে তুলছে। যার পরিণতি খুব বেশি শুভ হবে না।
ন্যাপ নেতৃদ্বয় আরো বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা করে ছাত্রলীগ; যথারীতি তাদের অনেকের মাথায় ছিল হেলমেট। দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পিছু হটতে শুরু করলে তাদেরকে ব্যাপক মারধর করা হয়। শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই অবস্থা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য শুভ বিষয় নয়।
তারা বলেন, ঘটনাপ্রবাহ যেদিকে মোড় নিচ্ছে, অবস্থাদৃষ্টে হচ্ছে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিপক্ষ ভাবছে সরকার। শিক্ষার্থীরা অপমানিত হয়েছেন, তাদের মর্যাদায় আঘাত লেগেছে। তা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীরা যে ‘তুমি কে, আমি কে, রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগান দিয়েছেন, সেটা সঠিক সিদ্ধান্ততো নয়ই বরং এটি হঠকারী সিদ্ধান্ত। তাদের বুঝতে হবে একটা স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনে অনেক পক্ষ থাকে। সে সব পক্ষের প্রত্যেকের নিজ নিজ স্বার্থ ও অ্যাজেন্ডা থাকে, অন্তর্ঘাত ঘটানোর প্রচেষ্টা থাকে। ফলে শিক্ষার্থীদের অবশ্যই সচেতন থাকা দরকার ছিল, কেউ তাদের আন্দোলনকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে কি না।
নেতৃদ্বয় বলেন, বৈষম্যমূলক কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্র বা সরকারের প্রতিপক্ষ নয়। কিন্তু, হঠাৎ করে যে উত্তপ্ত যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার দায় সরকার এড়াতে পারে না। কেননা কোটা সংস্কার না করে বাতিল করেছে সরকার। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের নামিয়ে দিয়ে, শিক্ষার্থীদের পিটিয়ে হাসপাতালে পাঠিয়ে, মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দিয়ে শিক্ষার্থীদের দমানোর চেষ্টা আর যাই হোক কোন শুভ ফলাফল বয়ে আনবে না।
তারা বলেন, কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের জন্য যে দাবি উঠেছে তা নাকচ করে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ২০১৮ সালে অনেকটা তাড়াহুড়ো করেই কোটা ব্যবস্থা পুরোপুরি বাতিল করার ঘোষণা দিয়ে পরিপত্র জারি করা যে সরকারের দূরদর্শী-বস্তুনিষ্ঠ সিদ্ধান্ত ছিল না, আজ তা প্রমাণিত। বর্তমানে চলমান কোটা আন্দোলনকে আদালত অবমাননা বলে অভিহিত করা হচ্ছে। এটাও যুক্তিযুক্ত নয়। আদালত, মুক্তিযুদ্ধ তথা মুক্তিযোদ্ধার মত স্পর্শকাতর বিষয়গুলোকে ঢাল না বানিয়ে সরকারের উচিত চলমান আন্দোলন নিরসনের মহৎ লক্ষ্যে যৌক্তিক, কল্যাণকর, বস্তুনিষ্ঠ ও গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া এবং এ জন্য আলোচনা করা।
বিবার্তা/জবা
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]