রাজনীতি
গণতন্ত্রের প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের অঙ্গীকার আমাদের সাহস জোগাচ্ছে: ফখরুল
প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২৩, ১৯:২২
গণতন্ত্রের প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের অঙ্গীকার আমাদের সাহস জোগাচ্ছে: ফখরুল
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

গণতন্ত্রের প্রতি পশ্চিমা বিশ্বের যে অঙ্গীকার, তা সাহস জোগাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।


তিনি বলেন, আমরা একা নই। পশ্চিমা বিশ্ব গণতন্ত্রের পক্ষে কমিটেড (অঙ্গীকারবদ্ধ)। এই অঙ্গীকার আমাদের সাহস জোগাচ্ছে। সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করছে, এটি অস্বীকার করার তো উপায় নেই।


১৫ অক্টোবর, রবিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে দেশীয়-আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা এবং আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এই সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন। এই সেমিনারের আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)।


মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল প্রধানমন্ত্রী বলেই দিলেন। তোমরা যে যা বলো ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, রাজনৈতিক দলগুলো যাই বলি না কেন, উনার সোনার হরিণ চাই। ক্ষমতায় যেতেই হবে। এবারও একই কায়দায় নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন।’


প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, বেআইনিভাবে রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করে আছেন, প্রধান সংকট সেখানে। তিনি বলেছেন, যেভাবেই হোক নির্বাচন হবে। আমরাও চাই নির্বাচন হোক। সে নির্বাচনে অবশ্যই জনগণকে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারতে হবে৷ শেখ হাসিনা চাইলেন বিনা ভোটারের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত হবেন, এবার সেটা আর হবে না।


এবার মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০১৪-২০১৮ সালে যা করেছেন, সেটা ২০২৪ সালে করতে পারবেন না। এবার মানুষ ঘুরে দাঁড়িয়েছে, তাতে সেটা সম্ভব হবে না৷ আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আন্দোলন আরও বেগবান করতে হবে৷ রাজপথে বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়েই জনগণের দ্বিতীয় মুক্তি সম্ভব হবে৷


সেমিনারের শুরুতে একটি তথ্যচিত্রের মাধ্যমে দলীয় সরকারের অধীনে ২০১৮ সালের নির্বাচন কেমন ছিল, তা তুলে ধরা হয়। সেমিনারে ‘নো কমেন্টস: রাতের ভোট ২০১৮’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে লেখা বইটি সম্পাদনা করেছেন বাবুল তালুকদার।


সেমিনারের সূচনা বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটি সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে কার্যত ভোট হয়েছে আগের রাতে৷ এই ঘটনা দুঃখজনক, কলঙ্কময়। বাংলাদেশের মানুষ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন৷ এই বইটি বাংলাদেশের ভুয়া নির্বাচন নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সংকলন। এর মধ্য দিয়ে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের নামে বাংলাদেশে যে চরম প্রতারণা হচ্ছে, তা তুলে ধরা হয়েছে।


নির্বাচনে জালিয়াতি করা নিয়ে সরকারি দলের লজ্জাবোধ নেই মন্তব্য করে আবদুল মঈন খান বলেন, গত নির্বাচনের সময় সরকারি দলের সদস্য ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মনে কোনো লজ্জা বা অপরাধবোধ ছিল না৷ ভোটের আগের রাতে অহংকারের সঙ্গে প্রশাসনিক শক্তি ব্যবহার করে জালিয়াতি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ আরেকটি নির্বাচনের চেষ্টা করছে, সে কারণে অতীতের অন্যায় নতুন করে তুলে ধরা হচ্ছে।


দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘বিএনপি চেষ্টা করছে, সরকার যেন অসাধু উপায়ে নির্বাচন করতে না পারে। খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে বিএনপি কোনো নাটক করেনি। তিনি মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন, আপনারাই (সরকার) তাঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছেন।’


বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর বলেন, ‘পিটার হাসকে (বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত) ধন্যবাদ জানাই। আমাদের জন্য অবতার হয়ে এসেছেন। উনাকে আরও সাহস দেওয়া দরকার। বাবারে বাঁচা, রক্ষা কর, আছি তোমাদের সঙ্গে। তোমরাও ডেমোক্রেটিক কান্ট্রি (গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র), আমরাও ডেমোক্রেটিক কান্ট্রি।’


নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান (মান্না) বলেন, ‘সামনে যেতে পারছিলাম না। সেই আটকে থাকা দরজা খুলে দিয়েছে ভিসা নীতি ও র‍্যাব কর্মকর্তাদের নিষেধাজ্ঞা। এই দরজা দিয়ে আমাদের সামনে যেতে হবে।’


মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ওরা (যুক্তরাষ্ট্র) আমাকে চায় না। ওরা না চাইলে কেউ থাকতে পারে না। ফলে আশা তৈরি হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আমেরিকা, ইউরোপকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। এর জবাব আমেরিকা কীভাবে দেবে? আমেরিকা গায়ে পানি লাগাবে না, কিন্তু গোসল করতে চায়।’ পূজার পরে বৃহত্তর আন্দোলন করার ঘোষণা দিয়ে মাহমুদুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক শক্তি সহায়তা করবে, কিন্তু এখানে বেল (ঘণ্টা) আমাদেরই বাজাতে হবে।


সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন খান। তিনি বলেন, গণতন্ত্র না থাকার কারণেই পুনরুদ্ধারের কথা বলা হচ্ছে। ফ্যাসিস্ট সরকারকে সরানোর দুটি পথ কনসেনসাস (ঐক্যমত) অথবা কমপালশন (বাধ্য করা)। প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রীরা বলছেন, যেভাবেই নির্বাচন করবেন। ঐকমত্যের দরজা আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।


সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বরকতউল্লা বুলু প্রমুখ।


বিবার্তা/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com