পাকিস্তানের এজেন্ট জিয়ার প্রতিটি কর্মকাণ্ড ছিল স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী : হানিফ
প্রকাশ : ২৩ আগস্ট ২০২৩, ১৪:২২
পাকিস্তানের এজেন্ট জিয়ার প্রতিটি কর্মকাণ্ড ছিল স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী : হানিফ
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বলেছেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের প্রতিটি কর্মকাণ্ড ছিল এই দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী। তিনি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধার ছদ্মবেশী পাকিস্তানের এজেন্ট। সেটা ইতিহাসে প্রমাণিত। আর সে এই এজেন্ট থাকায় রাজাকারদের পক্ষে ছিল। কাজেই জিয়াকে খুনি বলতে কেন কুণ্ঠাবোধ হয়?


আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, যতদিন জিয়ার মতো খুনি কুশীলবের মুখোশ জাতির কাছে উন্মোচিত না হবে, ততদিন এই দেশের বিভাজন দূর হবে না। আর এক্ষেত্রে আমরা আগেও বলেছি, আর এখনও বলছি, বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘটনায় তদন্ত কমিশন গঠন করা হোক। তার মাধ্যমে জিয়ার মতো পেছনের কালপ্রিটদের জাতি চিনুক।



বুধবার, ২৩ আগস্ট দুপুরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়াম আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ৪৮তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস ২০২৩ উপলক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর রক্তের ঋণ : স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বঙ্গবন্ধুকন্যার অঙ্গীকার শীর্ষক এই সভার আয়োজন করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নীলদল।


তিনি বলেন, কর্নেল রশিদ, ফারুকরা একাধিক সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার আগে জিয়ার সাথে একাধিকবার বৈঠক করেছেন জানিয়েছেন। আর জিয়া যদি জড়িত না থাকত, তাহলে কেন তার জুনিয়রদের এই জঘন্য কাজের জন্য গ্রেফতার করল না? বরং উল্টো তাদেরকে উৎসাহ দিয়ে পরিকল্পনায় সহায়তা করেছে।


হানিফ বলেন, ১৯৭১ সালের ২৯ মে ঢাকা থেকে পাকিস্তানের বিগ্রেড কমান্ডার আসলাম বেগ, জিয়াকে একটা চিঠি লিখেছিল, যেটা এখন ইতিহাসের দলিল। জিয়াকে লেখা চিঠিতে আসলাম বেগ লিখেছিলেন, উই আর হ্যাপি উইথ ইউর জব। গো এহেড, উই উইল এ্যাসাইন মোর জব। এর মানে আমরা তোমার (জিয়া) কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট। জিয়া এমন কী কাজ করেছিলেন যে পাকিস্তানের ব্রিগেড কমাণ্ডার তার ওপর খুশি। ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের পরে পাকিস্তানিদের সাথে দেখা হলে গোলাগুলি ছাড়া আর কিছু হয়নি। সেই সময়ে এত বন্ধুত্ব থাকার তো কিছু নয়। তিনি কোন কোন কাজ করছিলেন? এতেই প্রমাণ হয় জিয়া ছিলেন পাকিস্তানের এজেন্ট।


তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের দায়িত্ব ছিল সিলেটে। আমি সিলেটে বহু জায়গায় জনসভা করেছি। সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভবাজার, সুনামগঞ্জে জনসভায় জিজ্ঞেস করেছি- জিয়া পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে জানা আছে কিনা, আমাকে জানাইয়েন। জিয়া যুদ্ধ করেছে আমি ইতিহাসে এমন তথ্য পাইনি। আজ পর্যন্ত কেউ জানাতে পারেনি। তাহলে জিয়া যুদ্ধের সময় কী করেছিলেন- প্রশ্ন রাখেন তিনি।


আওয়ামী লীগের এই সিনিয়র নেতা বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সময় ডেপুটি চিফ অব স্টাফ ছিলেন জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আত্মস্বীকৃত খুনিদের গ্রেফতার করে তাদের বিচারের আওতায় না এনে বরং তাদেরকে পুরস্কৃত করেছিলেন। জিয়া বঙ্গবন্ধু হত্যায় জড়িত ছিলেন এটাই তার বড় প্রমাণ। আর না হলে খুনিদের বিচার না করে কেন দূতাবাসে নিয়োগ দিবে, প্রমোশন পুর্নবাসন করবে।



জিয়া বাংলাদেশকে পাকিস্তানের অঙ্গরাজ্য বানানোর চেষ্টা করেছিলেন এমন অভিযোগ করে হানিফ বলেন, জিয়া ক্ষমতা দখল করে সরকার গঠন করলেন কাদের নিয়ে? পাকিস্তানের আদর্শের জন্য যারা লড়াই করেছে তাদের দিয়ে মন্ত্রিসভা করলেন। রাজাকার শাহ আজিজুর রহমানকে করলেন প্রধানমন্ত্রী, কুখ্যাত রাজাকার আব্দুল আলিমকে বানালেন মন্ত্রী। যারা একাত্তরে গণহত্যা জড়িত ছিল এরকম সাড়ে ১১ হাজার রাজাকার আলবদরদের দালাল আইন বাতিল করে মুক্ত করে দিলেন।


কুখ্যাত রাজাকার গোলাম আজমকে নাগরিকত্ব দিলেন। আর যাদের কারণে মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষকে প্রাণ হারাতে হয়েছিল, মা-বোনদের পাকিস্তানিদের হাতে তুলে দিয়েছিল, আমাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছিল সেই জামায়াতকে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিলেন। এতে প্রমাণ হয় জিয়া বাংলাদেশকে পাকিস্তানের অঙ্গরাজ্য বানানোর চেষ্টা করেছেন, বলেন হানিফ।


তিনি বলেন, জয় বাংলা স্লোগান মুক্তিযুদ্ধে আমাদের শিহরণ, প্রেরণা জাগাত সেই স্লোগান নিষিদ্ধ করলেন, ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ নিষিদ্ধ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নামই নিষিদ্ধ করলেন। যে ব্যক্তি সারাজীবন বাঙালির স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই সংগ্রাম করলেন তার নাম মুছে দেয়া হলো৷ ৩০ লাখ শহিদের আত্মাকে পদদলিত করে পাকিস্তানি ভাবাদর্শের দেশ প্রতিষ্ঠা করলেন।


বিএনপির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আজকে দেশে জঙ্গি ধরা পড়লে বিএনপি নানা কথা বলছে। জঙ্গি ধরলে যেন বিএনপির গায়ে জ্বর আসে। এই জঙ্গি সৃষ্টিও করেছে তারা। এজন্য তাদের মায়া লাগে। তবে আমরাও স্পষ্ট করে বলতে চাই, বঙ্গবন্ধুর এই দেশে কোন জঙ্গিবাদের ঠাঁই নাই।


বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দেয়া-২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা আওয়ামী লীগের সাজানো নাটক ছিল, এমন মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন, ২১ আগস্ট ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের কলঙ্কময় দিবস। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বাংলাদেশে পৃথিবীর ইতিহাসে ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছিল। একটা শান্তিপূর্ণ সমাবেশে রাষ্ট্রীয় যন্ত্র ব্যবহার করে হামলা চালানো হয়। এই মির্জা ফখরুল নাকি শিক্ষকতা করেছেন। শিক্ষক পেশা সারা পৃথিবীর মধ্যে নোবেল প্রফেশন। একজন শিক্ষক কীভাবে এত নির্লজ্জ মিথ্যাচার করতে পারে। মির্জা ফখরুল বলেছেন ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সাজানো নাটক ছিল। মির্জা ফখরুল চরম মিথ্যাবাদী একজন মানুষ। এরকম মিথ্যাচার কেউ করতে পারে আমার জানা ছিল না।


উনি বললেন, আওয়ামী লীগের সমাবেশ হওয়ার কথা ছিল মুক্তাঙ্গনে। কী মিথ্যাচার! সেই সময়কার প্রত্যেকটা পোস্টারে লেখা ছিল আওয়ামী লীগের সমাবেশ হবে ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ। ২১ তারিখ সকালে পত্রিকায়ও ছাপা হয়েছে আওয়ামী লীগের সমাবেশ হবে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে। তাদের নেতা লম্পট, খুনি তারেক রহমান ভাবছে লন্ডনে বসে মিথ্যাচার করে জাতিকে বিভ্রান্ত করবে। দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। এগুলো রেকর্ড ডকুমেন্টেড। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এত বড় মিথ্যাবাদী আর কাউকে দেখিনি, বলেন তিনি।



দলের নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই সমস্ত অপশক্তিকে পরাজিত করে আমরা ক্ষমতায় এসেছি। সকল অশুভ শক্তিকে রাজপথে প্রতিহত করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো, আজকে এটাই হোক আমাদের শপথ, অঙ্গীকার।


আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমদ, মুখ্য আলোচক হিসেবে ছিলেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি


ফরিদা ইয়াসমিন, আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নীলদলের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. জাকারিয়া মিয়া, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আশরাফ-উল-আলম। সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মেফ্তাহুল হাসান, স্বাগত বক্তব্য দেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নীলদলের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. মমিন উদ্দিন,আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নীলদলের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. নূরে আলম আব্দুল্লাহ।


বিবার্তা/রাসেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com