বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন
প্রকাশ : ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ১৫:২৪
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ভুয়া ভোট শেষ হতে না হতেই শেখ হাসিনা নিশিরাতের সংসদের মেয়াদপূর্ণ হওয়ার আগেই গেজেট জারি করেছেন। তড়িঘড়ি শপথ ও নজিরবিহীন দ্রুততায় সরকার গঠনের ঘটনা প্রমাণ করে এক অজানা ভীতি—আতঙ্ক ঘিরে ধরেছে তাকে।


১২ জানুয়ারি, শুক্রবার দুপুরে নয়া পল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।


রিজভী বলেন, বাংলাদেশে রাজনীতির ইতিহাসে ডামি প্রার্থী, ডামি ভোটার, ডামি এজেন্ট, ডামি পর্যবেক্ষক, ডামি ফলাফল, ডামি এমপি, ডামি শপথের মধ্যদিয়ে গতকাল ওয়ান ইলেভেনের কৃষ্ণতম দিবসে একদলীয় ফ্যাসিবাদের হুংকারে আরেকটি কৃষ্ণতম মেকি সরকারের যাত্রা শুরু হয়েছে। ভুয়া ভোট শেষ হতে না হতেই শেখ হাসিনা নিশিরাতের সংসদের মেয়াদপূর্ণ হওয়ার আগেই গেজেট জারি, তড়িঘড়ি শপথ ও নজিরবিহীন দ্রুততায় সরকার গঠনের ঘটনা প্রমাণ করে এক অজানা ভীতি—আতঙ্ক ঘিরে ধরেছে তাকে। সমস্ত কিছু অবৈধ—ভুয়া—আর জালিয়াতির আবর্তে তাসের ঘরের ওপর সিংহাসন পাতলে এমন নির্ঘুম অনিশ্চয়তা আতঙ্কে জীবন পতিত হয়। দেশের জনগণ এবং গণতান্ত্রিক বিশ্ব নির্বাচন তো প্রত্যাখ্যান করেছে। শেখ হাসিনাকে জনগণ ডামি নির্বাচন বর্জন করে চূড়ান্তভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। এর সাথে জড়িত প্রক্রিয়া, ব্যক্তি, ফলাফল, শপথ, সংসদ, সরকার সবকিছুই প্রত্যাখ্যাত। অগ্রহণযোগ্য।


তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারি তথাকথিত নির্বাচনটি ছিল গণতন্ত্রকামী জনগণের আন্দোলনের পক্ষে এবং শেখ হাসিনার ডামি নির্বাচন বর্জনের পক্ষে একটি সুস্পষ্ট গণরায়। এই ডামি সরকার ওয়ান ইলেভেনের ধারাবাহিকতা মাত্র। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি এই দিনে গভীর ষড়যন্ত্রের নীলনকশার মাধ্যমে দেশটাকে প্রভুদের করদ রাজ্যে পরিণত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিলো, তারই ধারাবাহকতায় আবারও সেই একই দিনে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করলো ডামি ভোটের অসাংবিধানিক, প্রভুদের আজ্ঞাবাহী হাসিনার সরকার। দেশকে তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করার সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র তারা সফল করলো। দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব—গণতন্ত্রের বিনিময়ে মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের বাকশালের দ্বিতীয় সংস্করণ চালু করলেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ—ডামি লীগ—আমরা আর মামুরা মিলে দেশে ঘোষণা ছাড়াই একদলীয় সংসদীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করলেন অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিদেশি পত্র পত্রিকা মিডিয়া এবং রাজনীতি বিশ্লেষকরা সোচ্চার কণ্ঠে বলছে, বাংলাদেশে একতরফা একদলীয় ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে একদলীয় রাষ্ট্র কায়েম করেছেন শেখ হাসিনা। এটা বাকশাল-২ । শেখ হাসিনার এই বাকশালীয় ডামি তাসের ঘর জনগণ চূর্ণ করে দেয়ার প্রস্ততি নিচ্ছে।


বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, নির্বাচনের দিনে প্রধান নির্বাচন কমিশনের দিবানিদ্রায় থাকা পাতানো ডামি নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে আওয়ামী লীগ—ডামি আর তাদের ডামি শরীকদের মধ্যেই শুরু হয়েছে গৃহদাহ। গত বুধবার শেখ হাসিনা গতবার রাতে ভোট হওয়ার স্বীকারোক্তি দিয়ে “এবার দিনের ভোট রাতে হয়েছে বলার ক্ষমতা নেই” বলে তাদের দলের অভ্যন্তরীণ বিবাদ—গৃহদাহ নিরসন করতে চাইলেও ব্যর্থ হচ্ছেন। আওয়ামী লীগের পরাজিত নেতারাই শেখ হাসিনাকে অবৈধ ভোটের প্রধানমন্ত্রী উপাধি দিচ্ছেন। এবার যে নির্বাচনের নামে ভোট ডাকাতি হয়েছে তা নিজেরাই সংবাদ সম্মেলন করে তুলে ধরছেন। এতোদিন দেশের সমস্ত জনগণ বলেছে, আমরা বলেছি। আর এখন তারা নিজেরাই গত তিনটি নির্বাচনে ভোট ডাকাতির সমস্ত প্রক্রিয়ার কথা বলছেন। সংসদে বিদ্যুৎ বিক্রি করা এক গানের শিল্পী বলেছেন, মৃত মানুষ বিদেশে আছে তাদের ভোটও দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থী ও দলটির প্রচার সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ বলেছেন,নির্বাচনে অলৌকিক শক্তি কাজ করায় ভোটে কারচুপি হয়েছে। একচেটিয়া ভোট ডাকাতি হয়েছে। বরগুনা—১ আসনের আওয়ামী লীগের পরাজিত প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু বলেছেন, ভোটের ফল একহাতে তৈরি করা হয়েছে। একজন বলেছেন, গণভবন থেকে ফলাফল এসেছে। পরাজিত কুইন্সপার্টির এক নেতা বলেছেন, শেখ হাসিনা তামাশার নাটক করেছেন। তার ক্ষমতায় থাকার লিপ্সা পূর্ণ করতে আমাদের সিঁড়ি বানিয়ে এখন ছুড়ে ফেলেছে। কাকে কত টাকা দিয়ে নির্বাচনে নেয়া হয়েছে তা প্রকাশ্যে হিসাব দিচ্ছেন পরাজিত প্রার্থীরা।


থলের বিড়াল সব বেরুচ্ছে। সব অপকর্মের খবর ফাঁস করছে। এতো দিন বাংলাদেশ তথা বিএনপি বলেছে শেখ হাসিনা ভোট ডাকাত আর এখন আওয়ামী লীগের লোকজনই বলছে ‘শেখ হাসিনা ভোট চোর, শেখ হাসিনা ভোট ডাকাত’!


তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণের গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষার প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। প্রতারণার মাধ্যমে শেখ হাসিনার উপহার দেয়া দিবানিদ্রায় থাকা নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে ভেজাল নির্বাচন ও কন্ঠরোধের গণতন্ত্র তারা প্রত্যাখান করেছে। বিরোধীদের সমালোচনার ওপর সরকারের বুলডোজার চালানোর ঘটনা সর্বজনবিদিত। এই প্রতারণার ডামি নির্বাচনকে কেউ স্বীকৃতি দেয়নি। অচিরেই এই সরকার চোরাবালিতে হারিয়ে যাবে। কারণ এরা অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্য নিপীড়নের সকল রেকর্ড ভেঙ্গে বিশ্বমানবতার শত্রু হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। এদের নিরাপত্তা বাহিনীর অত্যাচার ও উৎপীড়নের কাহিনি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। যেহেতু জনসমর্থনহীন সরকার জবাবদিহিতার ধার ধারে না, সেহেতু আইন শৃঙ্খলা বাহিনী দিনকে দিন বেপরোয়া ও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। এরা এমন একটি দুর্নীতির সংস্কৃতি তৈরি করেছে, যার মাধ্যমে তারা কল্পস্বর্গ বানিয়ে আনন্দে আত্মহারা। আর এদিকে সাধারণ মানুষ ক্ষুধা, দারিদ্র আর অনাহারে দিন কাটাচ্ছে।


বিবার্তা/রুবেল/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com