চট্টগ্রামের রোডমার্চ থেকে প্রতিরোধের ডাক বিএনপির
প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৩, ০০:৩৯
চট্টগ্রামের রোডমার্চ থেকে প্রতিরোধের ডাক বিএনপির
মোহাম্মদ ইলিয়াস, চট্টগ্রাম থেকে
প্রিন্ট অ-অ+

সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ে চট্টগ্রামে সবশেষ রোডমার্চ থেকে প্রতিরোধের ডাক দিয়েছে বিএনপি৷ এ সময় সবাইকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছে বিএনপির নেতারা। তারা বলেন, খুব শীঘ্রই সরকার পতনের ডাক আসবে। সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। রাজপথ দখল নিতে হবে। সরকার পতন নিশ্চিত করতে হবে।


বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) রাতে কুমিল্লা-চট্টগ্রাম রোডমার্চ শেষে নগরীতে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে সমাবেশে নেতারা এসব কথা বলেন।


হুশিয়ারি উচ্চারণ করে নেতারা বলেন, এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করছি। আগামীতে আওয়ামী লীগ দলীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যদি কর্মসূচিতে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করে তাহলে প্রতিরোধ করা হবে।


বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রামের সমাবেশ থেকে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কর্মসূচি ঘোষণা করে তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের আন্দোলনের জন্য সাহস নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে বলেন। তিনি বলেন, দুর্গাপূজার আগে কঠোর কর্মসূচি দিচ্ছি না৷ সরকারের শুভ বুদ্ধির উদয় না হলে জনতা ক্ষমতা দখল করবে৷ ঢাকার সমাবেশ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি দেওয়া হবে।


কর্মসূচির মধ্যে আছে- ৭অক্টোবর ঢাকায় শিক্ষক সমাবেশ। দলের চিকিৎসাধীন চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার দাবিতে ৯অক্টোবর দেশব্যাপী সমাবেশ৷ এক দফা দাবিতে ঢাকায় ১২ অক্টোবর ছাত্র সমাবেশ; ১৪ অক্টোবর খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসায় সারাদেশে অনশন; ১৬ অক্টোবর ঢাকায় যুব সমাবেশ ও ১৮ অক্টোবর ঢাকায় জন সমাবেশ৷



বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের অধীনে নির্বাচনের না যাওয়ার বিষয়ে অটল থাকতে হবে৷ মিথ্যা মামলার সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। রাজপথ দখল করে এসবের ফয়সালা করতে হবে। বিএনপি মহাসচিব অভিযোগ করেন, সরকার বিদেশ থেকে ধ্বংসাত্মক ইউরোনিয়াম নিয়ে এসেছে৷ এগুলো ভোট চুরির প্রকল্পের অংশ।


নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, রাজপথ দখল করে রাখতে পারবেন? তখন নেতাকর্মী বলেন পারবো। তিনি আবার বলেন রাজপথ দখল করে রাখতে হবে, শান্তিপুর্ণভাবে দখল করতে হবে।


বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আজকে আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য যুদ্ধ করছি। এ সরকারকে বিদায় করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। ভোট চুরির প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না। অতি শীঘ্রই ডাক আসবে। প্রস্তুত থাকুন। তখন আমাদের ঠিকানা হবে শুধুই রাজপথ। মানুষের ধৈর্য ভেঙে গেছে। মানুষ রাস্তায় নেমেছে। বাংলাদেশের মানুষ রাস্তা দখল করে ফেলেছে। কেউ ঘরে ফিরে যাবে না। রাজপথেই ফয়সালা হবে।


তিনি বলেন, বিরোধী নেতাকর্মীদের হত্যা করছে সরকার। বহু মানুষকে গৃহহারা করেছে। তারপরও আমরা অসহিংস আন্দোলন করে যাচ্ছি। তারপরও যদিও দলীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্মসূচিতে বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করে করে তাহলে প্রতিরোধ করবো। কোনো অপশক্তি আমাদের পরাজিত করতে পারবে না।


গতকাল রাত থেকেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। সকালে শুরু হয় মুষলধারে। বৃষ্টির মধ্যেই উদ্বোধনী সমাবেশে জড়ো হন নেতাকর্মীরা। সকাল ১০টার দিকে বৃষ্টি থেমে গেলে উদ্বোধনী সমাবেশ শুরু হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মহাসচিবের বক্তব্যের পর শুরু হয় রোডমার্চ। বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল নিয়ে হাজার হাজার নেতাকর্মী রোডমার্চের বহরে যোগ দেন। বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ বাড়ি থেকে বের হয়ে রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে রোডমার্চের বহরকে স্বাগত জানান।


দলীয় ও জাতীয় পতাকা হাতে কয়েক শো গাড়ি যোগে ছুটে চলে রোডমার্চ। নেতাকর্মীরা পিকাপ, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, মিনি ট্রাক, মোটরসাইকেলে শোডাউন দেন। পথে পথে স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিবাদনের জবাব দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। সঙ্গে ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী৷



রোডমার্চের বহর চট্টগ্রাম পৌঁছতে সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়। দীর্ঘ পথে তিনটি পথসভাসহ ৫টি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। রোডমার্চের দ্বিতীয় পথসভায় অনুষ্ঠিত হয় কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার সুয়াগাজীতে। এতে ব্যাপক শোডাউন করেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরী।


কুমিল্লা, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীর বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী রোডমার্চের বহরে যোগ দেন। বান্দরবান থেকে রোডমার্চে যোগ দেয়া বিএনপি নেতাকর্মীদের গাড়িবহরে আওয়ামী লীগ হামলা চালায় বলে অভিযোগ করে বিএনপি। ৪০টি গাড়ি ভাংচুর করা হয়। হামলায় বিএনপির ২০ নেতাকর্মী গুরুতর আহত হন।


ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্যাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, আবদুল্লা আল নোমান, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নাল আবদীন ফারুক, অধ্যাপক জয়নাল আবদীন ভিপি, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, যুগ্ম-মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, কৃষক দল সভাপতি হাসান জামিল তুহিন, তাতী দলের আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাহ উদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী, ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল সহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।


বিবার্তা/এমই/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com