চোরাগোপ্তা হামলা করে নির্বাচন বানচাল করা যাবে না : হানিফ
প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২৩, ১৪:৫৫
চোরাগোপ্তা হামলা করে নির্বাচন বানচাল করা যাবে না : হানিফ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

বাসে-ট্রেনে আগুন দিয়ে, চোরাগোপ্তা হামলা করে দেশের রাষ্ট্রীয় কাজ থামানো যাবে না উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, এগুলো কোনো রাজনৈতিক কর্মর্সূচি নয়; এটা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। তারা ভেবেছে বাসে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে সম্পত্তি ধ্বংস করে বোধহয় নির্বাচন বানচাল করা যাবে। নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী উৎসবমুখর পরিবেশে হবে। নির্বাচন বানচাল করা যাবে না।


২১ নভেম্বর, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জেল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘হরতাল-অবরোধ আর আগুন সন্ত্রাস: বন্ধ হোক এই অপরাজনীতি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আলোচনা সভার যৌথ আয়োজন করে গৌরব’৭১ ও স্বাধীনতা সাংবাদিক ফোরাম।


বিএনপি জঙ্গি দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে উল্লেখ করে মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, বিএনপির সাথে আছে আরেকটি দল জামায়াত। এদেরকে আমি কখনো রাজনৈতিক দল মনে করি না। ধর্মভিত্তিক জঙ্গি দল জামায়াতে ইসলামী। এরা একাত্তরে তাদের জঙ্গিপনা দেখিয়েছিল হত্যা, খুন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে। তাদের এই ধারা অব্যাহত আছে। এদের সাথে বিএনপি এখন জঙ্গি দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।


তিনি বলেন, পেট্রোল দিয়ে বাসে-ট্রেনে আগুন দেয়া, মানুষকে আহত করা এগুলো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। এই কর্মকাণ্ডের সাথে যারা জড়িত তাদেরকে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করে বিচার করা হবে। তাদের কি রাজনৈতিক সিল আছে, সেটা দেখা হবে না। যারা আগুন দেয় তারা সন্ত্রাসী। এদেরকে সন্ত্রাসী হিসেবেই বিবেচিত করা হবে।


হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধশীল। যার কারণে এই সমস্ত সন্ত্রাসীদেরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দমন করুক সেটা আমরা চাই। এর চেয়ে বেশিমাত্রায় তারা যদি বাড়াবাড়ি করে আওয়ামী লীগও জানে কিভাবে সন্ত্রাসীদের রাজপথে শায়েস্তা করতে হয়।


মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন, সংগ্রাম করার পর দেশ স্বাধীন হয়েছে। কারো দয়ায় বা গোলটেবিলে আলোচনায় বসে স্বাধীনতা আসেনি। ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ আর ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক উন্নত রাষ্ট্র হবে। আজ বঙ্গবন্ধু নেই কিন্তু তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কারণে চরম দরিদ্র দেশ আজ বিশ্বের বুকে উন্নয়শীল রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃত। ২০৩১ সালের মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবো এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নের সোনার বাংলা হবে সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে হয়, একদিকে দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি হচ্ছে অন্যদিকে মানুষের মধ্যে বিশেষ করে রাজনৈতিক অঙ্গনে নীতি-নৈতিকতা, মানবিক অবক্ষয়ের চরম বহিঃপ্রকাশ আমরা দেখতে পাচ্ছি।



তিনি বলেন, আমরাও আন্দোলন সংগ্রাম করেছি। বিএনপির সাথে কিছু সমমনা দল আন্দোলন করে বলছে তারা গণতন্ত্র কায়েম করতে চায়। কোন গণতন্ত্র আপনারা কায়েম করতে চান? মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা, আগুন দিয়ে মানুষের সম্পত্তি ধ্বংস করা, এর নাম কি গণতন্ত্র? আপনারা কোন গণতন্ত্র কায়েম করতে চান?


আওয়ামী লীগের এই সিনিয়র নেতা বলেন, বিএনপির নেতারা প্রতিদিন কথা বলেন, সভা-সমাবেশ করেন তারপরও বলেন দেশে গণতন্ত্র নাই। কথা বলার অধিকার নাই। তারা এরকম নির্লজ্জ মিথ্যাচার করে যাচ্ছে। ২৮ অক্টোবরের পর থেকে তারা রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে ১৮৬টি বাস-ট্রাক আগুন পুড়িয়েছে। কেন? রাজনীতির সাথে আগুনের সম্পর্ক কী? এটা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। এগুলো জঙ্গি বা সন্ত্রাসীদের কাজ, এটা কিভাবে গণতন্ত্র হয়। আপনারা গণতন্ত্রের কথা বলেন, মানবতার কথা বলেন, অন্যদিকে আগুন দিয়ে নিরীহ মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেন, এটা কোন গণতন্ত্র, কোন মানবতা?


তিনি বলেন, এই দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখলের পরে ১২০০ মুক্তিযোদ্ধাকে বিনা বিচারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছে। নিজেকে খুনি হিসেবে প্রমাণ করেছেন। তার রক্তের উত্তরাধিকার তার ছেলের নেতৃত্বে এই দেশে হত্যা, খুন হবে এটা তো স্বাভাবিক।


হানিফ বলেন, এটা সভ্য দেশ। একবিংশ শতাব্দীতে এসে এমন অসভ্য, জংলি আচরণ বরদাশত করা যায় না। আজকে বিশ্ব দেখছে ফিলিস্তিনের মুসলিমদের ওপরে নির্যাতন হচ্ছে। নিষ্পাপ, নারী শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে, এই বর্বরোচিত কর্মকাণ্ড বাংলাদেশেও হচ্ছে।


রাতের অন্ধকারে বাসে আগুন দিচ্ছে। বাসে ঘুমিয়ে ছিল, তাকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। কী অপরাধ ছিল নিষ্পাপ মানুষের? আজকে তারা নিঃস্ব হয়ে গেছে। তাদের পরিবার অমানবিক জীবন যাপন করছে। তাদের মানবতা কোথায়? এদের মানবতা কে দেখবে? কোন অধিকারে আপনারা অন্যের সম্পত্তি পুড়িয়ে দেন, হত্যা করেন।


তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের পুত্র তারেক জিয়া ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে হাওয়া ভবন বানিয়ে দেশের সম্পদই শুধু লুট করেনি; এই বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র বানিয়েছিল। দলকে সন্ত্রাসী সংগঠন বানিয়েছে এবং দেশেকে জঙ্গিবাদের চারণভূমি বানিয়েছিল। তখন দেশবাসী দেখেছে, বাংলা ভাই, আব্দুর রহমানের নেতৃত্বে রাজপথে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মিছিল করা। অবাক বিস্ময়ের ব্যাপার ছিল। এই বাংলাদেশে অন্যদেশের সন্ত্রাসী, জঙ্গিদের ট্রেনিং ক্যাম্প স্থাপন করেছিল। সে এখনো বাইরে বসে এই দেশে সন্ত্রাস করাচ্ছে। ২০১২, ২০১৩ সালে সন্ত্রাস করেছে। ২০১৪ সালে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে। পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছে।


তারেক রহমানের কারণে বিএনপি নেতারা নিজেরাই বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিএনপি নেতাদের কাছে সাংবাদিক ভাইয়েরা জানতে চেয়েছেন আপনারা যদি রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন অপানাদের প্রধানমন্ত্রী কে হবে? বলে সেটা পরে দেখা যাবে। বলতে চায় না। তাদের নেতা তো তারেক রহমান। এই কথা তারা বলতে পারে না। কারণ তারা জানে তারেক রহমান সাধারণ মানুষের কাছে এতটাই ঘৃণিত তার নাম শুনলে মানুষ ঘৃণা করবে। এজন্য তারা নাম বলতে লজ্জা পায়, কুণ্ঠিত বোধ করে।



গণমাধ্যমে প্রতি আহবান জানিয়ে আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আপনারা খবরে বলেন, বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। কোন দুর্বৃত্ত? দুর্বৃত্ত শব্দটা কেন আসে? বাসে আগুন দিয়েছে বিএনপি নেতা-কর্মীরা, হাতেনাতে ধরাও পড়েছে। একজন, দু'জন নয়। সিসিটিভিতে দেখা গেছে কারা আগুন দিয়েছে। গণমাধ্যমেই তো আমরা দেখেছি। এরপরও কেন বলেন দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছে। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা আগুন দিয়েছে এভাবে বলতে কেন আপনাদের শংকা হয়? কেন আপনারা বলেন না? তারা আগুন দিচ্ছে বলতে অসুবিধা কোথায়?


টিভিতে টকশো হয়, অনেকেই আসেন। বিএনপির সঙ্গে সমমনা দল আছে, নামসর্বস্ব দল। তাদের নেতারা এসে ইনিয়ে বিনিয়ে বলার চেষ্টা করেন এটা বিএনপি নেতাকর্মী করেনি। সরকারের ওপরই দোষ চাপাতে চায়।


মিথ্যাচারের একটা সীমা থাকে। আমি অবাক হয়ে যাই, এরা রাজনীতি করে জনগণের জন্য? যারা আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে আবার এদের পক্ষে সাফাই এরা। লজ্জিত হওয়া উচিত। যারা বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করে, মানুষের সম্পত্তি ধ্বংস করে এদের পক্ষে যারা সাফাই গায় আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করবো তাদের আইনের আওতায় এনে বিচার করা উচিত, বলেন তিনি।


আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা'র সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট সানজিদা খানম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ সভাপতি মানিক লাল ঘোষ।


আলোচনা সভার শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন গৌরব ’৭১-এর সাধারণ সম্পাদক এফ এম শাহীন। সঞ্চালনা করেন স্বাধীনতা সাংবাদিক ফোরাম নেতা ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আলম।


এর আগে আলোচনা সভার শুরুতে বিএনপি-জামায়াতের অবরোধে দেয়া আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত দশজন বাস মালিক ও শ্রমিক নিজেদের অবস্থা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। এসময় তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।


বিবার্তা/সোহেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com