‘সরকার পতনের অহিংস আন্দোলনে উস্কানি দিচ্ছে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ’
প্রকাশ : ১৯ জুলাই ২০২৩, ০০:২৬
‘সরকার পতনের অহিংস আন্দোলনে উস্কানি দিচ্ছে পুলিশ ও  আওয়ামী লীগ’
মোহাম্মদ ইলিয়াস
প্রিন্ট অ-অ+

সরকার পতনে বিরোধী দলগুলোর একদফা আন্দোলনে সরাদেশের ‘অহিংস আন্দোলনে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের উস্কানি’তে সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে দাবি করছেন বিরোধী দলগুলোর নেতারা। তারা বলেন, সারাদেশে মঙ্গলবারের শান্তিপূর্ণ পদযাত্রায় ১ জন নিহতসহ অনেক নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ ও আহত হয়েছেন।


১৮ জুলাই, মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকায় সরকার হটানোর 'একদফা’ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো। এরমধ্যে বিএনপি ঢাকাসহ প্রতিটি মহানগর ও জেলাতে কর্মসূচি পালন করেছে। বিএনপির দাবি আন্দোলনে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের বাঁধা ও হামলার ঘটনা ঘটেছে লক্ষ্মীপুর, ফেনী, বগুড়া, খাগড়াছড়ি, কিশোরগঞ্জ ও জয়পুরহাটসহ একাধিক জেলায়।


বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বিবার্তাকে বলেন, সরকার পতনের একদফা আন্দোলন পদযাত্রা দিয়ে শুরু হয়েছে। এ কর্মসূচিতে শুধু বিএনপি নেতা-কর্মীরাই নয়, দেশের সাধারণ জনগণও নেমে এসেছে। সাধারণ জনগণ বিএনপির ডাকে নয়, নিজ উদ্যোগেই কর্মসূচিতে সামিল হচ্ছেন।


তিনি বলেন, যে প্রক্রিয়ায় দাবি আদায় হবে, আমরা সেটাই অবলম্বন করব। আজ আমাদের আন্দোলন ছিল শান্তিপূর্ণ কিন্তু ‘আওয়ামী লীগ ও পুলিশের একটি অংশ উস্কানি দিয়ে আমাদের অশান্তির চেষ্টা করছে’। আমরা সহিংস আন্দোলনের পথে হাঁটছি না। সরকার যদি এ পথে হাঁটতে বাধ্য করে তাহলে এর দায়ভার তাদেরকে নিতে হবে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে এই সরকারের বিদায় চাই এবং নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই।


বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা বিবার্তাকে বলেন, আমাদের এক দফা হল শেখ হাসিনার পদত্যাগ। এর আগে আমরা দশ দফা দাবিতে কর্মসূচি পালন করেছি। আজকে এক দফা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ছিল পদযাত্রা। সেখানে ‘পুলিশ এবং ছাত্রলীগ যেভাবে বর্বর হামলা চালিয়ে প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এটা দুর্ভাগ্যজনক’। আমরা এক দফা আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার পতন নিশ্চিত করব।


লক্ষীপুরে বিএনপির শান্তি পদযাত্রায় কৃষকদল নেতা সজিব নিহত


বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর নেতৃত্বে মঙ্গলবার লক্ষীপুরে পদযাত্রা হয়। বিএনপির পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পদযাত্রা চলাকালে কৃষকদল নেতা সজিব হোসেনকে পিছন থেকে টেনে নিয়ে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন লক্ষ্মীপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মহসিন কবির সাগর ও সেবাব নেওয়াজ। এসময় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে অনেক নেতাকর্মী আহত হয়।


এদিকে রাজধানীতে গণতন্ত্র মঞ্চ, গণঅধিকার পরিষদ, ১২ দলীয় জোট, সমমনা জোটসহ একাধিক বিরোধী সংগঠন সরকারের পদত্যাগের দাবিতে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করেছে। গণতন্ত্র মঞ্চ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে তাদের চট্টগ্রামের পদযাত্রা কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ হামলা করেছে, এতে তাদের ২০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।


সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বিবার্তাকে বলেন, এতদিন দশ দফা দাবি আদায়ে কর্মসূচি পালন করলেও এখন এক দফা কর্মসূচি পালন করছি। আমরা এখনই শেখ হাসিনার পদত্যাগ দেখতে চাচ্ছি। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে চাই, সহিংস আন্দোলনে বিশ্বাসী নই। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে যদি কেউ বাধা দেয় সেটা আওয়ামী লীগ দেবে, এতে আওয়ামী লীগেরই পরাজয় হবে।


রাজধানী বাঙলা কলেজের সামনের বিএনপি ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ



মঙ্গলবার গাবতলী থেকে শুরু হওয়া বিএনপির পদযাত্রা রাজধানী বাঙলা কলেজের সামনে পৌঁছালে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনা ঘটে। যদিও পরে হামলায় বিএনপি ও ছাত্রলীগ উভয়ই জড়িয়ে যায়। এ ঘটনার পরও বিএনপির পদযাত্রা থামেনি। সংঘর্ষ উপেক্ষা করে পদযাত্রাটি সামনে এগিয়ে যায়। বিএনপির নেতাকর্মীরা এদিন বেলা ১১টা ২০ মিনিটে রাজধানী গাবতলী থেকে ঢাকা মহানগর বিএনপির উদ্যোগে এ পদযাত্রা শুরু করে।



পদযাত্রাটি সরকারি বাঙলা কলেজের সামনে পৌঁছালে ভেতর থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছোড়া হয়। তখন পদযাত্রা থেকে বিএনপির কিছু নেতাকর্মী কলেজ গেটে ভাঙচুর করেন। এ সময় তারা সেখানে থাকা একটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেন।


গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বিবার্তাকে বলেন, সরকারের পদত্যাগ, সুষ্ঠু নির্বাচন, রাষ্ট্রের নতুন বন্দোবস্তু এসব পরস্পর সম্পর্কিত বিষয়। নতুন বাংলাদেশ গঠনের সংগ্রামে নেমে পড়েছি। জনগণের বিজয় না হওয়া পর্যন্ত ধারাবাহিক ভাবে এই আন্দোলন চলবে।


তিনি বলেন, সরকার প্রতি মুহূর্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে উস্কানি দিয়ে সহিংসতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সরকার সহিংসতা সৃষ্টি করে, তারা সহিংসতা দমনের ষড়যন্ত্র করছে। জনগণ এসমস্ত ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আন্দোলনকে বিজয় করবে।


এছাড়া বিএনপির বিভিন্ন জেলায় পদযাত্রায় হামলা



এদিকে বিএনপির ফেনীতে পদযাত্রা চলাকালে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিবর্ষণ করে প্রায় দেড় শতাধিক নেতাকর্মীকে আহত করে বলে জানিয়েছেন বিএনপি। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, দাগনভূঞা উপজেলার যুবদল নেতা আব্দুর রহিম মূমূর্ষ অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।



এছাড়া খাগড়াছড়িতে বিএনপির পদযাত্রায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী গুলিবর্ষণ করলে অনেক নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়। পুলিশ এসময় ৫০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে। একইসঙ্গে বগুড়ায় একই দাবিতে বিএনপির আন্দোলনে পুলিশ গুলি চালিয়ে প্রায় দেড়শতাধিক নেতাকর্মীকে আহত করে।


বিএনপি সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বিবার্তাকে বলেন, বিএনপির এক দফা কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে লক্ষ্মীপুর, ফেনী, বগুড়া এবং কিশোরগঞ্জে। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুরে একজন নিহত হয়েছে। এছাড়া সারাদেশে হামলার ঘটনায় প্রায় দুই হাজার নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে জানান তিনি।


লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) এর মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বিবার্তাকে বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচি করছি, কিন্তু তারা (সরকার) পায়ে পাড়া দিয়ে বাধা সৃষ্টি করছে। তারা শান্তি সমাবেশের নামে অশান্তি সৃষ্টি করছে। আমরা সকল কিছু বিবেচনা করে এক দফা আন্দোলন ঘোষণা করেছি। সরকারের কোথায় যাওয়ার জায়গা নেই, তাই শেষ সময়ে এসে মরণকামড় দেবেই।


বিবার্তা/এমই/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com