'বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আত্মার, রক্তের ও ভ্রাতৃত্বের, কখনোই ছিন্ন হওয়ার নয়'
প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২৩, ০০:১৯
'বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আত্মার, রক্তের ও ভ্রাতৃত্বের, কখনোই ছিন্ন হওয়ার নয়'
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক আত্মার, রক্তের ও ভ্রাতৃত্বের। এই সম্পর্ক কখনোই ছিন্ন হওয়ার নয়, বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ।


২৮ আগস্ট, রবিবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ও বাংলাদেশের জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে কলকাতার রোটারি সদনের অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন হানিফ।


প্রধান অতিথির বক্তৃতায় হানিফ বলেন, ১৯৪৭ সালে ভারত যখন দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভাগ হলো, তখন ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্র গঠন হলো। পরে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নামক আরেকটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়।


তিনি বলেন, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপ্ন দেখেছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সব ধর্ম, বর্ণের মানুষের দেশ গঠনের। সেই লক্ষ্যেই আমরা বাংলাদেশের মানুষ কাজ করে যাচ্ছি। এই লক্ষ্যেই বঙ্গবন্ধু সারা জীবন লড়াই করেছেন, সংগ্রাম করেছেন। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যাতে এই আত্মিক সম্পর্ক আরও বৃদ্ধি পায়।


বিএনপি-জামায়াতসহ দেশের যুদ্ধাপরাধী শক্তি সম্পর্কে তিনি বলেন, ৭১-এর যুদ্ধে পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। তাদের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তানের অধীনে নিয়ে যাওয়া।


হানিফ বলেন, জিয়াউর রহমান আসলে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না, তিনি ছিলেন ছদ্মবেশী মুক্তিযোদ্ধা। তার কিছু কর্মকাণ্ডের কারণে প্রমাণিত হয়-বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন।


তিনি আরো বলেন, ৭১’ সালে সংখ্যালঘু মানুষের ওপর অত্যাচারের ঘটনায় যারা জড়িত ছিলেন, তারা ফের নাশকতা করার চেষ্টা করছে। আমাদের সরকারও তা দমন করার চেষ্টা করছে। একাত্তরের যুদ্ধে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যে সম্পর্ক ছিল সেই সম্পর্কের উপরও আঘাত হানার চেষ্টা হয়; কিন্তু শেখ হাসিনা সরকার আসার পর সেই সম্পর্কে ফের অগ্রগতি আসে।


দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে হানিফ বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের প্রতি তার যে আন্তরিকতা বিশেষ করে, শেখ হাসিনার প্রতি তার যে মানসিকতা, আন্তরিকতা এটা আমাদের জাতিকে কৃতজ্ঞভাবে আবদ্ধ করেছে। আমরা চাই ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্কের মধ্য দিয়ে দুই দেশ এগিয়ে যাক। আমরা চাই দুই দেশের রক্তের বন্ধন আরও সুদৃঢ় হোক। আমরা উভয় দেশ একে অপরের পরিপূরক। আমরা চাই সেই রক্তের সম্পর্ক অটুট থাকুক। কারণ, দুই দেশেই আমাদের অনেক আত্মীয়-স্বজন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তাই সেই সম্পর্ক কখনোই ছিন্ন হওয়ার নয়।’


কয়েকদিন আগেই চাঁদে চন্দ্রযান-৩ এর সফল অবতরণ নিয়ে ভারতের প্রশংসা করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘এটা এই উপমহাদেশের কাছে খুবই গৌরবের বিষয়। ভারতের বিজ্ঞানীরা তাদের দক্ষতা দেখিয়ে দিয়েছে। এখানে নরেন্দ্র মোদিরও গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে। তিনি যে দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় কতটা সহায়তা ও উজ্জীবিত করেন সেটা দেখলাম। দক্ষিণ আফ্রিকা সফর শেষ করে ভারতে নেমেই বেঙ্গালুরুতে ইসরোর সদর দপ্তরে গিয়েছেন, সেটাও পত্রিকায় পড়লাম।’ তার অভিমত ‘এরকম একজন দক্ষ আন্তরিক প্রধানমন্ত্রী থাকলে সেই দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি অবশ্যম্ভাবী। গোটা বিশ্বের মধ্যে ভারত একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে হচ্ছে। প্রতিবেশী দেশ যত বেশি শক্তিশালী হবে, বড় হবে, পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে তাদের সাথে আমরাও এগিয়ে যেতে পারবো।


রবিবার সন্ধ্যায় কলকাতার রোটারি সদনে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী সংঘ আয়োজিত এই স্মরণসভা অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক স্বপন মজুমদার, কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশ উপ দূতাবাসের উপ রাষ্ট্রদূত আন্দালিব ইলিয়াস, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম, ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী সংঘের সভাপতি শিশির বাজোরিয়া, বিশিষ্ট সমাজসেবী আবু নাসের প্রমুখ।



আন্দালিব ইলিয়াস বলেন, 'বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলে সোনার বাংলা। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়া। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেই লক্ষ্যেই এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। সেটা গড়তে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতেরও সহায়তা দরকার।


বিজেপি বিধায়ক স্বপন মজুমদার বলেন, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যা অত্যন্ত দুঃখের। ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান একসময় একসাথে ছিল। পরে সেটি ভাগ হয়। এরও পরে ভাষার ভিত্তিতে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। আর সেই ক্ষেত্রে সহায়তা করেছিলেন আমাদের দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। দুই দেশের সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে যায়। আমার আশা-এই সম্পর্ক যেন আরো সুদৃঢ় হয়।


বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় নঈম নিজাম বলেন, প্রথমে শিক্ষাজীবন, পরে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি শুরু হয়েছিল এই কলকাতা থেকে। মহাত্মা গান্ধীর সাথে বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৪৬ সালে যে দাঙ্গা হয়েছিল, সেখানেও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছিলেন।


তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্যই ছিল একটি উন্নত দেশ গড়ে তোলা। এই উপমহাদেশকে অসাম্প্রদায়িক দেখা। ৫১ বছর বয়সে তিনি জাতির পিতা হয়েছিলেন আর ৫৩ বছরেই চলে গেলেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা বাবার আদর্শকে সামনে রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।


শিশির বাজোরিয়া বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন একটি উন্নত দেশ হোক। সে লক্ষ্যেই বাংলাদেশ এগোচ্ছে। প্রতিবেশী দেশ হিসাবে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে বন্ধুত্ব আছে তা অটুট আছে। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত চায় কিভাবে বাংলাদেশ আরো অগ্রসর হতে পারে।'


আবু নাসের বলেন, বঙ্গবন্ধুকে চোখে দেখিনি। কিন্তু তার অস্তিত্ব এখনও অনুভব করি। বঙ্গবন্ধুর সম্পর্কে যতটুকু জেনেছি তাতে আমার কাছে এক আদর্শ মানুষ। তার মতে-যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা চায়নি তারাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সম্প্রীতির বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছেন। বাংলাদেশে ঈদ ও পূজা একসাথে পালন করি। সেখানে আজ দাঙ্গা হয় না, মন্দির ভাঙা হয় না। হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে কোনো বিভেদ হয় না।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com