উন্নত আধুনিক কুষ্টিয়া গড়ে তোলাই আমার লক্ষ্য: হানিফ
প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৯:৩২
উন্নত আধুনিক কুষ্টিয়া গড়ে তোলাই আমার লক্ষ্য: হানিফ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

সারা বাংলাদেশের মধ্যে কুষ্টিয়াকে 'মডেল জেলা' হিসেবে পরিণত করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুুবউল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ যেভাবে বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিত। ঠিক তেমনি করে কুষ্টিয়াকে উন্নত জেলা হিসেবে মডেল জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। সন্ত্রাস-দারিদ্র‍রর‌্যমুক্ত উন্নত আধুনিক কুষ্টিয়া গড়ে তোলাই আমার লক্ষ্য।


১৭ সেপ্টেম্বর, রবিবার বিকেলে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার আব্দালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের উদ্যোগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে আয়োজিত মতবিনিময় সভা ও কর্মীসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।



মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, আমরা রাজনীতি করি মানুষের কল্যাণের জন্য, শান্তির জন্য। এই জনপদের মানুষ আমাকে নির্বাচিত করেছিলেন। নির্বাচিত হওয়ার পর অবহেলিত কুষ্টিয়াকে কিছুটা হলেও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছি। কুষ্টিয়াকে ঘিরে আমার অনেক পরিকল্পনা ছিল কিন্তু লক্ষ্যে পুরোপুরি পৌঁছাতে পারিনি।


তিনি বলেন, কুষ্টিয়ার মানুষ শান্তিতে বসবাস করবে, মা-বোনেরা নিরাপদ থাকবে সেই চেষ্টা করেছি। কতটুকু সফল হয়েছি জানি না। তবে আমি কখনো কোনো অন্যায় কাজকে প্রশ্রয় দেইনি। যখনই কেউ অন্যায় করেছে তার বিরুদ্ধে আমার অবস্থান ছিল। ভবিষ্যতেও যেকোনো অন্যায় কাজকে আমি প্রতিহত করবো।


আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী চলতি বছরের ডিসেম্বরে অথবা আগামী বছরের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হবে। ঠিক একই সময়ে আমাদের দেশের অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং তাদের দোসর জামায়াতে ইসলাম মিথ্যাচার করে বেড়াচ্ছে। নির্বাচনের বিরুদ্ধে কথা বলছে, সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলছে।


তিনি বলেন, জনগণের দ্বারা নির্বাচিত হওয়ার পর সরকারের দায়িত্ব থাকে মানুষের কল্যাণে কাজ করা। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই লক্ষ্যে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করছেন।


হানিফ বলেন, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি সরকার গঠনের মধ্য দিয়ে আমাদের যাত্রা শুরু হল। ২০০৮ সালের এক বছর আগে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। তারা দেশের মানুষের জন্য কী রেখে গিয়েছিল। আর আজকে তারা কথায় কথায় সরকারের বিরুদ্ধে বলে। কৃষকেরা সারের জন্য দোকানে দোকানে ঘুরে বেরিয়েছে, সার পায়নি। সার চড়া দামে কিনতে হয়েছে। বিদ্যুৎ না থাকায় সেচে পানি দিতে পারেনি। যার কারণে সঠিক সময়ে ফসল উৎপাদন না করতে পারায় আমাদের ৬০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি ছিল। আজকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর সারের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করেছেন। সার জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেছেন।


আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে দেশে মাত্র তিন হাজার ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল। দেশের শতকরা ২৭ থেকে ২৮ ভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ ছিল। তাও দিনে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকত না। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা হয়েছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ২০২৫ সালের দিকে উৎপাদন শুরু হলে তখন আমাদের সক্ষমতা হবে ৩০ হাজার মেগাওয়াট। বাংলাদেশে এখন প্রত্যেক ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে। এমনকি দুর্গম এলাকায় সাবমেরিনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা করা হয়েছে।


তারেক রহমান টেলিভিশনে সাক্ষাৎকারে বলেছিল বিদ্যুৎ বাসায় এবং অফিসে একসঙ্গে দেয়া যাবে না। দোকানে, অফিসে ও বাসায় একসঙ্গে বিদ্যুৎ দেয়া সম্ভব নয়। কোনো সরকার পারবে না। যে অপদার্থ বলেছিল কেউ পারবে না তারা দেখে যাক আজ বাংলাদেশের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ আছে এবং সেটা শেখ হাসিনার সরকার দিতে পেরেছে, বলেন তিনি।


আওয়ামী লীগ সরকার ৯ লাখ গৃহহীনকে ঘর দিয়েছে উল্লেখ করে হানিফ বলেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী টানেল তৈরি করা হয়েছে। ঢাকায় মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস হয়েছে। সারা দেশের রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয়েছে। গ্রামের রাস্তাঘাট পাকা করে দেয়া হয়েছে। এত ব্যাপক উন্নয়নের পরও উন্নয়ন তাদের চোখে পড়ে না।


তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু আয় সাড়ে ৫শ' ডলারের নিচে ছিল। পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে দরিদ্রতম দেশ ছিল বাংলাদেশ। আজ আমাদের মাথাপিছু আয় প্রায় ২৯শ' ডলারের কাছাকাছি। এখন আমরা আন্তর্জাতিক মহলে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পেয়েছি। পৃথিবীর অর্থনীতিবিদরা বলছেন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত থাকলে ২০৩১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে।


সরকার মামলা দিয়ে বিএনপি নেতাদের হয়রানি করছে- বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে হানিফ বলেন, আজকে বিএনপি নেতারা মানবতার কথা বলেন। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগের ২৬ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছিল। আজকে মির্জা ফখরুল বলেন তাদের নেতাকর্মীর নামে মামলা হয়েছে। কীসের মামলা হয়েছে? ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিএনপির সন্ত্রাসীরা পেট্রোল দিয়ে গাড়িতে আগুন দিয়ে বাস, ট্রেন পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করেছে। সাড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষকে পেট্রোল বোমা দিয়ে পোড়ানো হয়েছিল। সাড়ে ৩০০ থেকে ৪০০ মানুষ মারা গিয়েছিল। এই নিষ্ঠুর পৈশাচিকতার বিরুদ্ধে মামলা হবে না। মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করলেন, এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে না? স্বজনহারা ব্যক্তিরা মামলা করেছে। সে মামলায় তারা আসামি হয়েছে আর তারা এখন বলছে এসব মামলার মাধ্যমে হয়রানি করা হচ্ছে।



জামায়াতে ইসলামীর মহিলা কর্মীদের ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, জামায়াতে ইসলামী ধর্মের নামে রাজনীতি করছে। জামায়াত যারা করে তারা ইসলামের শত্রু। এরা ইসলামের ভালো চাইতে পারে না। ইসলাম হলো শান্তির ধর্ম। এই জামায়াত ইসলামকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে এই দেশকে অশান্ত করেছে। তারা ধর্মকে নিয়ে মিথ্যাচার করছে। জামায়াতের মহিলা কর্মীরা তালিম করে বেড়াচ্ছে। তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এরা কখনো ইমানদার হতে পারে না।


মতবিনিময় সভা ও কর্মী সভায় কুষ্টিয়া সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান আতা ছাড়াও স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।


বিবার্তা/সোহেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com